দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্র রাজধানী, হরতাল, প্রাণহানি

0
90
পুলিশর অবস্থান, ছবি: ফোকাস বাংলা

রাজধানীতে শনিবারের আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দলের সমাবেশ ঘিরে দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। রক্তাক্ত হয়েছে রাজপথ। প্রাণহানি হয়েছে পুলিশসহ দুইজনের। দীর্ঘদিন পর এসেছে হরতালের ডাক। সবমিলে জাতীয় নির্বাচনের আগে শুরু হয়েছে সহিংস রাজনীতি।

যেভাবে ঘটনার শুরু

মহাসমাবেশ সামনে রেখে বিএনপি নেতাকর্মীরা শুক্রবার রাত থেকে নয়াপল্টনে অবস্থান করতে থাকেন। শনিবার সকালে কাকরাইল, বিজয়নগর মোড়সহ আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন দলটির নেতাকর্মীরা। দুপুর ১২টা পর্যন্ত সবকিছু শান্তিপূর্ণভাবেই চলছিল। সোয়া ১২টার দিকে সরকারদলীয় সমর্থকরা কয়েকটি পিকআপ ভ্যানে ও একটি বাসে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনের সড়ক পার হচ্ছিলেন। ওই সড়কে আগে থেকে জড়ো হওয়া বিএনপির নেতাকর্মীরা সরকার সমর্থকদের ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।

হঠাৎ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর গাড়িতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এরপরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সরকার দলীয় এক কর্মীকে সেখানে মারধর করা হয়। পুলিশ এসে উভয়পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করে। ১টার দিকে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে কাকরাইল মসজিদের সামনের সড়কে। বিক্ষুব্ধ বিএনপির সমর্থকরা সেখানে একটি পুলিশ বক্সে আগুন দেয়।

কাকরাইল মোড়ে বিজিবির অবস্থান

বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে পুলিশের সঙ্গে যুক্ত হন বিজিবি সদস্যরা। শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদানেগ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। বিজিবি সদস্যরা কাকরাইল মসজিদের সামনে অবস্থান নেয়।

শনিবার সকাল থেকে নেতাকর্মীদের সংখ্যা বাড়তে থাকলে তা কাকরাইল মোড় ছাড়িয়ে বিচারপতির বাসভবনের সামনের মোড়েও চলে আসে। পরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়।

দায়িত্ব পালনকালে হামলা, আহত ২১ সাংবাদিক

বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের তথ্য ও ছবি সংগ্রহ করতে গিয়ে শনিবার রাজধানীতে ২১ সাংবাদিক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের ওপর পেশাগত পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরও আক্রমণের অভিযোগ উঠেছে।

সাংবাদিকদের সঙ্গে থাকা ক্যামেরা ভাঙচুর, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া এবং তাদের বহন করা গাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়াও পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল ছোড়ায় আহত হন কয়েকজন সাংবাদিক। শনিবার দিনভর কাকরাইল, বিজয়নগর, পল্টন ও দৈনিক বাংলা মোড় এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়।

সংঘর্ষে আহত ৪১ পুলিশ সদস্য

বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হয়ে ৪১ জন পুলিশ সদস্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন এ তথ্য গণমাধ্যমকে জানান।

তিনি জানান, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ২২ জন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ১৯ জন আহত পুলিশ সদস্য চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সারাদিন নয়াপল্টনে ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পক্ষ থেকে রাজধানীর নয়াপল্টনে আজ শনিবার (২৮ অক্টোবর) সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত টেলিকম অপারেটরকে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একাধিক অপারেটরের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

তবে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) সভাপতি এমদাদুল হক জানিয়েছেন, তাদের কোথাও ইন্টারনেট বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

সংঘর্ষে যুবদল নেতা নিহত

পুলিশের গুলিতে শামীম মোল্লা নামে যুবদল নেতা নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের সময় শামীম গুলিবিদ্ধ হন।

নিহত শামীম মোল্লা মুগদা থানা যুবদলের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের এক নম্বর ইউনিটের সভাপতি। তার বাবার নাম ইউসুফ মোল্লা।

রাজধানীর সংঘর্ষে আহত হলে তাকে রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে সন্ধ্যার দিকে শামীম মোল্লা মারা যান বলে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব লিটন মাহমুদ।

সংঘর্ষে নিহত পুলিশ কনস্টেবল

রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশ চলাকালে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে দৈনিক বাংলার মোড় এলাকায় এক পুলিশ কনস্টেবল নিহত হয়েছেন।

শনিবার বিকেল ৪টার পর গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আমিরুল ইসলাম পারভেজ নামের ওই পুলিশ কনস্টেবলের বাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে। তিনি দৈনিক বাংলা মোড়ে দায়িত্বরত ছিলেন বলে ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান।

সারা দেশে বিএনপির সকাল-সন্ধ্যা হরতাল

বিএনপি আগামীকাল রোববার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে। দলটি আজ শনিবার দ্বিতীয় দফায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ হরতালের কথা জানায়। দলটির মিডিয়া সেলের প্রধান জহিরউদ্দিন স্বপন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। প্রথমবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ঢাকায় সকাল–সন্ধ্যা হরতালের কথা জানানো হয়েছিল।

এর আগে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়াপল্টনের মহাসমাবেশ থেকে ঢাকায় সকাল–সন্ধ্যা হরতালের এ ঘোষণা দিয়েছিলেন। পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ায় সমাবেশ পণ্ড হওয়ার আগমুহূর্তে তিনি ওই ঘোষণা দিয়েছিলেন।

বিএনপির পর হরতাল ডাকল জামায়াতও

রাজধানীর আরামবাগে শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ করার সুযোগ পাওয়া জামায়াতে ইসলামীও আগামীকাল রোববার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় বিবৃতিতে এই কর্মসূটি ঘোষণা করেন দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাছুম। মহাসমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে জামায়াত হরতাল ডেকেছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.