‘বাংলাদেশের ভূমিকম্প ঝুঁকি প্রশমন ও প্রস্তুতি’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ৮.৩ থেকে ৮.৬ মাত্রার ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে।’ মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগ গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান।
অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, ‘দেশের ভূমিকম্প ঝুঁকি প্রশমনে শিক্ষক, গবেষক, নীতিনির্ধারক, গণমাধ্যমকর্মী এবং সরকারি-বেসরকারি সংস্থার পেশাজীবীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই। ৮.৩ থেকে ৮.৬ মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। ভূমিকম্পের সম্ভাব্য ঝুঁকি প্রশমনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি।’ তিনি ভবন নির্মাণে যথাযথভাবে ভবন কোড অনুসরণ করার পাশাপাশি ভূমিকম্পের ব্যাপারে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
আলোচনায় বক্তারা বাংলাদেশের অতিদ্রুত ইন্টারন্যাশনাল সার্চ এন্ড রেসকিউ এডভাইসারি গ্রুপের সদস্যপদ প্রাপ্তি উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তারা সুপারিশ করেন, বিএনবিসি ২০২১ বিধিমালা মোতাবেক ভবন নির্মাণ সুনিশ্চিত এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য বিল্ডিং কোড রেগুলেটরি অথোরিটি গঠন করা জরুরি। সরকার কর্তৃক অনুমোদিত পেশাদার প্রতিষ্ঠান হতে সনদপ্রাপ্ত প্রকৌশলী, স্থপতি, ভূতত্ত্ববিদ, নগর পরিকল্পকদের সম্মিলিত তত্ত্বাবধানে নতুন ভবনের নকশা ও স্থাপনা সুনিশ্চিতকরণে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
তারা আরও বলেন, বর্তমান ভবন কোডের তথ্য-উপাত্ত প্রায় ১৪ বছরের অধিক পুরাতন। তথ্যসমূহ হালনাগাদ করে আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে আরো সুরক্ষিত বিল্ডিং কোড সংস্করণের জন্য একটি স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রস্তাবনা প্রদান করা হয়। তথ্য-উপাত্ত হালনাগাদের ক্ষেত্রে ভুকম্পনের সম্ভাব্য উৎপত্তিস্থল, উৎপত্তিস্থল থেকে আক্রান্ত এলাকায় আসার পথে ভূতরঙ্গের পরিবর্তন এবং সম্ভাব্য আক্রান্ত এলাকার ভূবৈশিষ্ট্য নিরূপণে জোর দেন তারা।
ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় রোলমডেল। তিনি করোনার সময় পৃথিবীকে দেখিয়ে দিয়েছেন, কীভাবে করোনা মোকাবিলা করতে হয়। আমরা এখন যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলা করার সক্ষমতা রাখি। গৃহ নির্মাণের ক্ষেত্রে ভূমিকম্পের বিষয় মাথায় রেখে প্রকৌশলীদের পরামর্শ মেনে নিয়ে ভূমিকম্প সহনশীলতার প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মেধা, মনন ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাসহ সব ক্ষেত্রে দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন এনামুর রহমান।
গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন মো. জিল্লুর রহমান, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নাইম মো. শহিদউল্লাহ প্রমুখ।