ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের ফয়লা গ্রামের শহিদুল ইসলাম। সংসারের অনটনের কারণে ঈশ্বরবা গ্রামের আনোয়ার হোসেনকে দুটি খালি চেক দিয়ে সুদে ৮০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। এ টাকার বিপরীতে সাড়ে ৫ লাখ টাকা দিয়েছেন তিনি। তবে চেকে ৫ ও ৩ লাখ অঙ্ক লিখে ৮ লাখ টাকা পাবেন দাবি করে তাঁর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছেন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ঈশ্বরবা গ্রাম থেকে আরেক ভুক্তভোগীর মামলায় আনোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ভুক্তভোগী শহিদুল ইসলাম জানান, সুদে কারবারিরা টাকা দেওয়ার সময় স্ট্যাম্পে লিখে রাখে, সাক্ষীরও সইও থাকে। এটিকে পুঁজি করে আইনি সহযোগিতা নেন তাঁরা। এরপর শেষ সম্বল বিক্রি করে হলেও ভুক্তভোগীদের টাকা পরিশোধ করতে হয়। টাকা লেনদেনের সময় লিখিত রেখে সেটিকে কাজে লাগান কারবারিরা। লিখিত থাকায় ভুক্তভোগীরা সুদখোরদের জালে আটকে যান। ফলে সারা জীবনেও টাকা শোধ হয় না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রভাবশালী সুদের মহাজনদের চাহিদামতো টাকা শোধ করতে না পেরে অনেকে ঘর ছেড়েছেন। ব্যবসা, মাঠের জমিসহ ভিটেবাড়ি হারিয়ে অনেকে এখন সম্বলহীন। আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছেন অনেকে। এমন অবস্থা উপজেলার গ্রামে গ্রামে। কালীগঞ্জে এমন সুদে কারবারের দৌরাত্ম্য বাড়ায় তৎপর হয়ে উঠেছে পুলিশ। এতে সুদের মহাজনদের মধ্যে কিছুটা হলেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অনেকে গা ঢাকা দিয়েছেন।
ইতোমধ্যে উপজেলায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। সুদের মহাজনদের বিরুদ্ধে প্রায়ই অভিযান চালানো হচ্ছে। পুলিশ বলছে, অনৈতিকভাবে অর্থ লেনদেনকারীরা কেউ রেহাই পাবে না।
অবৈধভাবে সুদে কারবার চালানোর অভিযোগে উপজেলার জামাল ইউনিয়নের বড় তালিয়ান গ্রাম থেকে ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকাসহ শরিফুল ইসলাম ও রেজাউল ইসলাম নামে সহোদরকে আটক করে পুলিশ। তাঁরা ওই গ্রামের মৃত আব্দুল বারীর ছেলে। তাঁদের কাছ থেকে টাকা দেওয়ার স্ট্যাম্প ও সুদে কারবারির কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
কামালহাট গ্রামের কৃষক ইব্রাহিম খলিল জানান, পরিবারের কেউ দীর্ঘমেয়াদি গুরুতর অসুস্থ হলে, ফসলের আবাদ নষ্ট হলে, ছেলেমেয়েদের বিয়ে ও লেখাপড়ার খরচ দিতে জরুরি টাকার প্রয়োজন হয়। এ সময় জটিল শর্তে হলেও তাৎক্ষণিকভাবে অভাবী কৃষক পরিবার টাকা নিতে বাধ্য হচ্ছে। পরে সুদের জালে আটকে সহায়-সম্বল হারাতে হয়। অনেকে সুদের মহাজনদের খপ্পরে পড়ে ভিটেবাড়ি পর্যন্ত হয় বিক্রি করেন বা তাঁদের নামে লিখে দেন।
ইব্রাহিম খলিল জানান, তিনি জামাল ইউনিয়নের বড় ডাউটি গ্রামের মিটুলের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে ১০ গুণের বেশি পরিশোধ করেছেন। কিন্তু এখনও মুক্তি পাননি। বিষয়টি নিয়ে তিনি কালীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এরপর থেকে আত্মগোপনে আছেন মিটুল। এ কারণে চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহিম মোল্লা বলেন, বিভিন্ন স্থান থেকে সুদের কারবারিদের অত্যাচার-নির্যাতনের অভিযোগ আসছে। ভুক্তভোগী এক ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে আটক অভিযান অব্যাহত আছে। আটকের সময় তাঁদের কাছ থেকে টাকা ঋণ দেওয়ার দলিল উদ্ধার করা হচ্ছে। উপজেলা সুদমুক্ত করা চেষ্টা করছে পুলিশ।