খুব অল্প সময়ের আয়োজনে মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের মুকুট ওঠে শাম্মি ইসলাম নীলার মাথায়। সে সময় নীলার উচ্চতা আর ‘টিকটকার’ পরিচয় নিয়ে কিছু মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতিবাচক মন্তব্য করতেও ছাড়েনি। তবে সেসব পেছনে ফেলে নীলা ঠিকই ভারতে চলমান ৭১তম মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় নিজেকে মেলে ধরছেন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। পাঁচ নারী ডিজাইনারের নকশা করা বিশেষায়িত পোশাক ছাড়াও তিন সপ্তাহের জন্য প্রায় ৬০টি পোশাক সঙ্গে নিয়েছেন নীলা। মার্চের ৯ তারিখে জানা যাবে, কে হাসলেন শেষ হাসি, কার মাথায় উঠল ২০২৩ সালের বিশ্বসুন্দরীর মুকুট। তার আগে জেনে নিই, বাংলাদেশের কোন পাঁচ ডিজাইনারের নকশা করা পোশাক সঙ্গে নিয়েছেন নীলা।
১. বিবি রাসেল (বিবিয়ানা)
বাংলাদেশ থেকে যে ডিজাইনাররা আন্তর্জাতিক খ্যাতি পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে একজন বিবি রাসেল। তাঁর সঙ্গে নীলার কীভাবে পরিচয় হলো? জানতে চাইলে বিবি বলেন, ‘ও আমাকে ফোন করে সুন্দর করে কথা বলল। আমার সঙ্গে দেখা করতে এল। দেখলাম, একেবারেই সাদামাটা, মিষ্টি, বিনয়ী একটা মেয়ে। ওর কথায় মুগ্ধ হয়ে রাজি হয়ে গেলাম।’
নীলার জন্য বিবি রাসেল বিশেষভাবে টাঙ্গাইলের গামছা জোড়া দিয়ে দিয়ে পাড়ে কুচি দিয়ে একটি শাড়ি বানিয়েছেন। শাড়িটার জন্য বিশেষ ব্লাউজও বানিয়েছেন। বানিয়েছেন কয়েকটা টপ আর স্কার্ট। এ ছাড়া বিবি প্রোডাকশন থেকে নীলাকে বেশ কিছু গয়না আর ব্যাগও দিয়েছেন দেশের গুণী এই ফ্যাশন ডিজাইনার।
২. সামিনা সারা (মেহের)
নীলা সাত বছর ধরে কাজ করছেন দেশের ফ্যাশন খাতে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের হয়ে কাজ করেছেন। সেই সুবাদেই বছর পাঁচেক আগে পরিচয় হয় বাংলাদেশের নামী ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘মেহের’–এর স্বত্বাধিকারী সামিনা সারার সঙ্গে।
সারা বলেন, ‘আমি যখন জানলাম যে নীলার মাথায় মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের মুকুট উঠেছে, নিজেই ওর সঙ্গে যোগাযোগ করি। ওর গায়ের মাপ নিই। একটা ফটোশুট করি। ওর জন্য এক্সক্লুসিভলি বেশ কয়েকটা পোশাক বানিয়েছি। আরও কয়েকটা পোশাক আমি আর নীলা মিলে মেহের থেকে পছন্দ করে দিয়েছি।’ শুধু পোশাকই নয়, কেমন মেকআপ আর গয়না নীলা বেছে নিতে পারেন, সে বিষয়েও ধারণা দিয়েছেন সারা।
৩. আসমা সুলতানা (জোয়ানঅ্যাশ)
অভিজাত ফ্যাশন ব্র্যান্ড জোয়ানঅ্যাশের পরিচালক ও প্রধান ফ্যাশন ডিজাইনার আসমা সুলতানার সঙ্গেও যোগাযোগ করেন নীলা।
জোয়ানঅ্যাশের কারখানা থেকে যেদিন তিনি পোশাক সংগ্রহ করেন, আসমা সুলতানা তখন ছিলেন দুবাইয়ে। তবে ভিডিও কলে নীলার সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। পোশাকে কোথায় কী ঠিকঠাক করতে হবে, সে নির্দেশনাও দিয়ে দেন। আসমার নির্দেশনার ভিত্তিতে আবার নতুন করে কাজ করা হয়েছে। নীলা এখান থেকে দুটি টিউব ড্রেস, একটি কোট-টপ আর আর একটা ফেদার অ্যান্ড ফ্রস্ট কালেকশনের প্যান্ট-শ্রাগ নিয়েছেন।
৪. কুহু প্লামন্দন (কুহু’স)
দেশের একটি বিউটি পারলারে হঠাৎ করেই অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধনের সঙ্গে নীলার দেখা হয়ে গিয়েছিল। দুজনের আলাপের এক পর্যায়েই কুহু প্লামন্দনের পোশাক নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন বাঁধন। সঙ্গে সঙ্গে কুহুকে ফোন করে কথাও বলেন তিনি। এভাবেই চিত্রশিল্পী ও ফ্যাশন ডিজাইনার কুহুর সঙ্গে নীলার যোগাযোগ।
কুহু প্লামন্দনের কাছ থেকে নীলা একটি শাড়ি, সঙ্গে ডিজাইনারস ব্লাউজ আর একটা মসলিনের গাউন নিয়েছেন। বাংলা সিনেমার রিকশা পেইন্ট থিমের পোস্টার থেকে অনুপ্রাণিত একটা বটুয়া ব্যাগও নিয়েছেন তিনি।
৫. চন্দনা দেওয়ান (চন্দন)
কুহু প্লামন্দন আবার নীলাকে চন্দনা দেওয়ানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। আর চন্দনার ফ্যাশন হাউস চন্দন থেকে ঢাকা শহরের যানজটের থিমে করা একটা স্কার্ফ নিতে বলেন।
স্কার্ফটি সংগ্রহ করতে গিয়ে নীলা চন্দনার কাছ থেকে কাঁঠালপাতা থিমের শাড়ি, ব্লাউজ, খাদি কালেকশনের কয়েকটা পোশাক, থ্রি–পিস, গয়না—এ রকম নানা কিছু সংগ্রহ করেন। কয়েকটা আবার নীলার শরীরের মাপে বিশেষভাবে বানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নীলা জানান, নারীর অগ্রযাত্রায় অন্য নারীর পাশে থাকার কোনো বিকল্প নেই। তিনি ভাগ্যবান যে দেশের মেধাবী ফ্যাশন ডিজাইনারদের পাশে পেয়েছেন। এমন নয় যে নীলা কেবল নারীদের সঙ্গেই যোগাযোগ করেছেন। বরং এই নারী ফ্যাশন ডিজাইনাররাই মিস ওয়ার্ল্ডের আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন। আর জানিয়েছেন আন্তরিক শুভকামনা।