৫৩৮টি থানার কার্যক্রম শুরু

0
50
পুরান ঢাকার সূত্রাপুর থানায় কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন এক কর্মকর্তা। গতকাল দুপুরে
আরও ১৭৭ থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৬৩৯টি থানার মধ্যে গতকাল শনিবার বেলা তিনটা পর্যন্ত ৫৩৮টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন মেট্রোপলিটন (মহানগর) এলাকার ১১০টি থানার মধ্যে ৮৪টি এবং জেলা পর্যায়ে ৫২৯টি থানার মধ্যে ৪৫৪টির কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
 
পুলিশ সূত্র বলছে, সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও মামলা ছাড়া থানার অন্য কোনো কার্যক্রম এখনো শুরু করা যায়নি। পুরোদমে থানা চালু করতে আরও সময় লাগবে।
 
এর আগে গত শুক্রবার পর্যন্ত সারা দেশে ৩৬১টি থানায় পুলিশি কার্যক্রম শুরু হয়। এসব থানার নিরাপত্তায় সেনাসদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
 
গতকাল বিকেল পর্যন্ত ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আরও ১৬ থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর আগে শুক্রবার পর্যন্ত ডিএমপির ২৯ থানার কার্যক্রম চলছিল। সব মিলিয়ে ডিএমপির ৫০টি থানার মধ্যে ৪৫ থানার কার্যক্রম চালু হলো।
 
ডিএমপি সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বাকি পাঁচটি থানার স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এসব থানা রোববার (আজ) চালু করা হবে। এ পাঁচটি থানা হলো খিলক্ষেত, উত্তরা পূর্ব, পল্টন, যাত্রাবাড়ী ও কদমতলী।
 
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৫ আগস্ট বিকেল থেকে রাজধানীর অনেক থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় থানা-পুলিশের কাজে ব্যবহৃত গাড়ি। অনেক জায়গায় অস্ত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ও নথি লুট হয়।
 
থানায় পুলিশের কাজে ফেরার বিষয়ে কক্সবাজার জেলা পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ভয় কাটিয়ে অনেকেই থানায় যোগ দিয়েছেন। যাঁরা কাজে যোগ দিয়েছেন, তাঁরা থানায় বসে কাজ শুরু করেছেন। তবে মামলা ও জিডির বাইরে আপাতত অন্য কাজ হচ্ছে না। বাইরে অভিযান পরিচালনা করতে আরও সময় লাগবে।
 
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিকে কেন্দ্র করে গত ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও প্রাণহানি হয়। এর মধ্যে ৪, ৫ ও ৬ আগস্ট দেশের বিভিন্ন থানা, ফাঁড়িসহ পুলিশের বেশ কিছু স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর সারা দেশে পুলিশি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ সদস্যরা থানায় আসতে সাহস পাননি। স্থাপনা পাহারা দেওয়ার জন্য আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়।
 
পুলিশের নতুন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম ৭ আগস্ট সব পুলিশ সদস্যকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন। পুলিশ সদস্যদের কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে জনসাধারণকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি।
 
তবে এখনো ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় অনেক পুলিশ সদস্য কাজে যোগ দেননি। পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কোনো দলীয় সরকার যাতে ব্যবহার করতে না পারে, সে জন্য স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনসহ ১১ দফা দাবি তুলেছেন পরিদর্শক থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত অনেক পুলিশ সদস্য। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা কাজে যোগ দেবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ১১ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন, সব থানা, ফাঁড়ি ও ট্রাফিক পুলিশ বক্স আধুনিকায়ন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের অধঃস্তন কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থা, বাহিনীর প্রচলিত আইন ও পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল সংস্কার করে যুগোপযোগী করা, নৈমত্তিক ছুটি বৃদ্ধি করে অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করা, ঝুঁকিভাতা বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী কর্মঘণ্টা কমিয়ে আট ঘণ্টা করা, অতিরিক্ত প্রতি কর্মঘণ্টা জন্য ওভারটাইম দেওয়া।
 
আইজিপির উপস্থিতিতে শুক্রবার বিকেলে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় ১১ দফা দাবির বিষয় তোলা হয়। তবে সভার এক পর্যায়ে হট্টগোল শুরু হয়। একপর্যায়ে আইজিপি বক্তব্য শেষ না করেই চলে যান।
 
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকা‌রের আম‌লে যেসব পুলিশ সদস্য বিভিন্ন কারণে চাকরিচ্যুত হন, তাঁরা চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবিতে গতকাল পুলিশ সদর দপ্তরের সামনে মানববন্ধন করেন। পরে তাঁদের কয়েকজন প্রতিনিধিকে মানববন্ধন থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে ডেকে নেওয়া হয়। ফিরে এসে তাঁদের একজন বলেন, আইজিপির সঙ্গে তাঁদের দেখা হয়নি। তবে আইজিপির একজন প্রতিনিধি তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং দাবির বিষয়গুলো শুনেছেন। এ বিষয়ে আজ তাঁদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আইজিপি কথা বলতে পারেন—এমন আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
যাত্রাবাড়ীতে জিডি নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা
 
স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়ে গতকাল দুপুরে যাত্রাবাড়ী থানায় এসেছিলেন এক নারী। তবে এ থানার কার্যক্রম এখনো শুরু করা যায়নি। কয়েকজন শিক্ষার্থী পুড়ে যাওয়া থানা ভবনের বাইরে চেয়ার–টেবিল পেতে বসেছিলেন। তাঁরা ওই নারীর সঙ্গে কথা বলে অভিযোগ লিখে রাখেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে অনেকেই থানায় আসছেন। থানায় কোনো পুলিশ সদস্য নেই। তাই তাঁরা সাধারণ ডায়েরি ও অভিযোগ লিখে রাখছেন। পরে সেগুলো থানার নিরাপত্তার দায়িত্বে থানা সেনাসদস্যদের কাছে জমা দিচ্ছেন।
 
জিডি ও অভিযোগ লেখার কাজ করছিলেন বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইয়াসিন আরাফাত। তিনি বলেন, বেলা দুইটা পর্যন্ত তিনি ১২টি জিডি ও অভিযোগ লিখে রেখেছেন। এর মধ্যেই অধিকাংশ অভিযোগ জোর করে জমি দখলের।
 
গতকাল দুপুরে যাত্রাবাড়ী থানা ভবনের বাইরে সেনাবাহিনীর দুটি টহল গাড়ি ছিল। আর থানা ভবনের ফটকে পাহারায় ছিলেন শিক্ষার্থীরা।
 
যাত্রাবাড়ী থানার ছয়তলা ভবন ৫ আগস্ট পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া থানা ভবনের সামনে অর্ধশতাধিক গাড়ি পোড়ানো হয়।
 
নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা শিক্ষার্থীরা বলেন, থানার ভবন মেরামত করে কার্যক্রম চালু করতে অনেক সময় লাগবে। এখন অস্থায়ী একটি স্থাপনা করে থানার কার্যক্রম শুরু করতে হবে। তাঁরা বলেন, বিভিন্ন অপরাধের শিকার হয়ে অনেকেই থানায় আসছেন। পুলিশ ছাড়া তাঁদের সহযোগিতা করা যাচ্ছে না।
#everyone #explore #বাংলাদেশ #থানা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.