দেড় বছরে অপরিবর্তিত পরিস্থিতি
ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে লায়নহাটি এলাকায় সড়ক ও দেবদোলাই খালের ওপর সেতু নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই কাজ শেষ হয়। সেতু নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল লায়নহাটি এলাকার সঙ্গে টেকপাড়া ও নাগদাড়পাড় এলাকাকে যুক্ত করা। একই সঙ্গে রামপুরা-ডেমরা সড়কের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা।
সেতু ও সড়ক নির্মাণে ৯ কোটি টাকার কাজ পুরোপুরি শেষ না করলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিল পরিশোধ করেছে সিটি করপোরেশন। এ নিয়ে ওই সময় ‘কাজ ৮০ ভাগ, টাকা শতভাগ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর প্রকল্পের পরিচালককে সাময়িক বরখাস্ত করেন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংস্থার একাধিক প্রকৌশলী বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও সেতু ও সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ করা যাচ্ছিল না। একপর্যায়ে প্রকল্পের মেয়াদই শেষ হয়ে যায়। তাই আধা কিলোমিটার সড়কের সংস্কারকাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি।
তবে যে অংশের কাজ এখনো শেষ হয়নি, ওই অংশটি অনেক নিচু ছিল বলে জানান সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। তাঁরা বলছেন, সেখানে মাটি ও বালু ফেলে ঢালাইয়ের প্রস্তুতি নিতেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এ জন্য সড়কটির কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি।
হাত লাগিয়েছেন স্থানীয়রা
গত শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ত্রিমোহনী বাজার থেকে লায়নহাটি সড়ক হয়ে আবেদ মাস্টার বাড়িসংলগ্ন সেতুর পরে সড়কে ইটের খোয়া ও বালু ফেলা হয়েছে। এতে কোনোমতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করতে পারছে। মাস দুয়েক আগে একই সড়কে গিয়ে দেখা গিয়েছিল, ইটের খোয়া রাস্তায় ফেলা হচ্ছে। তখন অবশ্য হেঁটে চলাও কঠিন ছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, স্থানীয় বাসিন্দা ও সরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা কামাল হোসেন ৫০০ মিটার সড়ক সংস্কারে উদ্যোগ নেন। তাঁর সঙ্গে যোগ দেন এলাকার আরও ১৫ যুবক। নাগদাড়পাড় এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে তাঁরা সড়কটি মোটামুটি সচল করেছেন। এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে সাত লাখ টাকা।
কামাল হোসেন বলেন, কোটি কোটি টাকা খরচ করে একপাশের সড়ক নির্মাণের পর সেতুও নির্মাণ করা হলো। কিন্তু সেতুর অপর পাশের সড়কটি আর সংস্কার করা হলো না। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করে সড়কটি সচল করার কাজে হাত দিয়েছেন। মাস দুয়েক আগে থেকে তাঁরা অল্প অল্প করে খোয়া ও বালু ফেলছেন।
‘করপোরেশনের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি হয়’
ওই আধা কিলোমিটার সড়ক সচল হলে প্রত্যক্ষভাবে টেকপাড়া, লায়নহাটি ও নাগদাড়পাড় এলাকার অন্তত ৫০০ পরিবার সুফল পাবে। তারা রামপুরা-ডেমরা মহাসড়কে খুব সহজে যেতে পারবে। এ ছাড়া নাসিরাবাদসহ আশপাশের আরও তিন এলাকার বাসিন্দারাও এ পথ দিয়ে রামপুরা-ডেমরা মহাসড়কে যেতে পারবেন। সড়কটি সচল করা গেলে অন্তত ১০ হাজার মানুষ সেতুর সুফল পাবেন বলে জানান স্থানীয় লোকজন।
৭৫ নম্বর ওয়ার্ডটি ঢাকা দক্ষিণ সিটির অঞ্চল-২–এর আওতায় পড়েছে। যোগাযোগ করা হলে এই অঞ্চলের একাধিক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাজউকের ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) নকশায় নতুন ওয়ার্ডে যেসব স্থানে সড়ক রয়েছে, চলতি অর্থবছর থেকেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাঁরা সেখানে সড়ক নির্মাণের কাজে হাত দেবেন। ওই আধা কিলোমিটার সড়ক ড্যাপের নকশায় আছে কি না, সেই প্রশ্নে তাঁরা বলেন, বিষয়টি স্পষ্ট নয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবান ও রিজওনাল প্ল্যানিং বিভাগের অধ্যাপক ও ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, সময়মতো প্রকল্প শেষ না করায় অনেক সময়ই কাজ অর্ধসমাপ্ত থাকে। এতে কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও জনভোগান্তি বাড়ে। সিটি করপোরেশনের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতাও তৈরি হয়।
গাফিলতির কারণে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্ত করা উচিত—এমন মত দিয়ে এই নগর–পরিকল্পনাবিদ আরও বলেন, যেকোনোভাবেই হোক সড়কের বাকি অংশের কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে।