পশু উৎপাদনে নীরব বিপ্লব রাজশাহী বিভাগে

0
92
নিজ খামারের গরুর সঙ্গে আরাফাত রুবেল। সম্প্রতি রাজশাহীর পবা উপজেলার শ্যামপুর এলাকায়

কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু উৎপাদনে রাজশাহী বিভাগ এ বছর দেশসেরা। দ্বিতীয় স্থানে আছে চট্টগ্রাম বিভাগ। তবে রাজশাহীর চেয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের উৎপাদন প্রায় ২৫ লাখ কম। রাজশাহী বিভাগে গবাদিপশু উৎপাদনের এই বিপ্লব ঘটিয়েছেন একদল শিক্ষিত যুবক। তাঁদের অনেকেই ভালোবাসা থেকে পশুপালনে উৎসাহিত হয়েছেন। অনেকেই বিদেশ থেকে এসে এই পশুপালন শুরু করেছেন। এখন তাঁদের সাফল্য দেশজোড়া। রাজশাহী বিভাগে ১ লাখ ৬৭ হাজার ২৭৩ জন খামারি পশুপালনে এ অবদান রাখছেন।

রাজশাহী বিভাগের মধ্যে সিরাজগঞ্জ পশুসম্পদের রাজধানী বলা হলেও এবার বগুড়ায় কোরবানিযোগ্য পশুর প্রাপ্যতা বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে নওগাঁ ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাজশাহী।

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ১৪ জুনের তথ্যমতে, দেশে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু আছে ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ১১ হাজার ৯৪৪টি বেশি। এর মধ্যে ৪৮ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫২টি গরু-মহিষ, ৭৬ লাখ ৯০ হাজার ছাগল-ভেড়া ও ২ হাজার ৫৮১টি অন্যান্য প্রজাতির গবাদিপশু। কোরবানিযোগ্য পশুর মধ্যে রাজশাহী বিভাগে ৪৫ লাখ ১১ হাজার ৬১৪টি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। তাদের ২০ লাখ ৫৩ হাজার ১২৮টি ও তৃতীয় রংপুর বিভাগে ১৯ লাখ ৬২ হাজার ৯৫১টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত আছে।

রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক মো. নজরুল ইসলামের ভাষ্য অনুযায়ী, আগে থেকেই রাজশাহী অঞ্চল প্রাণিসম্পদে সমৃদ্ধ। সিরাজগঞ্জকে প্রাণিসম্পদের রাজধানী বলা হয়। এ অগ্রযাত্রাকে সরকারের কিছু পদক্ষেপ আরও ত্বরান্বিত করেছে। এ জন্য শিক্ষিত তরুণদের তাঁরা প্রশিক্ষণ দিয়ে উৎসাহিত করেছেন। আর এই ঈদকে সামনে রেখে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগ বিশেষ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গবাদিপশুর খামারিদের হৃষ্টপুষ্টকরণের প্রযুক্তিবিষয়ক ১২ হাজার ৭০০ খামারিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

নিউজিল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে বগুড়ার তৌহিদ পারভেজ ‘বগুড়া ভান্ডার অ্যাগ্রো’ নামে একটি খামার গড়ে তুলেছেন। এবার কোরবানির জন্য তিনি ১৫৫টি গরু প্রস্তুত করেছিলেন। তাঁর সব গরুই বিক্রি হয়ে গেছে। এ জন্য তাঁকে কোনো হাটে গরু নিয়ে যেতে হয়নি। ৯৬ শতাংশ গরু তিনি ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ফেনীসহ দেশের অন্যান্য এলাকায় অনলাইনে বিক্রি করেছেন। তিনি নিজেও অন্য খামারিদের কাছ থেকে অনলাইনে গরু কিনে নিজের খামারে পুষে বড় করেন।

তৌহিদ পারভেজ বলেন, একশ্রেণির শিক্ষিত যুবক ভালোবেসে পশুপালনে এগিয়ে আসার কারণেই রাজশাহী বিভাগের কোরবানির পশু উৎপাদনে একটা নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ থেকে পাস করা শিক্ষার্থী আরাফাত রুবেল কোনো চাকরি না করে নিজের মতো আসবাবের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি গবাদিপশু পালনের জন্য ‘সওদাগর অ্যাগ্রো’ নামে একটি খামার গড়ে তুলেছেন। তিনি সেখানে দেশি জাতের পাশাপাশি ব্রাহামা জাতের ষাঁড় পালন করেন। তাঁর তিন থেকে সাড়ে তিন বছরের একটি ব্রাহামা ষাঁড়ের ওজন হয়েছে এক হাজার কেজি। তিনি ১৪টি ব্রাহামা জাতের ষাঁড় পুষেছিলেন। সেগুলোর মধ্যে ঈদের আগেই ১২টি বিক্রি করেছেন। এখন আর দুটি আছে। ভালো দাম না পেলে বিক্রি করবেন না।

আরাফাত রুবেল বলেন, তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, বর্তমানে ব্রাহামার দুধ ছাড়া বাছুর লাখ টাকার ওপরে বিক্রি হয়ে থাকে। এদের আকৃতি বড়। চর্বি কম থাকায় পুষ্টিগুণ বেশি থাকে। ৪৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ব্রাহামা গরু সুস্থ স্বাভাবিক থাকতে পারে। ২৪ মাস বয়সী ব্রাহামা জাতের গরু ৮০০ থেকে ১ হাজার কেজি মাংস উপাদনে সক্ষম। দেশি গরুতে এই সময়ে সর্বোচ্চ ৪০ কেজি মাংস হতে পারে।

রাজশাহীর তানোরের ইয়াসির আরাফাত যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে এসেছেন। তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। পাশাপাশি খামার করেছেন। এবার তাঁর বিক্রিযোগ্য ১৭টি গরু ছিল। এর মধ্যে ১১টি বিক্রি করেছেন। তিনিও বলছেন, একঝাঁক শিক্ষিত শৌখিন খামারিই রাজশাহী বিভাগে আধুনিক পদ্ধতিতে পশুপালনে ভূমিকা রাখছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.