৩৭ হাজার কোটি টাকা খরচ প্রিমিয়ার লিগে, অন্য লিগে কত

0
19
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের নতুন মৌসুম শুরু হয়েছে, এক্স

প্রিমিয়ার লিগে গ্রীষ্মকালীন দলবদলের মৌসুম শেষ হতে এখনো দুই সপ্তাহ বাকি। এরই মধ্যে খেলোয়াড় কেনায় ক্লাবগুলো ব্যয় করেছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। নাটকীয় কিছু না হলে এবারের দলবদলে খরচের নতুন রেকর্ড গড়া একরকম নিশ্চিতই বলা যায়।

ফুটবলট্রান্সফার্স ডটকমের হিসাব বলছে, জুনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো খেলোয়াড় কিনতে ব্যয় করেছে ২২৬ কোটি পাউন্ড (প্রায় ৩৭ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা), যা গত গ্রীষ্মকালীন দলবদলের মৌসুমে ১৯৭ কোটি পাউন্ড ব্যয়ের তুলনায় প্রায় ১২ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি।

এর আগে প্রিমিয়ার লিগে সর্বোচ্চ খরচ হয়েছিল ২০২৩ সালের গ্রীষ্মকালীন দলবদলে, তখন ব্যয় দাঁড়িয়েছিল ২৩৬ কোটি পাউন্ড। এবার আগামী ১ সেপ্টেম্বর দলবদলের মৌসুম শেষ হওয়ার ডেডলাইনের আগে আরও কিছু বড় চুক্তি সম্পন্ন হলে নতুন রেকর্ড যে হতে যাচ্ছে, তা অনেকটাই নিশ্চিত।

বরাবরের মতো এবারও প্রিমিয়ার লিগ ব্যয়ের দিক থেকে ইউরোপের অন্যান্য শীর্ষ লিগের তুলনায় এগিয়ে। এমনকি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর ব্যয় সিরি আ, বুন্দেসলিগা, লিগ আঁ ও লা লিগার ক্লাবগুলোর সম্মিলিত খরচের চেয়েও বেশি! এখন পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর নেট খরচই ১০০ কোটি পাউন্ডের বেশি। অন্য বড় লিগগুলোর মধ্যে কেবল লা লিগা ঋণাত্মক নেট খরচে আছে। স্প্যানিশ ক্লাবগুলো আয়ের তুলনায় ৩ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড বেশি খরচ করেছে।

এবারের দলবদলে প্রিমিয়ার লিগের সবচেয়ে বড় তিনটি দলবদল এসেছে জার্মান ক্লাবগুলো থেকে। লিভারপুল বায়ার লেভারকুজেনের ফ্লোরিয়ান ভির্টৎসকে কিনেছে ১০ কোটি পাউন্ডে, যা শর্ত পূরণ হলে বাড়তে পারে ১১ কোটি ৬০ লাখ পাউন্ড পর্যন্ত। আরেকজন জার্মান ফরোয়ার্ড আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টের হুগো একিতিকেও যোগ দিয়েছেন লিভারপুলে। তা মূল ফি ৬ কোটি ৯০ লাখ পাউন্ড, যা বাড়তে পারে ৭ কোটি ৯০ লাখ পর্যন্ত।

লিভারপুলের সঙ্গে চুক্তি করেছেন ফ্লোরিয়ান ভির্টৎস
লিভারপুলের সঙ্গে চুক্তি করেছেন ফ্লোরিয়ান ভির্টৎসলিভারপুল ওয়েবসাইট

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডও আরবি লাইপজিগ থেকে এনেছে বেনিয়ামিন সিসকোকে। যার জন্য ক্লাবটির খরচ হয়েছে ৬ কোটি ৬৩ লাখ পাউন্ড। শর্ত পূরণ হলে যা হতে পারে ৭ কোটি ৩৭ লাখ পাউন্ড। প্রিমিয়ার লিগের বাইরে সবচেয়ে বেশি খরচ করেছে সিরি আ। ইতালিয়ান ক্লাবগুলো ব্যয় করেছে ৭৮ কোটি ৩০ লাখ পাউন্ড, তবে সেটিও প্রিমিয়ার লিগের নেট খরচের সমান নয়। এ ছাড়া অন্য লিগগুলোর মধ্যে বুন্দেসলিগায় ৫৫ কোটি ৬০ লাখ পাউন্ড, ফরাসি লিগ আঁতে ৪২ কোটি ৬০ লাখ পাউন্ড এবং স্প্যানিশ লা লিগায় ৪৫ কোটি ২০ লাখ পাউন্ড খরচ হয়েছে।

এবারের ট্রান্সফার উইন্ডোর আরেকটি বিশেষ দিক হলো, এটি দুই ধাপে বিভক্ত ছিল। ১ থেকে ১০ জুন পর্যন্ত ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের জন্য বিশেষ নিবন্ধনের ব্যবস্থা ছিল। যেখানে খরচ হয়েছিল প্রায় ৪০ কোটি পাউন্ড। ওই সময়েই ম্যানচেস্টার সিটি কিনেছিল রায়ান শেরকি, রায়ান এইত-নুরি ও তিজানি রেইন্ডার্সকে। তাঁদের জন্য মোট খরচ হয়েছিল প্রায় ১০ কোটি ৮০ লাখ পাউন্ড। এরপর ১৬ জুন থেকে আবার দলবদলের মৌসুম খুলে দেওয়া হয়, যা চলবে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

এ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের ছয়টি ক্লাব তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল সাইনিং সম্পন্ন করেছে। ব্রেন্টফোর্ড ৪ কোটি ২৫ লাখ পাউন্ডে বোর্নমাউথ থেকে কিনেছে দাঙ্গো ওয়াত্তারাকে। বোর্নমাউথ নিজেদের নতুন রেকর্ড গড়েছে ফরাসি ডিফেন্ডার বাফোদে দিয়াকিতেকে ৩ কোটি ৪৬ লাখ পাউন্ডে কিনে।

আলেক্সান্দার ইসাকের দলবদলই বদলে দিতে পারে সব হিসাব
আলেক্সান্দার ইসাকের দলবদলই বদলে দিতে পারে সব হিসাব, ইনস্টাগ্রাম

বার্নলি ও সান্ডারল্যান্ড যথাক্রমে ২ কোটি ৫০ লাখ ও ২ কোটি ৬০ লাখ পাউন্ড খরচ করেছে ফরাসি মিডফিল্ডার লেসলি উগোচুকু ও সেনেগালের হাবিব দিয়ারাকে দলে টানতে। নটিংহাম ফরেস্ট তো রেকর্ড ভেঙেছে দুবার। প্রথমে বোলোনিয়া থেকে দান এনদোয়েকে নিয়ে এবং পরে ৩ কোটি ৭৫ লাখ পাউন্ডে ইপসউইচ থেকে ওমারি হাচিনসনকে কিনে।

সবচেয়ে আলোচিত চুক্তি অবশ্য লিভারপুলের ভির্টৎসের। তাঁকে ১০ কোটি পাউন্ডে কেনার পর বাকি শর্ত পূরণ হলে দামটা দাঁড়াতে পারে ১১ কোটি ৬০ লাখ পাউন্ডে। এমনটা হলে সেটিই হবে ব্রিটিশ ফুটবলের নতুন রেকর্ড, যা ভেঙে দেবে ২০২৩ সালে চেলসির ১০ কোটি ৭০ লাখ পাউন্ডে এনজো ফার্নান্দেজকে দলে নেওয়ার কীর্তি।

নিজেদের সর্বকালের রেকর্ড ভাঙতে প্রিমিয়ার লিগকে আরেকটু সময় অপেক্ষা করতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই খরচ শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে? এখনো পর্যন্ত ঝুলে আছে আলেক্সান্দার ইসাকের দলবদল। শেষ পর্যন্ত তিনি যদি নিউক্যাসল ছেড়ে লিভারপুলে আসেন, তবে এই এক দলবদলই সব রেকর্ড এলোমেলো করে দিতে পারে।

পাশাপাশি লিভারপুল আগ্রহী ক্রিস্টাল প্যালেসের ডিফেন্ডার মার্ক গুয়েহিকে নিয়েও। অন্যদিকে প্যালেসের ফরোয়ার্ড এবেরেচি এজেকে চাইছে টটেনহাম। ব্রেন্টফোর্ডের ফরোয়ার্ড ইয়োয়ান উইসা ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের স্ট্রাইকার আলেহান্দ্রো গারনাচোরও সম্ভাবনা আছে দলবদলের। সব মিলিয়ে এই দলবদলগুলো আলোর মুখ দেখলে নতুন এক মাইলফলকই তৈরি করবে প্রিমিয়ার লিগ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.