বিশ্বকাপের ‘সবচেয়ে’ আকাঙ্ক্ষিত ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে নাটকীয় ধসে পড়ে ১৯১ রানেই অলআউট হয়ে গেছে পাকিস্তান। অধিনায়ক বাবর আজম আউট হওয়ার আগে ২৯.৩ ওভারে ২ উইকেটে ১৫৫ রান ছিল তাদের, সেখান থেকে ৩৬ রান তুলতেই শেষ ৮ উইকেট হারিয়ে ৪২.৫ ওভারেই গুটিয়ে গেছে পাকিস্তান। আহমেদাবাদের ধীর গতির এ উইকেট ঠিক ‘হাই-স্কোরিং’ নয়, তবে পাকিস্তান থেমেছে বেশ আগেভাগেই।
অথচ টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে যশপ্রীত বুমরা ও মোহাম্মদ সিরাজের বিপক্ষে শুরুটা বেশ ভালো করেন দুই ওপেনার ইমাম-উল-হক ও আবদুল্লাহ শফিক। পেসারদের জন্য তেমন কিছু ছিল না উইকেটে, তাঁদের লাইন ও লেংথে থিতুও হতে দেননি দুই ওপেনার। প্রথম ৭ ওভারে আসে ৭টি বাউন্ডারি। এরপরই সিরাজের ক্রস সিমের ডেলিভারিতে পরাস্ত আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান শফিক, আম্পায়ারের এলবিডব্লিউয়ের সিদ্ধান্ত রিভিউ করার প্রয়োজনীয়তাও বোধ করেননি তিনি। ৪১ রানের ওপেনিং জুটি থামে অষ্টম ওভারের শেষ বলে।
বাবরের সঙ্গে ইমামের জুটি অবশ্য সেভাবে গড়ে ওঠেনি। ভালো শুরুর পর হার্দিক পান্ডিয়ার অফ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা দিয়ে থামেন ৩৮ বলে ৩৬ রান করা ইমাম। প্রথম পাওয়ার প্লের শেষ দিকের পর দ্বিতীয়টির শুরুতে আরেকটি উইকেট নিয়ে ভারত ছিল উজ্জীবিত। কিন্তু বাবর ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের জুটি হতাশ করে তাদের।
স্পিনারদের বিপক্ষে সতর্ক বাবর সুযোগ কাজে লাগান পান্ডিয়া, শার্দুল ঠাকুর ও সিরাজের বিপক্ষে, তাঁর ৭টি চারের ৬টিই আসে এ তিন পেসারের বিপক্ষে। সপ্তম চারটি মারেন কূলদীপকে, সেটিতেই ভারতের বিপক্ষে সপ্তম ইনিংসে এসে প্রথম ফিফটি পান। বিশ্বকাপে আগের দুই ম্যাচ মিলিয়ে ১৫ রান করা বাবরের রানে ফেরা পাকিস্তানকে আশা জোগাচ্ছিল বড় স্কোরের, সঙ্গে ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা রিজওয়ান। দুজনের জুটিতে মাঝের ওভারগুলোর বড় একটা অংশে নিয়ন্ত্রণে ছিল পাকিস্তান।
কিন্তু সিরাজের ক্রস সিমের লেংথ বলে থার্ডম্যানে অতি-আত্মবিশ্বাসী হয়ে খেলতে গিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনেন। যেভাবে চেয়েছিলেন, বল ততটা ওঠেনি। ব্যাটের ফেস অনেকটা বন্ধ করে খেলার চেষ্টা ব্যর্থ হয় তাঁর, ৫০ রানেই হন বোল্ড। কিন্তু বাবরের উইকেট যে পাকিস্তানের বাঁধ ভেঙে দেবে, তখনো ঠিক তেমন মনে হয়নি।
১১ থেকে ৪০ ওভারের মধ্যে গত বিশ্বকাপের পর থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট যাঁর, সেই কুলদীপের এক ওভারেই বদলে যায় সব। ততক্ষণ পর্যন্ত অবশ্য চাপ তৈরি করলেও উইকেটের দেখা পাননি। এবার লাইন ধরে রাখা বলে এলবিডব্লিউ সৌদ শাকিল, যে উইকেট ভারত পায় রিভিউ নিয়ে। সে ওভারেই লেগ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে সুইপ করতে গিয়ে স্টাম্পে বল ডেকে আনেন ইফতিখার আহমেদ। পরের ওভারে বুমরার ভেতরের দিকে ঢোকা বলটা রিজওয়ানের ব্যাট ও প্যাডের বড় গ্যাপ দিয়ে ঢুকে স্টাম্প ভেঙে দিলে পাকিস্তানের মিডল অর্ডারের মৃত্যুটা নিশ্চিত হয়। রিজওয়ান পারেননি, এরপর শাদাবের জন্য বুমরার সিম-আপ ডেলিভারি ছিল বেশিই কঠিন।
পাকিস্তান অবশ্য হতাশ করেনি কাউকেই, এরপর জাদেজাও পেয়েছেন উইকেটের দেখা। এ বাঁহাতি স্পিনারের বলেই হারিস রউফ এলবিডব্লিউ হলে শেষ হয় পাকিস্তানের ইনিংস। এ উইকেটও ভারত পায় রিভিউ নিয়ে। বোলিং পরিবর্তন থেকে শুরু করে রিভিউ-এ ম্যাচের প্রথম ইনিংসে রোহিত শর্মা ও ভারতের পক্ষে গেছে সবকিছুই।