৩২ ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ, দিনে ৩১৯ জনের মৃত্যু

0
65
৩২ ধরনের ক্যানসার

ক্যানসার অনেক বড় স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দেশে দৈনিক গড়ে ৪৫৮ জন নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। আর ক্যানসারে দৈনিক গড়ে মারা যাচ্ছে ৩১৯ জন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রোগের প্রকোপের তুলনায় দেশে চিকিৎসাব্যবস্থা অপ্রতুল।

কমপক্ষে ৩২ ধরনের ক্যানসারে এ দেশের মানুষ আক্রান্ত হন বলে তথ্য দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ক্যানসার দীর্ঘস্থায়ী রোগ। এ রোগের চিকিৎসা চলে দীর্ঘদিন। ক্যানসারের চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি। দরিদ্র মানুষের পক্ষে ক্যানসারের চিকিৎসা শেষ করে আরোগ্য লাভ করা কঠিন। দেশের ধনীদের একটি বড় অংশ ক্যানসার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান। আস্থা রেখে ক্যানসার চিকিৎসা করা যায়, এমন প্রতিষ্ঠান দেশে এখনো সেভাবে গড়ে ওঠেনি।

বাংলাদেশে খাদ্যনালির (গলবিল থেকে খাদ্যনালি পর্যন্ত) ক্যানসার সবচেয়ে বেশি। দেশে প্রধান পাঁচটি ক্যানসারের মধ্যে আছে—খাদ্যনালি, ঠোঁট ও মুখ, ফুসফুস, স্তন ও জরায়ু ক্যানসার। পুরুষের ক্ষেত্রে খাদ্যনালির ক্যানসার বেশি, আর নারীর ক্ষেত্রে স্তন ক্যানসার বেশি। তবে মৃত্যু বেশি হচ্ছে খাদ্যনালির ক্যানসারে।

আজ ৪ ফেব্রুয়ারি, রোববার বিশ্ব ক্যানসার দিবস। দিনটি সামনে রেখে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৮৫টি দেশের ক্যানসার পরিস্থিতির অনুমিত পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে ২ ফেব্রুয়ারি। সর্বশেষ ২০২২ সাল পর্যন্ত পরিসংখ্যান আছে। বৈশ্বিক পরিসংখ্যান ছাড়াও প্রতিটি দেশের পৃথক পরিসংখ্যানও প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। সংস্থাটি বলছে, বৈশ্বিকভাবে ক্যানসারের বোঝা বড় হচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য–বিশেষজ্ঞরা বলেন, বেশি বয়স পর্যন্ত বাঁচলে ক্যানসার, ডায়াবেটিস, দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগ, হৃদ্‌রোগ, কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ে। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির সঙ্গে ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক আছে।

ক্যানসার–বিশেষজ্ঞ ও মেডিকেল অনকোলজি সোসাইটি ইন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক পারভীন শাহিদা আখতার বলেন, ‘ফাস্ট ফুড, বেশি চিনি বা বেশি লবণযুক্ত খাবার ক্যানসারের কারণ। ধূমপায়ী বা যাঁরা পান-জর্দা খান, তাঁদের ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি। বায়ুদূষণ ক্যানসারের কারণ। ভেজাল খাদ্য মানুষের ক্যানসার বাড়ায়। আমরা এ–ও দেখেছি, অল্প বয়সে বিয়ে করা নারীদের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা আছে।’

আজ ৪ ফেব্রুয়ারি, রোববার বিশ্ব ক্যানসার দিবস। দিনটি সামনে রেখে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৮৫টি দেশের ক্যানসার পরিস্থিতির অনুমিত পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে ২ ফেব্রুয়ারি।

বাংলাদেশ পরিস্থিতি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বাংলাদেশে বছরে ১ লাখ ৬৭ হাজার ২৫৬ জন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি। বছরে ক্যানসারে মারা যাচ্ছেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৫৯৮ জন। মৃত্যুও দেখা যায় পুরুষের বেশি। মৃত রোগীদের হিসাব বাদ দিয়ে দেশে এখন ক্যানসার রোগীর সংখ্যা ৩ লাখ ৪৬ হাজারের কিছু বেশি।

বাংলাদেশে খাদ্যনালির (গলবিল থেকে খাদ্যনালি পর্যন্ত) ক্যানসার সবচেয়ে বেশি। দেশে প্রধান পাঁচটি ক্যানসারের মধ্যে আছে—খাদ্যনালি, ঠোঁট ও মুখ, ফুসফুস, স্তন ও জরায়ু ক্যানসার। পুরুষের ক্ষেত্রে খাদ্যনালির ক্যানসার বেশি, আর নারীর ক্ষেত্রে স্তন ক্যানসার বেশি। তবে মৃত্যু বেশি হচ্ছে খাদ্যনালির ক্যানসারে।

বাংলাদেশে রোগভিত্তিক কোনো জাতীয় জরিপ নেই। ক্যানসারে কত মানুষ আক্রান্ত হন, কত মানুষ মারা যান, কোন ক্যানসারের প্রকোপ বেশি—এসব বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া অনুমিত পরিসংখ্যানই ব্যবহার করা হয়।

চিকিৎসায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অনেকে চিকিৎসা নেওয়া থেকে বিরত থাকেন। অনেকে রাজধানীতে থাকার ব্যয় বহন করতে পারেন না। অনেক অর্থ ব্যয় করে ঢাকায় এসেও চিকিৎসা না নিয়ে বাড়ি ফেরত যান।

চিকিৎসা অপ্রতুল

ক্যানসার–বিশেষজ্ঞরা বলেন, আদর্শ ক্যানসার চিকিৎসা হয় দলগতভাবে। চিকিৎসকদের এই দলে থাকেন ওষুধবিশেষজ্ঞ, শল্যবিদ, রেডিও অনকোলজিস্টসহ আরও অনেকে। জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মোয়াররফ হোসেন বলেন, ক্যানসারের জন্য দরকার সমন্বিত চিকিৎসাকেন্দ্র। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার সঙ্গে এই কেন্দ্রে থাকবে কেমোথেরাপি, সার্জারি ও রেডিওথেরাপির ব্যবস্থা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য এ রকম একটি করে ক্যানসার সেন্টার থাকা দরকার। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি। মানসম্পন্ন চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে ১৭০টি ক্যানসার চিকিৎসাকেন্দ্র থাকা দরকার। কিন্তু আছে মাত্র ২২টি। এর সিংহভাগই রাজধানী ঢাকায়।

সারা দেশের দরিদ্র রোগীরা চিকিৎসার জন্য সরকারের জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আসেন। ৫০০ শয্যার এ হাসপাতালে সারা বছর রোগীর ভিড় থাকে। সহজে এ প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা পাওয়া যায় না। অনেক রোগীকে বিশেষ কোনো থেরাপি বা সার্জারির জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়।

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর এক নারী স্তন ক্যানসারে ভুগছেন। প্রথমে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা হয়। সার্জারি ও কেমোথেরাপি শেষে তাঁর এখন রেডিওথেরাপি প্রয়োজন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেডিওথেরাপির যন্ত্র নষ্ট। হাসপাতাল থেকে ওই নারীকে রাজধানীর জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ওই নারী ঢাকায় এসেছিলেন। ছিলেন আত্মীয়ের বাসায়। অনেক চেষ্টার পর রেডিওথেরাপির একটি তারিখ পেয়েছেন। প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁকে ৬ জুন আসতে বলা হয়েছে। ওই নারী ভূরুঙ্গামারীতে চলে গেছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, চিকিৎসায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অনেকে চিকিৎসা নেওয়া থেকে বিরত থাকেন। অনেকে রাজধানীতে থাকার ব্যয় বহন করতে পারেন না। অনেক অর্থ ব্যয় করে ঢাকায় এসেও চিকিৎসা না নিয়ে বাড়ি ফেরত যান। অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি। তাই অনেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী নন। আবার দেশের চিকিৎসায় আস্থা না থাকায় বিত্তশালীরা বিদেশে চিকিৎসা নেন।

এই আস্থাহীনতার কথা গত সপ্তাহে জনসমক্ষে বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। তিনি গত ২৮ জানুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, দেশের চিকিৎসার ওপর মানুষের আস্থা নেই। আস্থাহীনতার কারণে মানুষ বিদেশে চিকিৎসা নিতে যান। চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নতি করে দেশের মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে চান নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

ঢাকা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.