সাংস্কৃতিক পরিবারে বেড়ে ওঠা সাদিয়া ইসলাম মৌয়ের। পরিবার থেকেই শুরুতে নাচে আসেন। পরবর্তী সময়ে মডেলিং ও অভিনয়ে যুক্ত হন। তিনি মডেলিং অঙ্গনে এখনো তরুণদের আদর্শ। দীর্ঘ প্রায় তিন যুগের ক্যারিয়ারে কী ছিল তাঁর পথচলার অনুপ্রেরণা। পুরো কৃতিত্ব তিনি কাকে দিতে চান? আজ এই মডেল ও অভিনেত্রীর জন্মদিন। জেনে নিতে পারেন, তাঁর সেই জানা ও অজানা কথাগুলো।
বাবা সাইফুল ইসলামকে শৈশব থেকেই গাইতে দেখেছেন মৌ। তিনি ছিলেন সংগীতশিল্পী। মা রাশা ইসলাম নৃত্যশিল্পী ছিলেন। পরবর্তী সময়ে অভিনয়ও করেছেন। দাদাবাড়ি ও নানাবাড়ির লোকেরাও রীতিমতো সংস্কৃতিচর্চা করতেন। এমন আবহে বড় হলেও ভবিষ্যতে মডেলিং বা অভিনয়ে ক্যারিয়ার গড়বেন, জনপ্রিয়তা পাবেন, এটা কখনোই ভাবেননি। সেই চেষ্টাও নাকি ছিল না মৌয়ের।

মৌ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমার আজকের অবস্থানে আসার পুরো কৃতিত্ব একমাত্র আমার মায়ের। বলা যেতে পারে, আমার বিন্দুমাত্র পরিশ্রম নেই। মায়ের চেষ্টায় এত দূর এসেছি।’ শুধু তা–ই নয়, তিনি মিডিয়ায় ক্যারিয়ার গড়বেন, মানুষ তাঁকে চিনবে, জনপ্রিয় হবেন, এই স্বপ্নও নাকি তাঁর চেয়ে বেশি তাঁর মা দেখেছেন। মৌ বলেন, ‘আমি কল্পনাই করিনি কাজ করব। আমার কোনো স্বপ্ন ছিল না এত দূর আসব। মডেলিং আমাকে দিয়ে সম্ভব হবে কি না, এটাও জানতাম না। আমার চেয়ে আমাকে নিয়ে স্বপ্নগুলো মা–ই বেশি দেখেছিলেন।’
মাত্র সাড়ে তিন বছর বয়সে অনেকটাই জোর করে মৌয়ের পায়ে ঘুঙুর পরিয়ে দেন তাঁর মা। শুধু তা–ই নয়, মৌয়ের যেকোনো কাজই নাকি জোর করে করা হতো। এর পেছনে কারণ ছিল। মৌ বলেন, ‘আমি যেহেতু কোনো কিছু নিয়ে স্বপ্ন দেখিনি। ভাবিনি কোনো কিছু নিয়ে। মা মডেলিং করতেন। পরে অভিনয়ও করেছেন। শৈশবে গিটার বাজানোও শিখেছেন। কোনোটাই পেশাগত জায়গা থেকে নয়। যে কারণেই মা হয়তো চাইতেন, আমাদের চার বোনকে ব্যস্ত রাখতেন। বোনেরা কেউ সেতার, গিটার, নাচ ও অভিনয় নিয়ে থাকত। আমার ছোট বোনও নাচ–গান নিয়ে থাকত। এগুলো নিয়ে মা ছোটবেলায় মজার একটা কথা বলতেন, “সব সময় চেয়েছি তোমাদের ব্যস্ত রাখতে, যেন প্রেমটেম না করো।” এ ছাড়া মেয়েরা বেকার বসে থাকবেন, এটা তিনি কখনোই চাইতেন না।’

নাচ শিখতে শিখতে বড় হতে থাকেন মৌ। অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনার সময়ে ১৯৮৮ সালে নাম লেখান মডেলিংয়ে। ক্যারিয়ারের শুরুর সেই ঘটনা স্মরণ করে মৌ বলেন, ‘একদিন আমাদের বড় দুলাভাই এসে জানালেন, ফ্যাশন শোতে অংশ নিতে হবে। আমি তখনো কিছুই বুঝিনি। এটা আমি কখনো দেখিনি। মায়ের সঙ্গে কথা বলে অংশ নিলাম। একটা কাজ করার পর দুই–তিনটা শোয়ের প্রস্তাব পেলাম।’
পরবর্তী সময়ে যত জায়গায় শো করেছেন, সেখান থেকেই আরও বেশি মডেলিংয়ের প্রস্তাব পেয়েছেন মৌ। পরিচিতি বাড়লে ডাক পড়ে বিজ্ঞাপনে। সেখানে ১৯৮৯ সালে শুরু এই পথচলা। পরে মডেলিং ও বিজ্ঞাপনে কাজ করা নিয়ে আর পেছনে তাকাতে হয়নি।
মডেলিংয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করলেও কণ্ঠস্বরের কারণে দীর্ঘ সময় তিনি অভিনয় করতে চাননি। অনেকটা বাধ্য হয়েই ১৯৯৫ সালে পরিচালক ফারিয়া হোসেনের ‘অভিমানে অনুভবে’ নামের একটি নাটক দিয়ে অভিনয়ে পা রাখেন। সহশিল্পী ছিলেন টনি ডায়েস।

প্রথম নাটক প্রচারের পরের অভিজ্ঞতা নিয়ে মৌ বলেন, ‘আমার কণ্ঠস্বর যে আলাদা, এটা বন্ধুবান্ধবরা আড্ডা–আলাপে বুঝতে পারত না। কিন্তু প্রথম নাটকে অভিনয়ের পরে বন্ধুরাই বলেছিল, “তুই কিন্তু আর অভিনয় করিস না মৌ। কারণ, তোর গলা যা মোটা লেগেছে।” এটা আমি বুঝতে পেরেছিলাম। যে কারণে আগেই ফারিয়া আপুকে বলেছিলাম, আমাকে দিয়ে অভিনয় না করাতে। শেষ মুহূর্তেও একই কথা বলেছিলাম।’
পরবর্তী সময়ে অভিনয়ে মৌকে সহযোগিতা করেছেন হুমায়ুন ফরীদি, তারিক আনাম খান, শহীদুজ্জামান সেলিমসহ অনেকে। তাঁর কণ্ঠ নিয়ে আর খুব বেশি সমস্যা হয়নি। দর্শকেরাও একসময় কণ্ঠ পছন্দ করেন। পরবর্তী সময় সাদিয়া ইসলাম মৌকে পাওয়া যায় মডেলিং, অভিনয় ও নাচে। নব্বইয়ের দশক থেকে শুরু করে এখনো তিনি সমান জনপ্রিয়। আর নতুন প্রজন্মের মডেলদের কাছে তিনি আইকন। ১৯৭৬ সালের ২১ জুন তাঁর জন্ম। সাদিয়া ইসলাম মৌ বিয়ে করেন অভিনেতা জাহিদ হাসানকে। তাঁদের পুষ্পিতা, পূর্ণ নামের এক মেয়ে ও ছেলে রয়েছে।
