আগামী অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) পাস করা হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের মূল এডিপি থেকে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা কম।
আগামী এডিপির অর্থের মধ্যে স্থানীয় উৎস থেকে জোগান দেওয়া হবে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা। আর প্রকল্প সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাবে ৮৬ হাজার কোটি টাকা। আগামী এডিপিতে ১ হাজার ১৭১টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর বাইরে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের জন্য ৮ হাজার ৫৯৯ কোটি ৭১ লাখ টাকার প্রকল্প এডিপিতে রাখা হয়েছে।
আজ রোববার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় নতুন এডিপি পাস হয়। পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
আগামী অর্থবছরের বাজেট হবে শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের বাজেট। দায়িত্বজ্ঞানহীন বাজেট হবে না। এখানে এমন ব্যয় থাকবে না যে সাময়িকভাবে মনে হবে জনতুষ্টির, কিন্তু এর দায় গিয়ে পড়বে পরবর্তী বাজেটগুলোর ওপর: ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা
এডিপিতে বরাদ্দের ৭০ শতাংশ বরাদ্দ রয়েছে পাঁচটি খাতে। এগুলো হলো পরিবহন ও যোগাযোগ; বিদ্যুৎ ও জ্বালানি; শিক্ষা; গৃহায়ণ ও কমিউনিটি সুবিধাবলি; স্বাস্থ্য। প্রতিটি খাতেই বরাদ্দ কমানো হয়েছে। এই পাঁচটি খাতে বরাদ্দ কমছে ৮ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত।
সভা শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের নতুন এডিপি সম্পর্কে অবহিত করেন।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেট হবে শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের বাজেট। দায়িত্বজ্ঞানহীন বাজেট হবে না। এখানে এমন ব্যয় থাকবে না যে সাময়িকভাবে মনে হবে জনতুষ্টির, কিন্তু এর দায় গিয়ে পড়বে পরবর্তী বাজেটগুলোর ওপর।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, অনেক অনেক ব্যয় আছে, যেমন টাকা ছাপিয়ে ব্যয় হয়। এতে মূল্যস্ফীতির প্রভাব সঙ্গে সঙ্গে পড়ে না। এর প্রভাব পড়ে পরবর্তী বছরগুলোতে। এ কারণে বর্তমান সরকার দায়িত্বজ্ঞানহীন কিছু করবে না, যার দায় পড়বে পরবর্তী বাজেটে।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেট হবে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার বাজেট, যেখানে মূল্যস্ফীতি কমানোর কৌশল থাকবে। বাজেট ব্যবস্থাপনায় যাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসে, এর কৌশল সরকার এত বেশি বৈদেশিক ঋণ নেবে না, যার জন্য পরিশোধের চাপ বাড়বে। ঋণের দুষ্টচক্রে যাতে না পড়ে, সে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
কোন খাতে কত বরাদ্দ
নতুন এডিপিতে বরাদ্দের দিক থেকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতকে। এ খাতে মোট ৫৮ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩২ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে শিক্ষা খাতে। এ খাতে আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দের পরিমাণ ২৮ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা।
অন্য খাতগুলোর মধ্যে গৃহায়ণ খাতে ২২ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা; স্বাস্থ্যে ১৮ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা; স্থানীয় সরকার ও পল্লি উন্নয়নে ১৬ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা; কৃষিতে ১০ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা; পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ খাতে ১০ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা; শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় ৫ হাজার ৩৮ কোটি টাকা; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে ৩ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ যাচ্ছে।