আজ ২৪ আগস্ট ইয়াসমিন ট্র্যাজেডি ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস। ১৯৯৫ সালের এই দিনে দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার দশমাইলের অদূরে বিপথগামী কিছু পুলিশ সদস্যের হাতে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয় কিশোরী ইয়াসমিন। ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সে সময় তুমুল আন্দোলন গড়ে তুলেছিল দিনাজপুরের সাধারণ মানুষ। কিন্তু পুলিশ সে আন্দোলনে বিনা উস্কানিতে গুলি চালিয়ে সাতজনকে হত্যা করে, আহত হন অনেককে। সেদিনের ওই ঘটনা দেশজুড়ে বিবেকবান মানুষকে নাড়া দিয়ে যায়। ইয়াসমিনের ঘটনার ২৮ বছর পর এসেও মেয়ের জন্য এখনও চোখের জল ফেলেন তাঁর মা শরিফা বেগম। তাঁর চাওয়া, ইয়াসমিনের মতো পরিণতি যেন আর কোনো মেয়ের না হয়। বিচারের রায়ে ইয়াসমিনের খুনিদের ফাঁসি এরই মধ্যে কার্যকর হয়েছে। কিন্তু নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা বন্ধ হয়নি। শরিফা বেগম চান, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যার প্রতিটি ঘটনা জনসমক্ষে আসুক। প্রতিটি ঘটনায় দায়ীরা যেন ইয়াসমিনের খুনিদের মতো দৃষ্টান্তমূলক শান্তি পায়।
ইয়াসমিন ধর্ষণ-হত্যার ঘটনার পর দিনাজপুরে নারী নির্যাতনবিরোধী যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তা আজ ছড়িয়ে গেছে দেশজুড়ে। যদিও সেই দিনাজপুরে এখনও ধর্ষণ, হত্যা, নারী নির্যাতন বন্ধ হয়নি। দিন দিন এসব ঘটনা বরং বাড়ছে। দিনাজপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা যায়, গত ১ জানুয়ারি থেকে ২২ আগস্ট জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণ, ধর্ষণ চেষ্টা, নির্যাতনের মামলা হয়েছে মোট ৯১১টি। এর মধ্যে ধর্ষণের মামলা ১৮৭ ও ধর্ষণ চেষ্টার ৫৫টি। গত বছর এই আদালতে মামলা হয়েছে ১ হাজার ৩৭৫টি; যা গড়ে প্রতি মাসে ১১৪.৫৮টি। ২০২১ সালে মামলা হয়েছে ১ হাজার ২৭৬টি; যা গড়ে প্রতি মাসে হয়েছে ১০৬.৩৩টি। সেই হিসাব মতে, প্রতি বছরই বাড়ছে মামলার সংখ্যা।
এদিকে দিনাজপুর জেলা রেজিস্ট্রি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে এই জেলায় মোট বিয়ে হয়েছে ১৩ হাজার ৯৬৪টি। এর মধ্যে মুসলিম ১৩ হাজার ৫১৬টি ও হিন্দু ৪৪৮টি। একই সময়ে জেলায় তালাক হয়েছে ৫ হাজার ৮১০টি। যা মাসে গড়ে প্রায় ১৬টি। এসব তালাকের অধিকাংশই হয়েছে নারী নির্যাতনকে কেন্দ্র করে।
ইয়াসমিনের ঘটনার পরও নারী ও শিশু নির্যাতন না কমায় আক্ষেপ রয়েছে তাঁর মা ও ভাইয়ের। ইয়াসমিনের মা শরিফা বেগম বলেন, কিছু কুলাঙ্গারের হাতে আমার মেয়ে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছে। ওই সময় তাদের বিরুদ্ধে দিনাজপুরবাসী আন্দোলনে নেমেছিল। জড়িতদের ফাঁসি হয়েছে। এতে আমি সন্তুষ্ট হলেও এখনও দেখি যে শিশু-কিশোরী ও নারীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এখনও অনেক কুলাঙ্গার রয়ে গেছে। আমি চাই, প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দ্রুত সময়ের মধ্যে হোক।
ইয়াসমিনের ভাই সাহিদার রহমান সোহাগ বলেন, আর কারও বোন যাতে এমন ঘটনার শিকার না হয়। এখনও যেসব ঘটনা ঘটছে সেগুলোর দ্রুত বিচার হোক।
ইয়াসমিন আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী দিনাজপুর-১ আসনের এমপি মনোরঞ্জন শীল গোপাল বলেন, সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণের কারণে ইয়াসমিনের ধর্ষক ও হত্যাকারীদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। তবে এখনও নারী নির্যাতন বন্ধ হয়নি। নারী নির্যাতন বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
এদিকে ইয়াসমিন ট্র্যাজেডি দিবস উপলক্ষে দিনাজপুর নগরীর দশমাইল মোড়ে অবস্থিত ইয়াসমিনের স্মৃতিসৌধে আজ কয়েকটি সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, কবর জিয়ারত, দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া ইয়াসমিনের মা বাড়িতে কোরআন খতম ও দোয়ার আয়োজন করেছেন।