আগুন সন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তির বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

0
94
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

আন্দোলনের নামে দেশে ২০১৩-১৪ সালের মতো আগুন সন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তি যাতে কেউ করতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে আট বিভাগের ৩৪ জেলায় আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে এ কথা বলেন। এ নিয়ে সারাদেশে ৯,৪৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মীয়মান ৫৬৪টির মধ্যে পাঁচ ধাপে ২৫০টি মসজিদ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী। খবর বাসসের

অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি যাতে কেউ ২০১৩-১৪ সালের মতো আগুন সন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তি করে বাংলাদেশের ক্ষতি করতে না পারে।’

শনিবার বেশ কয়েকটি বাসে ‘বিএনপির অগ্নিসংযোগের’ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাদের চরিত্র আপনারা ভালো করেই জানেন, এরা সন্ত্রাসী। গতকালও (শনিবার) তারা বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দিয়েছে। তারা ২০১৩-১৪ সালেও চলন্ত বাস, ট্রেন ও লঞ্চে আগুন দিয়ে মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ গতকাল তাদের (বিএনপি) ভয়ঙ্কর চেহারা দেখেছে, কারণ তারা আবারও আগুন সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা (বিএনপি) ইসলামের নামে রাজনীতি করেছে, কিন্তু ইসলামের প্রতি তাদের ভালোবাসা নেই। ইসলামের প্রচার ও প্রসারে তাদের কোনো অবদানও নেই।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা এবং তাবলিগ জামাতের জন্য টঙ্গীতে এক টুকরো জমি বরাদ্দ করে সারাদেশে ইসলামের সত্য বাণী ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেছিলেন।

তিনি বলেন, সৌদি আরবে হজের পর টঙ্গীতে দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সমাবেশ করার জন্য বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও অর্জন করেছিলেন। দেশবাসী যাতে স্বল্প খরচে সৌদি আরবে পবিত্র হজ পালন করতে পারে সেজন্য বঙ্গবন্ধু হিজবুল বাহার জাহাজ কিনেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে জাতির পিতার আন্তরিক উদ্যোগে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) সদস্যপদ লাভ করে।

তিনি বলেন, তার সরকার সারাদেশে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করে সমাজে ইসলামের প্রকৃত চেতনা ছড়িয়ে দিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। সরকার প্রতিটি জেলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অফিস স্থাপন এবং বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উন্নয়ন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী আলেম-ওলামা, ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের নামাজের সময় মসজিদে, বিশেষ করে জুমার নামাজের সময় সামাজিক হুমকি সম্পর্কে ওয়াজ করতে বলেন, যাতে যুবকরা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতি এবং অন্যান্য অভিশাপ থেকে দূরে থাকতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আলেম-ওলামাদের এমনভাবে ওয়াজ করা উচিত যাতে যুবকরা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ এবং মাদকের সাথে জড়িত না হয়।’

প্রধানমন্ত্রী এর আগে প্রথম ধাপে ২০২১ সালের ১০ জুন, দ্বিতীয় ধাপে ২০২৩ সালের ১৬ জানুয়ারি, তৃতীয় ধাপে গত ১৬ মার্চ এবং চতুর্থ ধাপে গত ১৭ এপ্রিল ৫০টি করে মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেন। অবশিষ্ট মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

মডেল মসজিদ এবং ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা সহ ওজু ও নামাজের জন্য আলাদা জায়গা রয়েছে।

এছাড়া হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র ও ইসলামিক লাইব্রেরি, অটিজম কর্নার, দাফনের আগে আচার ব্যবস্থা, গাড়ি পার্কিং সুবিধা, হিফজখানা, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা, ইসলামিক সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এবং ইসলামী দাওয়াতের জন্য কনফারেন্স রুম, ইসলামী বই বিক্রয় কেন্দ্র, মসজিদের সাথে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জন্য বোর্ডিং সুবিধা থাকবে মসজিদে।

‘এ’ ক্যাটাগরির অধীনে ৬৪টি জেলা ও সিটি করপোরেশন এলাকায় লিফট সুবিধা ও ২,৩৬০.০৯ বর্গমিটার প্রতিটি ফ্লোর স্পেসসহ প্রায় ৬৯টি চারতলা মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। ‘বি’ ক্যাটাগরির অধীনে প্রতিটি ১৬৮০.১৪ বর্গমিটার ফ্লোর স্পেসসহ ৪৭৫টি মসজিদ তৈরি করা হচ্ছে। এ ছাড়া উপকূলীয় অঞ্চলে ‘সি’ ক্যাটাগরির অধীনে প্রতিটি ২,০৫২.১২ বর্গমিটার ফ্লোর স্পেসসহ ১৬টি মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এবং এর সচিব এমডি এ হামিদ জমাদ্দার অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া।

অনুষ্ঠানে কক্সবাজার সদর উপজেলা ও খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার স্থানীয় সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তা, আলেম-উলামাসহ সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ওপর একটি ভিডিও-ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.