দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ মামলায় আত্মসমর্পন করতে যাচ্ছেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনুস। আগামীকাল রোববার (৩ মার্চ) তিনি আদলতে আত্মসমর্পন করে জামিন চাইবেন বলে নিশ্চিত করেছেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন।
ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, দুদকের মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়ার পর সেখানে হাজির হওয়ার জন্য প্রস্তুত ড. ইউনুস। এছাড়া শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালেও জামিন চাইতে হাজির হবেন তিনি।
শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে ড. ইউনুসসহ চারজনের হাজিরার তারিখ ধার্য আছে আগামীকাল রোববার। শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় তাদের জামিনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে এদিন। এ কারণে জামিন স্থায়ী করার আবেদন করা হবে এবার। আগামীকাল সকালে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে এবং দুপুরের দিকে ঢাকার সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইবেন ড. ইউনুস।
২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় গত ৩০ জানুয়ারি গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে দুদক। যা ঢাকার সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতে উপস্থাপন করা হবে আগামীকাল। অভিযোগপত্রে ড. ইউনুসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার আবেদন করা হয়েছে।
এর আগে গত বছরের ৩০ মে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী কল্যাণ তহবিলের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এই মামলা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে তহবিল থেকে ২৫ কোটি ২২ লাখ ছয় হাজার ৭৮০ টাকা লোপাটের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় এজাহারভুক্ত ১৩ আসামির সঙ্গে তদন্তে পাওয়া নতুন আরও একজনের নাম যুক্ত করা হয়েছে। দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেছিলেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়াও মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম, এস এম হুজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী ও জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান, ইউনিয়নের প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম ও দপ্তর সম্পাদক মো. কামরুল হাসান।
এ ব্যাপারে ঢাকার আদালতে দুদকের প্রসিকিউশন কার্যালয়ের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা সহকারী পরিদর্শক আক্কাস আলী জানান, ড. ইউনুসসহ ১৩ জনকে মামলায় পলাতক দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে গ্রামীন টেলিকমের পরিচালক পারভিন মাহমুদ জামিনে আছেন।
তিনি আরও বলেন, আগামী ৩ মার্চ এই মামলার ধার্য তারিখ রয়েছে। উক্ত তারিখে অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হবে কি না সে বিষয়ে আদেশ দেবেন আদালত। একইসঙ্গে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি সংক্রান্ত আদেশও দেওয়া হবে।
এছাড়া শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে করা আপিল মামলায় একইদিন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে হবে ড. ইউনুসসহ চারজনকে। গত ২৮ জানুয়ারি তাদের আপিল আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করা হয়। একইসঙ্গে পরবর্তী শুনানির তারিখ ৩ মার্চ ধার্য করে প্রত্যেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন আদালত। এ কারণেই আগামীকাল আসামিদেরকে আদালতে হাজির হয়ে জামিন বর্ধিত করার আবেদন করতে হবে।
এর আগে ১ জানুয়ারি ড. ইউনুসসহ চারজনকে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত। একইসঙ্গে প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সাজাপ্রাপ্ত অপর তিনজন হলেন গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।