এখন পর্যন্ত বিএনপিকে নিষিদ্ধ করার চিন্তা নেই

0
98
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক

সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বলেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কাদির কল্লোল

প্রশ্নঃ আপনাদের দলের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিকে আপনারা ‘বেআইনি’ দল বলে বক্তব্য দিচ্ছেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীও এমন বক্তব্য দিয়েছেন। আপনারা কি বিএনপিকে নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছেন?

আনিসুল হক: প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের অন্য নেতারা যে বক্তব্য দিচ্ছেন, তাঁরা সত্য তুলে ধরছেন। বিএনপি যে আন্দোলনের নামে অতীতে সহিংসতা করেছে এবং তার ধারাবাহিকতায় এখন অগ্নিসংযোগ–নাশকতা করছে, সেই সত্যটা তুলে ধরে বিএনপিকে বেআইনি বা সন্ত্রাসী দল বলা হচ্ছে। বিএনপির জন্ম কোথা থেকে, তা বলা হচ্ছে। রাজনৈতিক কারণে এসব বক্তব্য আসছে। তার মানে এই নয় যে আমরা বিএনপিকে নিষিদ্ধ করার কথা বলছি। এখন পর্যন্ত বিএনপিকে নিষিদ্ধ করার কোনো চিন্তা আমাদের নেই।

প্রশ্নঃ কিন্তু প্রতিপক্ষের প্রতি আপনাদের বক্তব্য আক্রমণাত্মক হচ্ছে। তখন অন্য সন্দেহ বা প্রশ্ন আসতে পারে কি না।

আনিসুল হক: এখানে কোনো প্রশ্ন বা সন্দেহের বিষয় নেই। বিএনপির কর্মকাণ্ড নিয়ে আমরা সত্য বক্তব্য দিচ্ছি। এখন সত্য যদি আক্রমণাত্মক হয়, তা হবে। সত্যটা বলতে হবে এবং সত্য বিশ্লেষণ করে জনগণ ঠিক করবে। যেমন আমরা নির্বাচন করছি। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য হলো কি না, সেটা জনগণ নির্ধারণ করবে।

প্রশ্নঃ বিএনপি অভিযোগ করে আসছে, সরকার প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন পার করতে পারলে আওয়ামী লীগ তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। আসলে নির্বাচনের পরে কি আপনারা বিএনপির ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেবেন?

আনিসুল হক: নির্বাচনের পরে দেখা যাবে। তবে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। ফলে কোনো দলকে নিশ্চিহ্ন করে দেব—এ কথা আমরা বলি না। কিন্তু ইতিহাসে দেখা গেছে, অনেক দল তাদের কর্মকাণ্ডের কারণেই অবলুপ্ত হয়ে যায়। এটা সেই দলের কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভর করে।

প্রশ্নঃ কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বিএনপির সব পর্যায়ের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলাগুলোর বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করা হচ্ছে। তাঁদের সাজা হচ্ছে।

আনিসুল হক: যে মামলাগুলোর বিচার শেষ হচ্ছে, এগুলো অনেক আগের বা পুরোনো মামলা। দীর্ঘ সময় ধরে মামলার কার্যক্রম চলার পর এখন বিচার শেষ হচ্ছে। মামলার দীর্ঘ জট কমাতে সব ধরনের মামলার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে রাজনীতির কোনো বিষয় নেই। বিচার বিভাগের কাজে সরকার হস্তক্ষেপ করে না।

প্রশ্নঃ আপনারা তো মামলাগুলো এগিয়ে নিচ্ছেন।

আনিসুল হক: মামলা আইনের গতিতে চলছে। এ ছাড়া একদিকে বলবেন মামলার জট লেগে আছে বা বিচারের প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে; আবার একই সঙ্গে বলবেন রাজনৈতিকভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এটা হওয়া উচিত নয়।

প্রশ্নঃ তবে পুরোনো মামলায় নতুন করে বিএনপির নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তার চলছে। আবার গ্রেপ্তারের পর নতুন মামলা দায়ের করা হচ্ছে। বিএনপির অভিযোগ, গত ২৮ অক্টোবর তাদের মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত দলটির ২০ হাজারের বেশি নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আনিসুল হক: বিএনপির এ সংখ্যা সঠিক নয়। আমি পুলিশের কাছে যা জেনেছি, তাতে গ্রেপ্তারের সংখ্যা ১০ থেকে ১২ হাজারের মতো হবে। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। কাউকে গ্রেপ্তার করা হলে তাঁকে সুনির্দিষ্ট মামলায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

প্রশ্নঃ আপনারা এখন ভোটের প্রচারণায় আছেন। আর বিএনপি ভোট বর্জন করে অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করছে। এর অংশ হিসেবে বিএনপি–সমর্থক আইনজীবীরা আদালত বর্জন করছেন।

আনিসুল হক: এর কোনো প্রভাব নেই। গ্রহণযোগ্য ভোট হবে। এখনো সময় আছে, মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মেনে নিয়ে বিএনপি যদি সঠিক রাজনীতি করে, তাহলে জনগণের কাছে জায়গা পেতে পারে। কিন্তু বিএনপি তো শুধু সন্ত্রাস করে। তারা ট্রেনে আগুন দিয়ে শিশু হত্যা করেছে। এমন কর্মকাণ্ড তো জনগণ মেনে নেবে না।

প্রশ্নঃ সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আনিসুল হক: আপনাকেও ধন্যবাদ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.