চলতি বছরের সেরা দশ গানের তালিকা তৈরি করছে বিবিসি। এই তালিকায় যেমন জায়গা পেয়েছে লেডি গাগা, ব্যাড বানির মতো প্রতিষ্ঠিত তারকার গান; তেমনই আছে চ্যাপেল রোন, অ্যাডিসন রের মতো তরুণ শিল্পীর সিঙ্গেলও। এসব গানে প্রেম, যৌনতা থেকে ট্যাক্স—শীর্ষ দশে জায়গা পাওয়া গানগুলোতে উঠে এসেছে যাপিত জীবনের নানা প্রসঙ্গ। তবে বছরের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া সিঙ্গেলগুলো সমালোচকদের খুব একটা টানেনি। জেনে নেওয়া যাক ২০২৫ সালের সেরা ১০ সিঙ্গেলের গল্প।
১০. ওয়েনসডে, ‘এলডারবেরি ওয়াইন’
মার্কিন অল্টারনেটিভ রক ব্যান্ড ওয়েনসডের ‘ব্লিডস’ অ্যালবামের ‘এলডারবেরি ওয়াইন’ গানটি মুগ্ধ করেছে সমালোচকদের। ব্যান্ডের ভোকালিস্ট কার্লি হার্টসম্যানের কণ্ঠে গানটি এমনিতে শুনতে নিরুত্তাপ মনে হলেও এতে রয়েছে চাপা অস্বস্তি। গানটি শুনলে মনে হয়, গায়িকা যেন অস্বস্তিকর কোনো সত্য বলতে চাইছেন।

গানে এলডারবেরি ফলকে রূপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। এলডারবেরি ফল ঠিকভাবে ব্যবহার করলে ওষুধের কাজ করে আর ভুল করলেই হয়ে যায বিষ। গানটি এমন একটি সম্পর্কের টানাপোড়েন তুলে ধরে, এটা যে বিষাক্ত তা জেনেও ছেড়ে যেতে পারছেন না।
৯. কেলানি, ‘ফোল্ডেড’
৩০ বছর বয়সী এই মার্কিন গায়িকা তরুণদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়। চলতি বছর ‘ফোল্ডেড’ গানটি ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের বড় অর্জন; গানটি দিয়ে প্রথমবারের মতো বিলবোর্ড হট হান্ড্রেডের সেরা দশে জায়গা পান। গানটি সম্পর্কের বিচ্ছেদের সময়ের আবেগ আর আকুলতাকে তুলে ধরেছে। অ্যান্ড্রে হ্যারিয়ের সঙ্গে যৌথভাবে গানটি লিখেছেন কেলানি।

এর কথায় কিছু উপমার ব্যবহার বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এক জায়গায় গায়িকা প্রাক্তন প্রেমিকের কাপড় ভাঁজ করার সঙ্গে সম্পর্কের টানপোড়েনের তুলনা টেনেছেন।
গানে কেলানি স্বীকার করেন, সম্পর্ক ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তিনি একটু বেশিই প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। গানের কথায়, ‘আমি জানি, আমার চলে যাওয়ার দরকার ছিল না/শুধু একটু সময় চাইলেই হতো।’
৮. অ্যাডিসন রে, ‘হেডফোনস অন’
টিকটক থেকে তারকাখ্যাতি পাওয়া এই মার্কিন গায়িকার নতুন গানটি বছরজুড়েই আলোচনায় ছিল। গত ১৮ এপ্রিল মুক্তি পায় গায়িকার প্রথম অ্যালবাম ‘অ্যাডিসন’-এর সিঙ্গেলটি। মুক্তির পরেই ঢুকে পড়ে বিলবোর্ড হট হান্ড্রেড-এ।

প্রাণবন্ত আর ছন্দময় গানটি শুনলে মনে হবে, আপনি যেন মিনিট তিনেকের জন্য বাস্তব দুনিয়া থেকে ছোট একটি বিরতি নিলেন। অ্যাডিসন রের কণ্ঠ আর হালকা ইলেকট্রনিক বিট শ্রোতাকে এক আনন্দময় পরিবেশে নিয়ে যায়।
এ গানের মূল ভাব হলো সংগীতের মাধ্যমে ছোট মুহূর্তের স্বস্তি উপভোগ করা। গানটি মনে করিয়ে দেয়, কখনো কখনো শুধু সংগীতের মধ্যে হারিয়ে গেলেও জীবনকে নতুনভাবে অনুভব করা যায়।
৭. আমারে, ‘এসএমও’
ঘানাইয়ান-আমেরিকান গায়িকার ‘এসএমও’ গানটিও প্রাণবন্ত। এর ছন্দ এমন যে শোনার সঙ্গে সঙ্গে শ্রোতাকে টেনে নেয়। এর সংগীতের মধ্যে আফ্রিকান ও ব্রাজিলিয়ান ছন্দের প্রভাবও রয়েছে। গানটির ‘গিঙ্গা মি’ শব্দবন্ধ দুটি অর্থ বহন করে।
নাইজেরিয়ান ‘গিঙ্গা মি’ অর্থ ‘উদ্দীপিত করো’ আর ব্রাজিলিয়ান ক্যাপোইরা মার্শাল আর্টে ‘গিঙ্গা’ হলো নাচের মতো পা দোলানো। গানে গানে গায়িকা জীবনকে আরও প্রাণবন্তভাবে অনুভব করতে ও আনন্দে মেতে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন।

গানটি মুক্তির সময় দেওয়া সাক্ষাৎকারে শিল্পী বলেছিলেন, ‘এই গ্রীষ্মে আমি শুধু এটুকুই চাই—মানুষ নাচুক, অনুভব করুক। আমার কাজ একটাই—সবাইকে নাড়িয়ে দেওয়া আর চঞ্চলতাকে ভেতরে ছড়িয়ে দেওয়া।’
৬. ব্যাড বানি, ‘ব্যালে ইনওলবিদাব্লে’
এই সময়ের আলোচিত পুয়ের্তো রিকান গায়কের গানটি বছরজুড়েই ছিল আলোচনায়। ছন্দময় সালসা গানটি রেকর্ড করা হয়েছে পুয়ের্তো রিকোর এস্কুয়েলা লিব্রে দে লা মিউজিকার শিক্ষার্থী সঙ্গে লাইভ পারফরম্যান্সে।

সমালোচকেরা বলছেন কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের জয়জয়কারের মধ্যেও গানটিতে সবার পারফরম্যান্স যেন নির্ভেজাল এক প্রয়াস। তবে ভিডিওতে ছন্দময় নাচ আর উদ্যাপনের আবহের আড়ালে রয়েছে এক ভাঙা হৃদয়ের গল্প। কারণ, এই নাচের মধ্যেই শিল্পীর মনে পড়ে সেই প্রাক্তন প্রেমিকাকে, যিনি তাকে নাচ শিখিয়েছিলেন! ‘আমি ভেবেছিলাম তোমার সঙ্গেই বুড়ো হব,’ আফসোস করে গেয়ে ওঠেন ব্যাড বানি।

৫. হান্টার এক্স, ‘গোল্ডেন’
চলতি বছর নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া আলোচিত অ্যানিমেশন মিউজিক্যাল সিনেমা ‘কে-পপ ডেমন হান্টার্স’-এর গান এটি। তবে গানটি কিন্তু এই সিনেমার জন্য লেখা হয়নি। সে যাই হোক, সিনেমাটি মুক্তির পর এ গান যেভাবে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পেল, তা যেন অবিশ্বাস্য!
এর উড়ন্ত কোরাস হয়ে উঠল স্বপ্নপূরণের পথে ছুটে চলা মানুষের গণসংগীত। গানটির কথা ও সুর আশা, উচ্ছ্বাস আর নতুন সম্ভাবনার কথা বলে। সমালোচকেরা বলছেন, সামনের অস্কারে গানটি পুরস্কার পেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
৪. চ্যাপেল রোন, ‘দ্য সাবওয়ে’
গত ৩১ জুলাই মুক্তির পর থেকেই আলোচনায় ছিল এই সময়ে বহুল চর্চিত তরুণ মার্কিন গায়িকা চ্যাপেল রোনের সিঙ্গেলটি। চ্যাপেলের গান মানেই নাটকীয়তা আর সৎ আবেগের প্রকাশ; এটিও ব্যতিক্রম নয়।

‘দ্য সাবওয়ে’ শহরের জীবনের আবেগের চিত্র তুলে ধরে। নিউইয়র্কের রাস্তাঘাট আর সাবওয়ের ভেতর যেন এক বিচ্ছেদের মানচিত্র এঁকে দেয় এই গান। যেখানে শত শত অপরিচিত মানুষের ভিড়েও শোক আর নিঃসঙ্গতা পেয়ে বসে। এর মধ্যেই আগামী গ্র্যামি পুরস্কারকে মনোনয়ন পেয়েছে এটি, পুরস্কার পেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

৩. লেডি গাগা, ‘অ্যাব্রাক্যাডাব্রা’
আপাতদৃষ্টে অর্থহীন লিরিক্স, রহস্যময় সিন্থেসাইজারের সুর, গথিক কোরাস —লেডি গাগার গানের সব বৈশিষ্ট্যই আছে এতে। চলতি বছর মুক্তি পাওয়া গায়িকার ষষ্ঠ স্টুডিও অ্যালবাম ‘মেহেম’-এর গান এটি।
সমালোচকেরা এই গানে যেন পুরোনো গাগাকে খুঁজে পেয়েছেন; সেই লেডি গাগা যার অদ্ভুত মাদকতাময় কণ্ঠ সব ভুলিয়ে দেয়। গানের কথায় কী আছে সেটার চেয়েও যেন গায়কিতে মজে যান শ্রোতারা।
২. অলিভিয়া ডিন, ‘ম্যান আই নিড’
বয়স মোটে ২৬; এর মধ্যেই বিশ্বব্যাপী নিজের আলাদা শ্রোতা তৈরি করেছেন এই ব্রিটিশ গায়িকা। ২০২৩ সালে আলোচিত অ্যালবাম ‘মেসি’র পর চলতি বছর এসছে তাঁর দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘দ্য আর্ট অব লাভিং’; সেই অ্যালবামেরই গান এটি।
মুক্তির পর বিশ্বজুড়ে টপ চার্টে ঝড় তুলেছিল সিঙ্গেলটি, যুক্তরাষ্ট্রে ছিল বিলবোর্ডের চারে ছিল।

গানটি সম্পর্ক আর অনুভূতির গল্প বলে। অলিভিয়া ‘ম্যান আই নিড’-এ বলেছেন, কখনো কখনো আমরা জানি কীভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করা উচিত, কিন্তু আবার ভয় পাই। গানে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, সম্পর্কে সামান্য বোঝাপড়া থাকলেই প্রেম আরও মজবুত হয়।
১. পিঙ্কপ্যানন্থরেস, ‘ইলিগ্যাল’
আসল নাম ভিক্টোরিয়া বেভারলি ওয়াকার হলেও ২৪ বছর বয়সী এই ব্রিটিশ গায়িকা নিজেকে পিঙ্কপ্যান্থরেস নামেই পরিচিত করিয়েছেন। ‘ফ্যান্সি দ্যাট’ মিক্সড টেপের সিঙ্গেলটি মুক্তি পায় গত ৬ জুন।

পপসংগীতে সবচেয়ে ব্যবহৃত ক্লিশেগুলোর একটি হলো, ভালোবাসায় পড়া নেশার মতো। কিন্তু গানটিতে এই ধারণায় নতুনত্ব এনেছেন। ‘ইলিগ্যাল’ গানটি প্রেমের জটিলতা আর সম্পর্কের অস্বস্তিকর মুহূর্তগুলো সামনে নিয়ে আসে। প্রেমে পড়ার রোমাঞ্চ, আকর্ষণ এবং কখনো কখনো সীমারেখা অতিক্রম করার অনুভূতি গানে তুলে এনেছেন গায়িকা। গানটি দেখায় প্রেম শুধু মধুর নয়, মাঝে মাঝে অস্বস্তিকর মুহূর্তও নিয়ে আসে।
পৃথা পারমিতা নাগ
ঢাকা


















