১৭ কিলোমিটারে ৪১ বাঁক, শুকানো হচ্ছে খড়

0
91
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম- দহগ্রাম আঞ্চলিক সড়কের বিভিন্ন স্থানে বোরো ধান মাড়াই করার পর খড় শুকাতে দেওয়া হয়। এতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে ওই সড়কের ভুতেরবাড়ি গ্রামে

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম-দহগ্রাম আঞ্চলিক সড়কটি এমনিতেই আঁকাবাঁকা। এই সড়কের ১৭ কিলোমিটারে রয়েছে ৪১টি বাঁক। এ কারণে এমনিতেই এই সড়কে যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। সম্প্রতি এই সড়কে ভুট্টা ও খড় শুকানো হচ্ছে। এতে ওই সড়কে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, পাটগ্রাম-দহগ্রাম আঞ্চলিক সড়কটি দহগ্রাম ইউনিয়নের শেষ গ্রাম আঙ্গরপোতা পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার সড়ক। ওই সড়কে রয়েছে ৪১টি মোড়। ওই মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে খেত থেকে ধান কেটে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। পাশেই ওই সব ধান যন্ত্র দিয়ে মাড়াই করা হয়েছে। মাড়াই শেষে ধান বাড়িতে নিয়ে গেলেও খড় সড়কের ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুকানো হয়। এরপর সড়কের দুই পাশেই স্তূপ করে রাখা হয়। এতে সড়কের বিভিন্ন স্থান সরু হয়ে গেছে। এর মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন।

ওই সড়কের পাশেই ভূতেরবাড়ি গ্রাম। ওই গ্রামের আবদুল কাদের সড়কে খড় শুকান। এখানে খড় শুকানোর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাড়ির উঠানে জায়গা কম, তাই সড়কে খড় শুকাচ্ছি। দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য সড়কের দুই পাশে খড় রেখে মাঝের স্থান ফাঁকা করে দিচ্ছি।’

বাউরা ইউনিয়নের ভুট্টা ব্যবসায়ী সড়কের দুই পাশে খড়ের স্তূপ (পালা) দেখিয়ে বলেন, এই খড়ের স্তূপের কারণেই ট্রাক ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এমনিতেই সড়কে অনেক বাঁক থাকায় যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে।

কৃষকদের সড়কে খড় ও ভুট্টা না শুকিয়ে সড়কের পাশে ঢালে শুকানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।খালিদ সাইফুল্লাহ সরদার, নির্বাহী প্রকৌশলী, সওজ, লালমনিরহাট কার্যালয়

দহগ্রামের তিনবিঘা করিডর গেট দেখতে আসা গাইবান্ধার জয় ও রংপুরের সফিকুল আসলাম বলেন, প্রতিদিন দেশের কোনো না এলাকা থেকে পরিবার নিয়ে অনেকে এই আন্তর্জাতিক তিনবিঘা করিডর গেট দেখতে আসেন। কিন্তু সড়কের অনেক স্থানে বাঁক আছে এবং সড়কের ওপর খড় শুকানো হচ্ছে। এ কারণে এই সড়ক দিয়ে যানবাহন চালানো খুবই কঠিন কাজ। যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

পানবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, মৌসুমে ধানের খড় বিছানো সড়কে মোটরসাইকেল চালানো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছর তিনি ভেজা খড়ের কারণে পিছলে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন।

পাটগ্রাম–দহগ্রাম আঞ্চলিক সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান সহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, সড়কটি এমনিতে ব্যস্ততম। তার ওপর রয়েছে অনেক আঁকাবাঁকা মোড়। কিন্তু সড়কে ধান মাড়াই ও শুকানোর কাজ সারা দিন চলে। তাই ঠিকমতো গাড়ি চালানো যায় না। বিশেষ করে ভেজা খড়ের ওপর দিয়ে গাড়ি চালানো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের লালমনিরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ সাইফুল্লাহ সরদার বলেন, ‘গত বছরও ওই সড়কে সরেজমিনে সড়কের ওপর এভাবে ধানের খড় ও ভুট্টা না শুকানোর বিষয়ে সড়কের আশপাশের কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। সড়কে খড় ও ভুট্টা শুকানোর কারণে মানুষ দুর্ঘটনার শিকার হয়ে সারা জীবনের জন্য পঙ্গুও হতে পারেন। তাই কৃষকদের সড়কে খড় ও ভুট্টা না শুকিয়ে সড়কের পাশে ঢালে শুকানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’ সড়কের বাঁকগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, আসলে সড়কটি জেলা পরিষদের কাছ থেকে পাওয়া। তাই সড়কে অনেক বাঁক রয়েছে। বাঁকগুলো সোজা করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক গত মঙ্গলবার বলেন, সড়কে খড় না শুকানোর ব্যাপারে জনপ্রতিনিধিদের জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। তা ছাড়া সড়কের পাশে খড়ের স্তূপ সরানোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.