১১ বছর আগে উপজেলার মর্যাদা পেলেও নেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। মাত্র চারটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র দিয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা।
পটুয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালী। ২০১২ সালে রাঙ্গাবালীকে উপজেলা ঘোষণা করা হলেও ১১ বছরে সেখানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মিত হয়নি। উপজেলাবাসীর ভরসা ছয়টি ইউনিয়নের চারটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। কিন্তু পদ থাকলেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে কোনো চিকিৎসক নেই। চারটি কেন্দ্রের ২৮টি পদের ১৬টিই শূন্য।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, রাঙ্গাবালীতে চিকিৎসকদের আবাসনের ব্যবস্থা নেই। এ জন্য চিকিৎসকেরা সেখানে থাকতে চান না। তাঁরা আপাতত দুজন চিকিৎসককে সপ্তাহে দুই দিন ওই এলাকায় গিয়ে সেবা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গাবালীতে কোনো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে না থাকায় পাশের গলাচিপা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় থেকে সেখানকার স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। রাঙ্গাবালীর ছয়টি ইউনিয়নের মধ্যে চারটিতে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র আছে। বাকি দুই ইউনিয়নে স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। প্রতিটির নিজস্ব ভবন আছে। এর মধ্যে একটি তিন মাস আগে উদ্বোধন হলেও লোকবল না থাকায় এখনো সেবা কার্যক্রম চালু হয়নি।
গলাচিপা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের অফিস সহকারী জালাল উদ্দিন জানান, প্রতিটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সাতটি পদ থাকে। একজন চিকিৎসা কর্মকর্তা, দুজন উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা, একজন নিরাপত্তাকর্মী এবং একটি আয়ার পদ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাঙ্গাবালীর চারটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তার চারটি পদই ফাঁকা। উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তার আটটি পদের মধ্যে চারটি, ফার্মাসিস্ট চারটি, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকার চারটি পদের মধ্যে দুটি, নিরাপত্তাকর্মীর চারটি পদের মধ্যে তিনটি এবং আয়ার চারটি পদের মধ্যে তিনটি পদ শূন্য আছে। সব মিলিয়ে ২৮টি পদের মধ্যে চিকিৎসকসহ ১৬টি পদই খালি পড়ে আছে।
স্বাস্থ্য বিভাগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৯ মার্চ গলাচিপা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে চিঠি দিয়ে রাঙ্গাবালী সদর ও ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নে দুজন চিকিৎসা কর্মকর্তাকে সপ্তাহে দুই দিন রোগী দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁরা এখনো যোগদান করেননি। বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নে ২৮ জানুয়ারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও লোকবল না থাকায় কার্যক্রম শুরু হয়নি। অন্য তিনটির মধ্যে রাঙ্গাবালী সদরে কোনো চিকিৎসক ও ফার্মাসিস্ট নেই। চর মোন্তাজ ইউনিয়নে শুধু একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আছেন। ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নে একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ও একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা কর্মরত আছেন।
সম্প্রতি বড়বাইশদিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, কেন্দ্রটি বন্ধ। দরজায় তালা ঝুলছে। ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের টুঙ্গীবাড়িয়া গ্রামের মোসাদ্দেক তালুকদার বলেন, ‘অনেক আশা নিয়ে ছিলাম, এলাকায় চিকিৎসা নিতে পারব। কিন্তু সেখান থেকে আমরা কোনো সেবা পাচ্ছি না। উপজেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সেখানেও সব সময় যাওয়া সম্ভব হয় না।’
ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে প্রথমে কাউকে পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা ফিরোজ মাহমুদ সেখানে উপস্থিত হন। তিনি বলেন, কেন্দ্রটিতে চিকিৎসকসহ সাতটি পদ থাকলেও তাঁরা মাত্র দুজন কাজ করছেন। পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা আফরোজা জাহান ওষুধ আনতে গলাচিপায় গেছেন। তাঁদের কেন্দ্রে সাধারণত মা ও শিশু, কিশোর-কিশোরী এবং সাধারণ রোগীরা সেবা নিতে আসেন।
ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রামের শাহানাজ বেগম (৭০) হাঁপানির চিকিৎসা নিতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘বড় ডাক্তার নাই। গরিব মানুষ, পটুয়াখালী যাইয়া ডাক্তার দেহাইতে অনেক টাকা খরচ হইবে। এই জায়গায় একজন ডাক্তার থাকলে হেরে দেহাইতে পারতাম।’
ফিরোজ আলম বলেন, চিকিৎসা কর্মকর্তা না থাকায় জটিল রোগীদের উপজেলা ও জেলা সদরে গিয়ে চিকিৎসক দেখানোর পরামর্শ দেন তাঁরা। জনবল–সংকটের পরও তাঁরা তাঁদের সাধ্যমতো সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, মার্চ মাসে তাঁর কেন্দ্র থেকে ৩৫০ জন রোগী সেবা নিয়েছেন। এর অর্ধেকেরও বেশি নারী।
গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কাজী আবদুল মমিন বলেন, রাঙ্গাবালী বিচ্ছিন্ন একটি উপজেলা। তাঁরা চিকিৎসা কর্মকর্তা পাঠিয়ে দ্বীপবাসীর কাছে সেবা পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।
পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন এস এম কবির হাসান বলেন, রাঙ্গাবালীতে চিকিৎসকদের আবাসনের ব্যবস্থা না থাকায় চিকিৎসকদের সেখানে রাখা যাচ্ছে না। তারপরও তাঁরা দুজন চিকিৎসককে সপ্তাহে দুই দিন যাতে রাঙ্গাবালীতে গিয়ে সেবা দিতে পারেন, সেই উদ্যোগ নিয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মিত হলে এ সংকট থাকবে না।