যুগপৎ আন্দোলনে শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষ করে ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে ‘যৌথ ঘোষণা’ দিয়ে ‘এক দফার’ আন্দোলনে যাবে বিএনপি। তবে যৌথ ঘোষণা বা এক দফার আন্দোলনের সূচনা কীভাবে দেওয়া হবে, জনসমাবেশে, নাকি সংবাদ সম্মেলন করে, সেটি এখনো ঠিক হয়নি। এ বিষয়ে শরিক দলগুলোর পক্ষ থেকে দুই রকম প্রস্তাবই এসেছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, ১০ জুলাই সোমবার গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক আছে। ওই বৈঠকে সম্মিলিত বিরোধী দলের ‘যৌথ ঘোষণাপত্র’ নিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে আলোচনা হবে। এরপর রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা আছে। সেখানেই যৌথ ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করে সেটি কখন, কোন প্রক্রিয়ায় তারা ঘোষণা করবে, তা ঠিক করা হবে।
বিএনপির উচ্চপর্যায়ের সূত্রগুলো বলছে, ১৫ জুলাইয়ের মধ্যেই এক দফার আন্দোলনের ঘোষণা দিতে চায় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এর কারণ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নির্বাচনবিষয়ক ৬ সদস্যের তথ্যানুসন্ধানী যে মিশনটি ১৬ দিনের সফরে আজ শনিবার ঢাকায় আসছে, তাদের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দলের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগেই বিএনপি বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনের ঘোষণাটি দিতে চায়।
এ বিষয়ে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘যতটুকু ধারণা করি, এই মাসের মাঝামাঝির আগেই এক দফার ঘোষণা আসবে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এক দফার আন্দোলনের ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিএনপি ইইউ প্রতিনিধিদলের কাছে ‘বার্তা’ পৌঁছাতে চায় যে তারা এই সরকারের পতনের আন্দোলনে চূড়ান্ত ধাপে নেমেছে।
ইইউ প্রতিনিধিদলটি আজ ৮ জুলাই ঢাকায় আসছে। ২৩ জুলাই তারা ঢাকা ছাড়বে। এ সময়ের মধ্যে তারা সরকার, নির্বাচন কমিশন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে কথা বলবে। এর মধ্যে প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে দুই দফায় তারা বৈঠক করবে।
যদিও বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের সময় এখনো জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, সরকার, নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন পক্ষের বৈঠকের পর বিএনপির সঙ্গে বৈঠক হবে। সেটি ১৫ জুলাইয়ের আগে হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের কাছ থেকে জানা গেছে। এ ছাড়া আগামীকাল ৯ জুলাই সিলেট ও ১৭ জুলাই খুলনায় বিএনপির ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ রয়েছে। ২২ জুলাই হবে ঢাকায়।
যতটুকু ধারণা করি, এই মাসের মাঝামাঝির আগেই এক দফার ঘোষণা আসবে।
ইতিমধ্যে বিএনপি তাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে শরিক দুটি জোট ও দুটি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে। গতকাল গণফোরাম ও পিপলস পার্টির সঙ্গে বৈঠক হয়। এর আগে ১২ দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠকে সব দল সরকার পতনের লক্ষ্যে এক দফার ঘোষণায় যেতে একমত হয়। এর বাইরে গণতন্ত্র মঞ্চ, বাম গণতান্ত্রিক জোট, এলডিপি, লেবার পার্টি, গণ অধিকার পরিষদের (দুই অংশ) সঙ্গে বৈঠক বাকি আছে।
বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, ১০ জুলাই গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠকের আগেই বাকি জোট ও দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা হবে।
তবে এ পর্যন্ত আলোচনায় এক দফার আন্দোলনের ঘোষণা এক মঞ্চ থেকে দেওয়া হবে, নাকি যুগপৎভাবে ঘোষণা করা হবে, তা নিয়ে দ্বিধা দেখা দিয়েছে। বেশির ভাগ দল ঢাকায় বড় জনসভা করে যৌথ ঘোষণা এবং এক দফার আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ক্ষেত্রে অনেকের ভিন্নমতও আছে। কারণ, বিএনপির সঙ্গে এক মঞ্চ থেকে ঘোষণা দেওয়া হলে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর গুরুত্ব বাড়বে। কিন্তু সরকারবিরোধী আরও যেসব দল আছে, যারা সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে মাঠে আছে, তাদের আলাদা করে দেওয়া হবে।
আমরা খুব শিগগির চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করব। এবারের যে আন্দোলন হবে, এ আন্দোলন হবে চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলন।
এ বিষয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা বলেন, চলমান আন্দোলনকে একটি গণ-আন্দোলন বা জাতীয় রূপ দিতে চাইলে বিরোধী দলগুলোকে এক মঞ্চে ওঠার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে। রাজপথ থেকেই সব দলের বোঝাপড়ার মধ্য দিয়েই এক মঞ্চে উঠলে আন্দোলনে ভালো ফল আসবে বলে মনে করেন এই নেতা।
বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলনে সরকারবিরোধী সব পক্ষের সমর্থন চাইবে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এই সরকারের অধীন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে না—এমন ঘোষণা দেওয়া দলগুলোকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেবে বিএনপি। এ বিষয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা খুব শিগগির চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করব। এবারের যে আন্দোলন হবে, এ আন্দোলন হবে চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলন।’