‘ইংল্যান্ডের ক্রিকেট সংস্কৃতিতে পচন’—গভীরভাবে মর্মাহত স্টোকস

0
147
বেন স্টোকস

অ্যাশেজের মাঝেই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে ‘দ্য ইনডিপেনডেন্ট কমিশন ফর ইকুইটি ইন ক্রিকেট (আইসিইসি)’। বর্ণবাদ, ধর্মীয় বিদ্বেষ, নারী ক্রিকেটারদের যৌন হয়রানি, নারী ও পুরুষ ক্রিকেটারদের বেতন-ভাতায় চূড়ান্ত বৈষম্য—এসব মিলিয়ে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট সংস্কৃতি পচে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। বেন স্টোকস তাতে ‘গভীরভাবে মর্মাহত।’ অ্যাশেজে দ্বিতীয় টেস্টের আগে এ নিয়ে কথা বলেছেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক।

২০২১ সালের নভেম্বরে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) এই কমিশন (আইসিইসি) গঠন করে। প্রতিবেদনে ৪৪টি সুপারিশ করেছে কমিশন। প্রথম সুপারিশ হচ্ছে নিজেদের ব্যর্থতার জন্য ইসিবির সবার কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে এবং অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে বর্ণবাদ, লিঙ্গবৈষম্য, অভিজাততন্ত্র ও শ্রেণিভিত্তিক বৈষম্য খেলাটিতে ছিল এবং এখনো আছে।

ক্রিকেট সংস্কৃতিতে পচন, এটা সবার খেলা নয়

পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত ইয়র্কশায়ারের সাবেক অফ স্পিনার আজিম রফিক বর্ণবাদের অভিযোগ তোলার পর এই কমিশন গঠন করে ইসিবি। রফিক আদালতে বলেছিলেন, জাতিগত ও ধর্মীয় বিদ্বেষের কারণে তাঁর ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে বলে বিশ্বাস করেন। আইসিইসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রফিকের ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার আগপর্যন্ত ইসিবি বর্ণবাদ নিয়ে মোটেও সোচ্চার ছিল না। এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর ইসিবির পক্ষ থেকে ক্ষমাও চেয়েছেন চেয়ারম্যান রিচার্ড থম্পসন।

লর্ডসে আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় টেস্টের আগে এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কথা বলেছেন স্টোকস, ‘এই খেলার সঙ্গে জড়িত যেসব মানুষ অতীতে বাজে আচরণের জন্য নিজেদের অবাঞ্চিত মনে করতে বাধ্য হয়েছেন, তাদের সেসব অভিজ্ঞতার জন্য আমি গভীরভাবে মর্মাহত। ক্রিকেট এমন একটি খেলা যেখানে সব রকম বৈচিত্র থাকতে হয়। এটা ছাড়া খেলাটা এখন এই উচ্চতায় উঠে আসতে পারত না।’

ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল
ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলরয়টার্স

স্টোকস নিজের উদাহরণ টেনে বলেছেন, ‘সবার গল্পই আলাদা। আমি বেন স্টোকস, জন্ম নিউজিল্যান্ডে—রাস্ট্রীয় শিক্ষাব্যবস্থায় যে ১৬ বছর বয়সেই স্কুল থেকে ঝরে পড়েছিল শারীরিক শিক্ষায় (পিই) মাত্র একটি জিসিএসই পেয়ে। এভাবে কথা বলার জন্য আমাকে ব্যাকরণ শেখা ও উচ্চারণেও সাহায্য নিতে হয়েছে। কিন্তু সেই আমি এখন ইংল্যান্ডের ছেলেদের জাতীয় দলের টেস্ট অধিনায়ক।’

ইসিবি চেয়ারম্যান রিচার্ড থম্পসন এর আগে ক্ষমা চেয়ে বলেছেন, ‘ইসিবি ও খেলাটির নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে আমি তাঁদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যাঁরা কখনো না কখনো ক্রিকেট থেকে ছিটকে পড়েছেন এবং যাঁদের এই অনুভূতি দেওয়া হয়েছে যে ক্রিকেট তাঁদের জন্য নয়।’

হারের চিন্তা মাথায়ই আসেনি কামিন্সের, দর্শকদের আনন্দ দিয়ে খুশি স্টোকস

আইসিইসির প্রতিবেদন প্রকাশের পর ইসিবি কিছু ব্যবস্থাও নিয়েছে। বর্ণবাদ নিয়ে আজিম রফিকের অভিযোগ তাঁর সাবেক ক্লাব ইয়র্কশায়ার যেভাবে মোকাবিলা করেছে ইসিবি তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। কাউন্টি দলটিকে ৫ লাখ পাউন্ড জরিমানার সুপারিশ করেছে ইসিবি। এ ছাড়াও এই মৌসুমে তিনটি প্রতিযোগিতায় ইয়র্কশায়ারের পয়েন্ট কাটার সুপারিশও করা হয়েছে। গত বছর ইয়র্কশায়ার চারটি অভিযোগের ভিত্তিতে নিজেদের দোষ স্বীকার করেছিল।

আগেভাগে ইনিংস ঘোষণা করে স্টোকস কি ভুল করেছেন

এই চারটি অভিযোগের ভিত্তিতে ক্লাবটির জরিমানার অংক ভাগ করা হয়েছে—রফিকের বর্ণবাদের অভিযোগ ভালোভাবে তদন্ত না করার জন্য ১ লাখ পাউন্ড, তথ্য–উপাত্ত ধ্বংসের জন্য ১ লাখ পাউন্ড, বর্ণবাদের অভিযোগে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য দেড় লাখ পাউন্ড এবং আরও দেড় লাখ পাউন্ড জরিমানার সুপারিশ করা হয়েছে ক্লাবে বর্ণবাদী ভাষা ব্যবহারের জন্য। তবে এর মধ্যে সাড়ে ৩ লাখ পাউন্ড স্থগিত জরিমানা এবং বাকিটা কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.