১১২৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক অর্থমন্ত্রী কামালসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

0
11
সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম হাজারী

মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানিতে সরকার নির্ধারিত অর্থের চেয়ে ৫ গুণ বেশি অর্থ আদায় করে ১ হাজার ১২৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে ১২টি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীকে আসামি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আসামির তালিকায় সাবেক অর্থমন্ত্রী ও তার পরিবার, নিজাম হাজারী, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদউদ্দিন চৌধুরী এবং সাবেক সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদের ১২ রিক্রুটিং এজেন্সির ৩২ মালিক-কর্মকর্তার নাম রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সরকার নির্ধারিত ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার স্থলে অতিরিক্ত পাঁচগুণ অর্থ গ্রহণ করে ৬৭ হাজার ৩৮০ জন প্রবাসী থেকে ওই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।

আসামিরা হলেন-মেসার্স ওরবিটাল এন্টার প্রাইজের মালিক আ হ ম মোস্তফা কামাল ওরফে লোটাস কামাল ও তার স্ত্রী কাশমিরি কামাল। প্রতিষ্ঠানটি ৬ হাজার ২৯ কর্মীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ১০০ কোটি ৯৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা নিয়েছে। আর আ হ ম মোস্তফা কামাল ও তার মেয়ে নাফিসা কামালের আরেক প্রতিষ্ঠান ওরবিটাল ইন্টারন্যাশনাল অর্থ আত্মসাৎ করেছে। তারাও পৃথক আসামি হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান ২৯৯৫ জন শ্রমিকের কাছ থেকে ৫০ কোটি ১৬ লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায় করে।

স্নিগ্ধা ওভারিসিজের মালিক ফেনী-২ আসনের সাবেক এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী, তার স্ত্রী নুরজাহান বেগমকেও আসামি করা হয়েছে। এছাড়া এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শেখ আব্দুল্লাহ, জাহাঙ্গীর আলম, এম. আমিরুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন ও জিয়াউর রহমান ভুঁইয়া। প্রতিষ্ঠানটি ৬৬৫৭ জন শ্রমিকের কাছ থেকে ১১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা বেশি আদায় করেছে।

বিনিময় ইন্টারন্যাশনালের মালিক আবদুস সোবহান ভুঁইয়া (চৌদ্দগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান) ও তার স্ত্রী তাসলিমা আক্তার। প্রতিষ্ঠানটি ৫৪৫৮ ব্যক্তির কাছ থেকে ৯১ কোটি ৪২ লাখ টাকার অর্থ বেশি আদায় করেছে।

ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী ও ফেনী ৩ আসনের এমপি লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী তার মেয়ে তাসনিয়া মাসুদও আসামি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল মুকিত, মেহবুবা আফতাব সাথি আসামি হয়েছেন। তারা ৭১২৪ জন শ্রমিকের কাছ থেকে ১১৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা বেশি অর্থ আদায় করেছেন।

মেসার্স ইউনিক ইস্টার্ন (প্রাঃ) লি. এর স্বত্বাধিকারী নুর আলী ও তার স্ত্রী সেলিনা আলী ও মেয়ে নাবিলা আলী ছাড়াও আসামি হয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন আহমেদ ও খোন্দকার শওকত হোসেন। প্রতিষ্ঠানটি ৩৭৮৮ জন শ্রমিকের কাছ থেকে ৬৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায় করেছে।

ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল লি. এর মালিক মোহাম্মদ রুহুল আমিন ও তার স্ত্রী লুৎফুর নেছা শেলী মামলায় আসামি হয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটি ৭৭৮৭ জন শ্রমিকের কাছ থেকে ১৩০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায় করেছে।

ঢাকা ২০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও মেসার্স আহমদ ইন্টারন্যাশনালের মালিক বেনজীর আহমদ আসামি হয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটি ৮৫৯২ জন শ্রমিকের কাছ থেকে ১৪৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেছে।

বি এম ট্রাভেলস লি. স্বত্বাধিকারী ও বাড্ডার সাবেক কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী মৌসুমি আক্তার আসামি হয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটি ৮০৯৩ জন শ্রমিকের কাছ থেকে ১৩৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায় করেছে।

বি এন এস ওভারসিজ লি. এর মালিক ও ইঞ্জি. ইশতিয়াক আহমেদ সৈকত যিনি সাবেক যুবলীগ নেতা আবুল বাশারের পুত্র আসামি হয়েছেন। সৈকতের স্ত্রী মিসেস নসরুন নেছা হয়েছেন আসামি। প্রতিষ্ঠানটি ৪২১৫ জন শ্রমিকের কাছ থেকে ৭০ কোটি ৬০ লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায় করেছে।

এছাড়া রুবেল বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী মুহাম্মাদ মজিবুল হক রুবেল তার স্ত্রী কামরুন নাহার হীরামনি আসামি হয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটি ২৮৪৫ জন শ্রমিকের কাছ থেকে ৪৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায় করেছে।

দি ইফতী ওভারসিজের স্বত্বাধিকারী রুবেল ও বোরহান উদ্দিন (পান্না) ও আসামি হয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটি ৩৭৯৭ জন শ্রমিকের কাছ থেকে ৬৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায় করেছে।

এজাহারে বলা হয়, পরস্পর যোগসাজশে, অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্যে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে/ সাবেক মন্ত্রী/এমপি/উপজেলার চেয়ারম্যান/কাউন্সিলার হিসাবে দায়িত্বপালনকালে/ বায়রার বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালনকালে সিন্ডিকেট করে বিএমইটি ও বায়রার রেজিস্ট্রেশনের শর্ত ভঙ্গ করে সরকার নির্ধারিত ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার চেয়ে ৫ গুণ অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করেছে শ্রমিকদের কাছ থেকে।

মালয়েশিয়া শ্রমিক রিক্রুটের জন্য এজেন্ট হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে রিক্রুটেড শ্রমিকদের অবৈধভাবে ক্ষতিসাধন করে বিভিন্ন ধাপে বাড়তি অর্থ গ্রহণের করেছে আসামিরা। প্রভাব খাটিয়ে চুক্তিবদ্ধ আইনসংগত পারিশ্রমিক ব্যতীত এবং চুক্তির শর্ত মোতাবেক কর্মকাণ্ড না করে পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে অবৈধ পারিতোষিক গ্রহণ করে মালয়েশিয়ায় প্রেরিত কর্মীর কাছ থেকে পাসপোর্ট, স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং প্রতি কর্মীর কাছ থেকে নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণপূর্বক আত্মসাৎ করেছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.