সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নেতা-কর্মীদের বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার তাগিদ দিয়ে জরুরি সভা শেষ করেছে মহানগর আওয়ামী লীগ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ওই সভায় ও পরবর্তীকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগের নেতারা অভিযোগ করেন, গত ১০ বছরে সরকার সিলেট নগরে প্রচুর বরাদ্দ দিলেও কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। বরং বর্তমান মেয়রের নেতৃত্বে লুটপাট হয়েছে।
সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে সিলেট নগরের তালতলা এলাকার একটি রেস্তোরাঁ মিলনায়তনে গতকাল সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় মহানগর আওয়ামী লীগের জরুরি সভা শুরু হয়। তা শেষ হয় রাত পৌনে ৯টায়। সভাপতির বক্তৃতায় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ বিএনপিদলীয় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সমালোচনা করে বক্তব্য দেন।
মাসুক উদ্দিন আহমদ বক্তব্যে বলেন, গত ১০ বছরে সরকার সিলেটে প্রচুর টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের ছিটেফোঁটাও হয়নি, বরং বর্তমান মেয়রের নেতৃত্বে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। দিন দিন জনদুর্ভোগ বেড়েছে। বিশেষ করে সিলেট মহানগরের জলাবদ্ধতা, ড্রেনেজ সমস্যা, শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, রাস্তাঘাট সম্প্রসারণসহ পরিকল্পিত নগরায়ণের স্বার্থে এবং নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হলে নগরভবনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিশ্চিত করা জরুরি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে হবে।
সিলেট সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভেদ দূর করার তাগিদ আওয়ামী লীগ নেতাদের
মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনে এলেও এবার নৌকার জয় নিশ্চিত করা হবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেন, এবারের নির্বাচনে সিলেটবাসী মেয়র পদে পরিবর্তন চান। কারণ, তিনি (আরিফুল) জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে তিনি আশা করেন, আরিফুল হক চৌধুরী ও তাঁর দল বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিয়ে জনগণের প্রতি সম্মান জানাবেন।
সভা শেষে রাত পৌনে ৯টার দিকে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ১০ বছরে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে সরকার ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে বলে এ সময় তিনি দাবি করেন। আনোয়ারুজ্জামান বলেন, ‘উনি (আরিফুল হক চৌধুরী) কাজ করেননি, তা আমি বলব না। উনি চেষ্টা করেছেন, উনি যে কাজটা করেছেন, কসমেটিকস উন্নয়ন হয়েছে, পরিকল্পনার অভাব। পরিকল্পিত উন্নয়ন হয়নি।’ নির্বাচিত হলে মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে পরিকল্পিত উন্নয়ন করবেন বলেও আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এ সময় সাংবাদিকদের জানান।
সিলেট সিটি নির্বাচনে ‘ঘরের মানুষ’ নিয়েই আওয়ামী লীগের দুশ্চিন্তা
বিএনপি সিটি নির্বাচনে না আসার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই নগরে গুঞ্জন রয়েছে, বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। যদিও এ বিষয়ে আরিফুল এখনো নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেননি।
আওয়ামী লীগের নেতাদের সমালোচনার বিষয়ে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘যাঁরা এমন সমালোচনা করছেন, তাঁদের উদ্দেশে বলতে চাই, গত বন্যার সময় সিলেটে বন্যাদুর্গতদের দেখতে এসে সার্কিট হাউসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেখানেই এর উত্তর আছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় আমার কাজের প্রশংসা করেছিলেন।’
অপরিকল্পিত উন্নয়নের অভিযোগের বিষয়ে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পরিকল্পনা করে পাঠালে সরকারের চারটা মন্ত্রণালয় এসব খতিয়ে দেখে। অর্থ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশন এসব দেখে বিচার-বিশ্লেষণ করেই বরাদ্দ দিয়ে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীও এসবের অনুমোদন দেন। তাই এত এত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-সচিব ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যা দেখে অনুমোদন দিয়ে থাকেন, সেসব অপরিকল্পিত হয় কীভাবে?
সিলেটে নৌকার প্রার্থীর মতবিনিময় সভায় এলেন মনোনয়নবঞ্চিত পাঁচ নেতা
লুটপাটের অভিযোগের বিষয়টিকে ‘অবান্তর’ মন্তব্য করে আরিফুল হক চৌধুরী আরও বলেন, ‘তাঁরা (আওয়ামী লীগ নেতারা) যা বলছেন, সেটা সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বলছেন। সিলেটে কী উন্নয়ন হয়েছে কিংবা জনগণের আকাঙ্ক্ষা কতটুকু পূরণ করতে পেরেছি, সেটা এখানকার জনগণই ভালো জানেন। এর বিচারের ভারও তাই জনগণের কাছেই রইল।’
নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, ২১ জুন ইভিএমে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে। ২৩ মে পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২৫ মে আর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১ জুন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ চলবে।