হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম কলে রাশিয়ার আংশিক নিষেধাজ্ঞা

0
9

টেলিগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের কল পরিষেবার ওপর আংশিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে রাশিয়া। দেশটির ডিজিটাল উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের দাবি, সন্ত্রাস ও প্রতারণার মতো অপরাধে জড়িত ব্যবহারকারীদের তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে না দেয়ার ফলেই নেয়া হয়েছে এই পদক্ষেপ।

সম্প্রতি রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্সকে দেশটির যোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা রসকোমনাডজোর জানায়, অপরাধীদের কার্যক্রম ঠেকাতে বিদেশি মেসেঞ্জার অ্যাপগুলোর কল সুবিধায় সীমিত বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে, যদিও অন্যান্য ফিচারে কোনো বাধা নেই।

হোয়াটসঅ্যাপের একজন মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেছেন, এনক্রিপ্ট করা মেসেজিং অ্যাপটি মানুষের যোগাযোগের নিরাপদ অধিকার লঙ্ঘনের সরকারি প্রচেষ্টাকে অমান্য করে, যে কারণে রাশিয়া এটিকে ১০ কোটিরও বেশি রাশিয়ান জনগণের কাছ থেকে ব্লক করার চেষ্টা করছে।

রুশ দৈনিক আরবিসিকে টেলিগ্রাম জানায়, সহিংসতা ও প্রতারণার বিরুদ্ধে তাদের কঠোর নীতি রয়েছে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মাধ্যমে প্রতিদিন লাখ লাখ সন্দেহজনক বার্তা সরিয়ে ফেলা হচ্ছে।

রাশিয়ান মিডিয়া মনিটরিং সার্ভিস মিডিয়াস্কোপের মতে, জুলাই মাসে রাশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম ছিল হোয়াটসঅ্যাপ, যেখানে মাসিক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৯ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি। ৮ কোটি ৯০ লাখেরও বেশি ব্যবহারকারী নিয়ে টেলিগ্রাম দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। তবে, ১১ আগস্ট থেকে রাশিয়ার ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা টেলিগ্রামে কল করতে পারছেন না, একই অবস্থা হোয়াটসঅ্যাপের ক্ষেত্রেও।

দেশটির ডিজিটাল উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ, একাধিক অনুরোধের পরও টেলিগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ অপরাধ দমনে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। তারা যদি রুশ আইন মেনে চলে— যেমন দেশে অফিস স্থাপন, রসকোমনাডজোর ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা, তাহলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে।

রুশ সংসদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক কমিটির উপপ্রধান আন্তন গোরেলকিন স্পষ্ট করে বলেন, সম্পূর্ণভাবে রুশ আইন মানলেই কেবল এই বিধিনিষেধ প্রত্যাহার হবে।

রাশিয়া ২০২২ সালে মেটাকে ‘চরমপন্থী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা করলেও হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার চলমান ছিল। তবে কর্তৃপক্ষ অ্যাপটিকে নিষিদ্ধ তথ্য না সরানোর কারণে কয়েকবার জরিমানা করেছে।

গত মাসে গোরেলকিন সতর্ক করে বলেন, হোয়াটসঅ্যাপকে রাশিয়ার বাজার ছাড়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। আরেক আইনপ্রণেতার মতে, অ্যাপটির উপস্থিতি দেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

এদিকে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্প্রতি রাষ্ট্র-সমর্থিত একটি মেসেঞ্জার অ্যাপ তৈরির অনুমোদন দিয়েছেন, যা সরকারি সেবার সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। সরকারের দাবি, এর মাধ্যমে রাশিয়া ‘ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব’ নিশ্চিত করবে এবং বিদেশি প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভরতা কমাবে।

তবে সমালোচকেরা বলছেন, নতুন অ্যাপে নজরদারি বাড়তে পারে ও ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা ক্ষুণ্ণ হতে পারে। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, হোয়াটসঅ্যাপের কলের গতি ইচ্ছাকৃতভাবে ধীর করে ব্যবহারকারীদের নতুন অ্যাপে ঠেলে দেওয়া হতে পারে।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গত মাসে এক প্রতিবেদনে জানায়, রুশ সরকার দেশের ইন্টারনেট অবকাঠামোর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরও জোরদার করছে, যাতে সরকারবিরোধী ওয়েবসাইট ও সেন্সরশিপ এড়িয়ে যাওয়ার প্রযুক্তি সহজেই ব্লক বা ধীর করে দেয়া যায়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.