হৃদরোগের কারণ ও প্রতিকার

0
132
হৃদরোগ

হৃদরোগের প্রধান ঝুঁকি উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে চর্বির আধিক্য, ধূমপান, ডায়াবেটিস, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অ্যালকোহল সেবন, শরীরচর্চা বিমুখতা, স্থূলতা, ইতিবাচক পারিবারিক ইতিহাস ইত্যাদি

বিশ্বব্যাপী মানুষের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হচ্ছে হৃদরোগ। হৃদরোগের প্রধান ঝুঁকি উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে চর্বির আধিক্য, ধূমপান, ডায়াবেটিস, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অ্যালকোহল সেবন, শরীরচর্চা বিমুখতা, স্থূলতা, ইতিবাচক পারিবারিক ইতিহাস ইত্যাদি। নারীদের এ রোগের ঝুঁকি পুরুষের তুলনায় কম হলেও রজঃনিষ্কৃতির পর নারী-পুরুষ সমান ঝুঁকির ভেতর অবস্থান করে।

ধূমপানের ফলে সৃষ্ট ধোঁয়ায় থাকে নিকোটিনসহ আরও মারাত্মক বিষ। এগুলো সরাসরি ধমনি প্রাচীরের ক্ষতি ডেকে আনে। ধূমপানের ফলে সৃষ্ট কার্বন মনোক্সাইড রক্তে অক্সিজেনের প্রবাহ কমিয়ে দেয়। ধূমপান ধমনির পুরুত্ব বাড়িয়ে দেয়, স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট করে দেয়। ধূমপানের ফলে রক্তের অনুচক্রিকা জমাট বেঁধে যাওয়ায় প্রবণতা বেড়ে যায়; যা করোনারি ধমনি রোগ উস্কে দেয়।

উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগের নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে রক্তনালিতে চাপ বেড়ে যায়। এ কারণে করোনারি ধমনির গায়ে ক্ষত হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপকে বলা হয় নীরব ঘাতক। অনেক ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না; নীরবে ক্ষতি করে হৃৎপিণ্ড, কিডনি ও চোখের।

নিয়মিত শরীরচর্চা হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। শরীরচর্চার ফলে রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। রক্তনালিতে রক্তের প্রবাহ স্বাভাবিক থাকে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। ওজন স্বাভাবিক রাখা সহজ হয়। এ ছাড়া নিয়মিত শরীরচর্চা করলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে। সর্বোপরি শরীরচর্চা নতুন রক্তনালি তৈরিতে সাহায্য করে।

কোলেস্টেরলগুলোর মধ্যে এলডিএল, ট্রাইগ্লিসারাইড সবচেয়ে বড় শত্রু। এইচজিএল উপকারী বন্ধু। এ জন্য রক্তে বন্ধু কোলেস্টেরল বাড়াতে হবে; নাশ করতে হবে শত্রু কোলেস্টেরল।

স্থূলকায় মানুষের একদিকে উচ্চ রক্তচাপ, অন্যদিকে ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। আর এ দুটোই করোনার হৃদরোগের সহায়ক শক্তি।

হৃদরোগ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন জীবনযাপনে কিছু রদবদল। নিয়মিত হাঁটুন। সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন ১৫০ মিনিট ঘাম ঝরিয়ে হাঁটুন। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। সম্পৃক্ত চর্বিজাতীয় খাবার গ্রহণের সময় রসনা সংযত রাখুন। ফাস্টফুড, জাঙ্কফুড, কোমল পানীয় পরিহার করুন।
খাদ্য তালিকায় টাটকা ফলমূল, শাকসবজির জোগান বৃদ্ধি করুন। ধূমপান, অ্যালকোহল সেবন থেকে দূরে থাকুন। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন। রক্তের চর্বির মাত্রা বেশি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মানসিকভাবে উৎফুল্ল থাকুন।
লেখক : মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, সিএমএইচ, বরিশাল।

লে. কর্নেল নাসির উদ্দিন আহমদ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.