হিমাচলে এক তরুণীকে দুই ভাইয়ের বিয়ে, সমালোচনার জবাবে কী বলছেন তাঁরা

0
18
কনে সুনীতার সঙ্গে দুই ভাই প্রদীপ ও কপিল,ছবি: এক্স থেকে নেওয়া

ভারতের হিমাচল প্রদেশে দুই ভাই মিলে একই তরুণীকে বিয়ে করেছেন। এ নিয়ে সাধারণ মানুষ ও ভারতের গণমাধ্যমে ব্যাপক হইচই হয়েছে। তবে তাঁরা বলছেন, জনসমালোচনা তাঁদের কোনোভাবেই প্রভাবিত করতে পারেনি, বরং তাঁরা গর্ব বোধ করেন। কারণ, এটি হট্টি গোষ্ঠীর শত শত বছরের পুরোনো প্রথা।

হিমাচল প্রদেশের শিল্লাই এলাকার ঠিন্ডো পরিবারের নেগি ভাইয়েরা ঐতিহ্যবাহী বহুপতিত্বের ‘জোড়িদার প্রথা’ অনুযায়ী কুনহাট গ্রামের সুনীতা চৌহানকে বিয়ে করেছেন। তাঁরা জানান, এ সিদ্ধান্ত শুধু ব্যক্তিগত বিশ্বাসের বিষয় নয়, বরং জোড়িদার নামে পরিচিত এই প্রথা একজন স্ত্রীর একাধিক ভাইকে স্বামী হিসেবে গ্রহণের সাংস্কৃতিক গুরুত্বও তুলে ধরে।

ফেসবুকে দেওয়া এক ভিডিওতে প্রদীপ নেগি বলেন, ‘হট্টি গোষ্ঠিতে এই প্রথা বহু প্রজন্ম ধরে চলছে এবং চলতে থাকবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ গালাগাল দিচ্ছে, তাতে আমার কিছু যায়–আসে না।’

প্রদীপ আরও বলেন, জোড়িদার প্রথা শুধু তাঁদের অঞ্চলে নয়, উত্তরাখন্ডের জৌনসার-বাওয়ার এলাকাতেও প্রচলিত। সেখানে এ ধরনের বিয়েতে দুই বর একই কনের সঙ্গে মালা বদল করে থাকেন।

প্রদীপের ভাই কপিল নেগি বলেন, তাঁদের বিয়ে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় হয়েছে, জোরপূর্বক নয়। তাঁরা দুই ভাই, তাঁদের স্ত্রী এবং দুই পরিবারের সবার সম্মতিতেই এ বিয়ে হয়েছে।

প্রদীপ বলেন, ‘আমি আমাদের প্রথা ও সংস্কৃতির পক্ষে কথা বলতেই থাকব। যাঁরা আমাদের রীতি জানেন না, তাঁরাও মতামত দিচ্ছেন। আমরা সবাই মিলেই বিয়েতে রাজি হয়েছি, আমাদের পরিবার ও সমাজ এতে খুশি।’

প্রদীপ বলেন, তাঁদের পরিবার আর্থিকভাবে দুর্বল, জমিজমাও খুব কম। খ্যাতি পাওয়ার কোনো বাসনাও তাঁদের নেই।

প্রদীপের ভাই কপিল বলেন, ‘আমরা খবরের শিরোনাম হওয়ার জন্য বিয়ে করিনি।’

প্রদীপ শেষ করেন এই বলে, ‘আমাদের বিয়ের একমাত্র উদ্দেশ্য একসঙ্গে থাকা ও একে অপরকে ভালোবাসা। মানুষকে অনুরোধ করব, আমাদের সমালোচনা করবেন না। আমাদের নিজেদের জীবন আছে, আর আমরা এতে সুখী।’

এই দুই ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছে শিল্লাই গ্রামের সিরমৌর জেলার ট্রান্স-গিরি এলাকায়। গত ১২ জুলাই শুরু হয়ে তিন দিন ধরে চলে এই বিয়ের অনুষ্ঠান। এতে ছিল নাচ, স্থানীয় লোকগান আর গ্রামীণ উৎসবের আমেজ।

এই পুরোনো প্রথা পাহাড়ি কৃষি সম্প্রদায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এতে পৈতৃক জমি ভাগাভাগি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। এ ধরনের বিয়েতে সাধারণত বড় ভাইকে সন্তানের আইনগত পিতা হিসেবে ধরা হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.