হিজাব না পরায় ইরানি ২০ অভিনেত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা

0
181
অভিনেত্রী তারানেহ আলিদুস্তির হাতে ধরা কাগজে লেখা ছিল ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’।

ইরানের সংস্কৃতি ও ইসলামি নির্দেশনা মন্ত্রণালয় ২০ জন অভিনেত্রীর নাম প্রকাশ করে বলেছে, হিজাব না মেনে বাইরে বের হওয়ায় তারা কাজ করতে পারবেন না।

গতমাসের শেষদিকে ওই তালিকা প্রকাশের পরে সংস্কৃতি ও ইসলামি নির্দেশনা বিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মদ মেহদি ইসমাইলি জানান, বাধ্যতামূলক হিজাব আইন না মানায় তাদের সঙ্গে কাজ করা সম্ভব ছিল না।

এই অভিনেত্রীদের মধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত অভিনেত্রী তারানেহ আলিদুস্তি রয়েছেন। ২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য সেলসম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করে তিনি খ্যাতি পান। সিনেমাটির পরিচালক আসগার ফারহাদি সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে অস্কার পুরস্কার পেয়েছিলেন।

ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলিদুস্তি আগে হেডস্কার্ফ পরতেন। বিদেশে গেলেও এর ব্যতিক্রম করতেন না। কিন্তু গত বছর ইরানের নীতিবিষয়ক পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনির মৃত্যু হলে ইরানে বিক্ষোভ শুরু হয়। সে সময় বিক্ষোভের প্রতি সমর্থন জানাতে আলিদুস্তি ইনস্টাগ্রামে তার একটি ছবি প্রকাশ করেছিলেন, যেটিতে তার মাথায় হিজাব ছিল না। তার হাতে ধরা কাগজে লেখা ছিল ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’। ছবিটি প্রকাশের পর আলিদুস্তিকে আটক করা হয়েছিল। দুই সপ্তাহ পর তিনি জামিনে ছাড়া পেয়েছিলেন।

কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় আলিদুস্তি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘আমি তোমাদের হেডস্কার্ফ পরার বাধ্যবাধকতা মানব না, যেটা থেকে এখনও আমার বোনদের রক্তে ঝরছে।’

এদিকে, অক্টোবর মাসের শুরুতে ১৭ বছর বয়সী আরমিতা জেরাভান্দ নামের এক শিক্ষার্থী হিজাব না পরে স্কুলে যাচ্ছিলেন। সেই সময় নীতি পুলিশ তাকে ধরেছিল। এক পর্যায়ে জেরাভান্দ জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কয়েকদিন কোমায় থাকার পর তাকে ‘ব্রেন ডেড’ ঘোষণা করা হয়। ২৯ অক্টোবর জেরাভান্দকে সমাহিত করা হয়।

তেহরানের এক শিক্ষার্থী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘বাইরে বের হওয়ার সময় হেডস্কার্ফ না পরে আমরা প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছি। অনেক অভিনেত্রীকে এখনও হিজাব পরতে দেখাটা কষ্টকর।’ এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি ইরানে সাম্প্রতিক সময়ে আয়োজিত এক শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের কথা উল্লেখ করেছেন। ইরানের চলচ্চিত্র পরিচালক দারিউশ মেহেরজুই ও তার স্ত্রী চিত্রনাট্যকার ভাহিদেহ মোহাম্মাদিফারের শেষকৃত্যের অনুষ্ঠান ছিল সেটি।

দারিউশ মেহেরজুই ও ভাহিদেহ মোহাম্মাদিফারকে গত ১৮ অক্টোবর নিজ বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাদের শরীরে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল। কর্তৃপক্ষ বলছে, ওই দম্পতির বাড়িতে কাজ করা সাবেক মালি ডাকাতি করতে গিয়ে এই ঘটনা ঘটেছে। তবে অনেকেই এতে সন্দেহ পোষণ করেছেন। কারণ, ইরানি অনেক পরিচালকের মতো মেহেরজুইও প্রায়ই সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন। ২০২২ সালের মার্চে তার পরিচালিত শেষ ছবি ‘লা মাইনর’ এর ওপর সেন্সর আরোপের পর ৮৩ বছর বয়সী মেহেরজুই সামাজিক মাধ্যমে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশে একটি কঠোর বার্তা দিয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘আমাকে মেরে ফেলুন, যা ইচ্ছা করুন… কিন্তু আমি আমার অধিকার চাই।’

মেহেরজুই ও মোহাম্মাদিফারের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে অনেক পরিচিত অভিনেত্রী হেডস্কার্ফ পরে উপস্থিত হয়েছিলেন। তবে ওই দম্পতির ১৬ বছর বয়সী মেয়ে মোনা মেহেরজুই পরেননি।

২০১৭ সাল থেকে জার্মানিতে বাস করা ইরানি মঞ্চ অভিনেত্রী ও লেখিকা শোলে পাকরাভান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমি জানি, তরুণ প্রজন্ম আমাদের ওপর ক্ষুব্ধ। আমাদের প্রজন্ম রক্ষণশীল এবং সতর্ক।’

জার্মানিতে আসার তিন বছর আগে তার মেয়ে রায়হানেহ জব্বারি তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করা ব্যক্তিকে হত্যা করেছিল। পরে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। পাকরাভান তার মেয়েকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সফল হননি। এখন তিনি অন্যদের হয়ে কথা বলার চেষ্টা করছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি জানি বর্তমানে ইরানে প্রতিরোধের জন্য অনেক মূল্য দিতে হয়। আপনি যদি দৃষ্টির বাইরে অদৃশ্য হতে না চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই অনিচ্ছা সত্ত্বেও হেডস্কার্ফ পরতে হবে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.