হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ হন প্রসূতি রেহেনা

0
49
রেহেনা বেগম

প্রসব বেদনা নিয়ে গত ১৯ জুলাই বিকেলে নরসিংদীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন রেহেনা বেগম। দ্বিতীয় তলায় চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁর শরীরে স্যালাইন দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় ব্যথা থেকে একটু স্বস্তি পেতে হাসপাতালের বিছানায় জানালার পাশে উঠে বসেন।

হঠাৎই একটি গুলি তাঁর পিঠের বাঁ পাশ দিয়ে ঢুকে সামনে দিয়ে বেরিয়ে যায়। বিছানায় লুটিয়ে পড়েন তিনি। প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। অবস্থা জটিল দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে রেফার করে।

তবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ঘিরে জেলা কারাগারে হামলার ঘটনায় পুরো শহর তখন রণক্ষেত্র। চারদিকে ককটেল ও গুলির শব্দ। বহু চেষ্টার পর রাত ১০টায় একটি অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরদিন ভোরে সিজারিয়ান অপারেশন করা হয় তাঁর। একদিকে প্রসব বেদনা, অন্যদিকে গুলির ক্ষতের তীব্র যন্ত্রণার মধ্যেই ফুটফুটে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন রেহেনা।

ভুক্তভোগী নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের দুলালপুর উত্তরপাড়া গ্রামের জহিরুল ইসলাম রাব্বির স্ত্রী। অস্ত্রোপচার ও গুলির ক্ষত নিয়ে দুঃসহ দিনযাপন করছেন তিনি।

রেহেনার স্বামী জহিরুল ইসলাম রাব্বি বলেন, ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর প্রসবব্যথা শুরু হয়। অবস্থা খারাপ দেখে ১৯ জুলাই সকালে শিবপুর উপজেলা সদরে নিয়ে যাই। সেখানে কোনো হাসপাতাল খোলা না পেয়ে ঝুঁকি নিয়ে সিএনজি অটোরিকশায় নরসিংদীর ভেলানগর প্রাইম জেনারেল হাসপাতালে বিকেল ৩টার দিকে তাকে ভর্তি করি। এ সময় পুরো এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলন চলছিল। চারদিকে থমথমে অবস্থা ও গুলির শব্দ। ভর্তির পর হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁর স্যালাইন চলছিল। সন্ধ্যায় সে বিছানায় জানালার পাশে উঠে বসে। পাশেই নরসিংদী জেলা কারাগার। এমন সময় একটি গুলি তার পিঠ দিয়ে ঢুকে সামনে দিয়ে বেরিয়ে যায়। এ অবস্থা দেখে চিকিৎসকরা ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। ঢাকায় নিয়ে যাওয়াও একটা বিশাল যুদ্ধ ছিল। ভয়ংকর এক অভিজ্ঞতা। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে রিলিজ দিলে ২২ জুলাই বাড়ি চলে আসি। সব মিলিয়ে শুকরিয়া যে, আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। ডাক্তার বলেছেন, গুলিবিদ্ধ স্থানে ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে হবে। অন্যথায় বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে।

সেদিনের ঘটনা মনে পড়লে এখনও আঁতকে ওঠেন রেহেনা বেগম। সেটি ছিল তাঁর জীবনের ভয়ংকরতম এক অভিজ্ঞতা। বর্তমানে শারীরিক অবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, এক হলো সিজার আর এক হলো গুলির ক্ষত। সব মিলিয়ে খুব কষ্টে জীবনযাপন করছি। বাঁ হাত নাড়াতে পারি না। সন্তানের ঠিকমতো যত্ন নিতেও পারছি না। আল্লাহর অশেষ রহমতে বেঁচে আছি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সোলায়মান জানান, খবর পেয়ে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলাম। ডেলিভারির সময় গুলিবিদ্ধ হওয়া হৃদয়বিদারক ঘটনা।

নরসিংদী প্রাইম জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপক পীযূষ কুমার রায় বলেন, আমাদের হাসপাতালটি জেলা কারাগারের সন্নিকটে। সেদিন পুরো এলাকা থমথমে অবস্থা ছিল।

মেডিকেল অফিসার ডা. সাখাওয়াত হোসেনের তত্ত্বাবধানে তাঁকে স্যালাইন নিয়ে দ্বিতীয় তলার উত্তর পাশে জানালার কাছে রাখা হয়। এমন সময় গুলিবিদ্ধ হলে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।

আসাদুজ্জামান আসাদ, শিবপুর (নরসিংদী)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.