হাসপাতালের ফটকে স্বামীর লাশ রেখে স্ত্রী লাপাত্তা

0
122
লাশ

স্বামীর লাশ হাসপাতালের ফটকে ফেলে রেখে পালিয়ে গেছেন তাঁর স্ত্রী। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফটকে এ ঘটনা ঘটে।

মারা যাওয়া শফিকুল ইসলাম গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার বজরুজামালপুর গ্রামের মুন্টু আকন্দের ছেলে। তাঁর স্ত্রী শ্যামলী খাতুন। তাঁর বাবার বাড়ি বগুড়ার ধুনট উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়নের কাদাই গ্রামে।

শফিকুল ইসলামের ভাই রফিকুল ইসলাম বলেন, শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কাছে শফিকুল অনেক টাকা পান। এই টাকা চাইতে গেলে তাঁরা কৌশলের তাঁর ভাইকে তরলজাতীয় কোনো কিছু পান করান। এতে শফিকুল অসুস্থ পড়লে চিকিৎসার নামে হাসপাতালের গেটে লাশ ফেলে পালিয়ে গেছেন তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এ ঘটনায় থানায় মামলা করবেন।

স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করার সময় শফিকুল ইসলাম ও শ্যামলী খাতুনের পরিচয় হয়। প্রায় তিন বছর আগে তাঁরা বিয়ে করেন। ১৫ দিন আগে শ্যামলী খাতুন তাঁর স্বামীকে ঢাকায় রেখে একাই বাবার বাড়ি ধুনটের কাদাই গ্রামে চলে আসেন। তিনি না ফেরায় শফিকুল ক্ষুব্ধ হয়ে গতকাল বেলা দুইটার দিকে ঢাকা থেকে শ্বশুরবাড়িতে আসেন। খবর পেয়ে শ্যামলী বাবার বাড়ি থেকে গা–ঢাকা দেন। শ্বশুরবাড়িতে শ্যামলীকে না পেয়ে শফিকুল ধুনট উপজেলার কান্তনগর বাজারে ফিরে আসেন। সেখান থেকে বিকেল চারটার দিকে আবারও শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে শ্যামলী তাঁর স্বামীকে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে করে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পথে রওনা হন শ্যামলী। হাসপাতাল ফটকে যাওয়ামাত্র সন্ধ্যা সাতটার দিকে শফিকুল মারা যান। মৃত্যুর বিষয়টি জানাজানি হওয়ার আগেই শ্যামলী তাঁর স্বামীর লাশ ফেলে রেখেই পালিয়ে যান। এর পর থেকে শ্যামলীকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

কালেরপাড়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও কাদাই গ্রামের বাসিন্দা জিয়াউর রহমান বলেন, শফিকুল ইসলাম মারা যাওয়ার ঘটনা জানাজানি হওয়ার আগেই শ্যামলীসহ বাড়ির অন্য লোকজন পালিয়ে গেছেন। খোঁজখবর নিয়ে তাঁদের পাওয়া যায়নি।

আজ শুক্রবার সকালে শ্যামলীদের বাড়ি কাদাই গ্রামে গিয়ে পরিবারের সদস্য কাউকে পাওয়া যায়নি। বাড়িঘরে তালা লাগানো অবস্থায় দেখা গেছে।

ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্সের চালক ফারুক হোসেন বলেন, ধুনট থেকে রোগীকে (শফিকুলকে) বগুড়া হাসপাতালে নেওয়ার সময় ফটকেই তিনি মারা যান। রোগীর সঙ্গে এক নারী ও দুজন পুরুষ ছিলেন। রোগী মারা যাওয়ার কথা শুনেই তাঁরা গাড়ি থেকে নেমে পালিয়ে গেছেন। পরে তাঁদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ধুনট থানার পুলিশর পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম বলেন, মারা যাওয়ার আগপর্যন্ত শ্যামলী খাতুন তাঁর স্বামীর সঙ্গে ছিলেন। মারা যাওয়ার পর শ্যামলী কাউকে না জানিয়ে লাশ ফেলে পালিয়ে গেছেন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু কোথাও শ্যামলীসহ তাঁর পরিবারের লোকজনকে পাওয়া যাচ্ছে না।
এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে এবং লাশের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়েছেন ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.