হারের আগে হার নয়। ২০২৬ বিশ্বকাপের এশিয়া অঞ্চলের বাছাইপর্বে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আজকের ম্যাচে জামাল ভূঁইয়াদের কাছে এটাই চাইছেন মামুনুল ইসলাম ও জাহিদ হাসান এমিলি। ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পার্থে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে দুই দেশের প্রথম ম্যাচে এই দুজন ছিলেন বাংলাদেশ দলে। মামুনুল অধিনায়ক আর এমিলি স্ট্রাইকার। দুজনই আট বছর আগের সেই ম্যাচের অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশকে নিজেদের সেরা ফুটবলটাই খেলার পরামর্শ দিচ্ছেন।
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ২৭ নম্বরে থাকা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কেমন করবে ১৮৩ তম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ? ৮ বছর আগে পার্থে স্কোরলাইন হয়েছিল ৫-০। সেই অস্ট্রেলিয়া আর আজকের অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে অনেক পার্থক্য দেখেন মামুনুল। ব্যাখাও করছেন তা, ‘গত বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া দারুণ খেলেছে। ১৬টি দলের একটি ছিল তারা। তাদের সম্পর্কে আমরা ভালোভাবেই জানি। আর্জেন্টিনার মতো দলের বিপক্ষে লড়াই করে ২-১ গোলে হেরেছে। অস্ট্রেলিয়া কতটা শক্তিশালী তা না বললেও চলছে। এমন দলের বিপক্ষে লড়াই করাও কঠিন। কিন্তু আমি শুধু চাইব বাংলাদেশ দল কিছু জয় করে দেশে ফিরুক। সেটা হতে পারে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে পরের ম্যাচগুলোর জন্য আত্মবিশ্বাস সঞ্চয় করে নেওয়া।’
বাংলাদেশের কাছে সবাই লড়াকু ফুটবল দেখতে চাইছেন আজ মেলবোর্নের অ্যামি পার্কে বেলা ৩টায় শুরু ম্যাচে। মামুনুলও আছেন সেই দলে, ‘২০১৫ সালের সেই বাংলাদেশ দলের দুজন আছে এই দলে। অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া ও মিডফিল্ডার সোহেল রানা। এই দুজন বাকিদের সহযোগিতা করতে পারে যে কীভাবে খেলতে হবে। আমাদের শক্তি হলো গত কিছু ম্যাচ আমরা ভালো খেলেছি। তার চেয়েও বেশি ভালো খেলতে হবে এ ম্যাচে। সেটা করতে পারলে ঢাকায় ২১ নভেম্বর লেবানন ম্যাচে বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। ফলে আজ ফুটবলারদের ৯০ মিনিট সেরাটা দিতে হবে।’
একই সঙ্গে খেলতে হবে লড়াকু মনোভাব নিয়ে। ফল যাই হোক, লড়াই করতে পারলেই সেটা হবে কিছু জয় করা-মনটাই মনে করেন মামুনুল।
২০১৫ সালের পর ২০২৩-এ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলছে বাংলাদেশ। লম্বা একটা বিরতি গেছে মাঝখানে। মামুনুল মনে করেন, বেশি বেশি খেলা হলেই দুই দলের মধ্যে ব্যবধানটা কমে আসে। যেমন বাংলাদেশ পার্থে ৫-০ গোল হারের আড়াই মাস পর ঢাকায় ফিরতি ম্যাচে হেরেছে ৪-০ গোলে। ব্যবধান কমেছে। এতেই বোঝা যায় বাংলাদেশ উন্নতি করেছে ওই দুই ম্যাচের মাঝের সময়টায়।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ভালো ফুটবল খেলছে। এর পেছনে গোলকিপার আনিসুর রহমান বড় ভূমিকা রাখেন। রক্ষণে তপু বর্মণও ভালো খেলেছেন। কিন্তু মদ কাণ্ডে নিষিদ্ধ থাকায় তাঁরা আজ নেই। তাঁরা থাকলে ভালো হতো মনে করেন মামুনুল। তাঁর কথা, ‘তপু থাকলে তারিক কাজীকে নিয়ে রক্ষণটা আরও শক্ত হতো। তবে কে আছে, কে নেই, সেটা ভেবে লাভ নেই। এখন যারা আছে, তাদেরই যুদ্ধটা করতে হবে।’
রাকিবের কথা আলাদা করে বলছেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক, ‘ওপরে বল ধরে রাখার ক্ষমতা আছে ওর। অনেক দিন আমাদের স্ট্রাইকারদের পায়ে গোল নেই। জাতীয় দলে হোক বা ক্লাব-সবখানেই একই অবস্থা। এখন আমাদের রাকিবের ওপর অনেকটা ভরসা করতে হবে। আমি চাইব, ওরা আজ খুব ভালো ফুটবল খেলুক। মাথা উঁচু করে মাঠ ছাড়ুক।’
ঢাকা আর মেলবোর্নের আবহাওয়ার অনেক পার্থক্য। ওখানে ঠান্ডা, বাতাসও বেশ। এসব কিছু বাংলাদেশকে কতটা ভোগাতে পারে বলে মনে করেন? মামুনুল বলছেন, ‘আবহাওয়ার ব্যাপারটাকে আমি সেভাবে সমস্যা মনে করি না। তা ছাড়া ঠান্ডার কথা বলে খারাপ খেলার সুযোগ নেই। আপনাকে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে ৯০ মিনিট খেলতে হবে।’ ভালো খেলা ফুটবলারদের দায়িত্বও মনে করেন এই মিডফিল্ডার, যিনি ফুটবল ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে চলে এসেছেন। মামুনুল বলছেন, ‘এখন বাফুফে খেলোয়াড়দের সুযোগ-সুবিধা বেশি দিচ্ছে। আমরা যে মানের হোটেলে থাকতাম, তার চেয়ে অনেক উন্নতমানের হোটেলে রাখা হয় এখনকার ফুটবলারদের। তাই আশা করব, উন্নতমানের সুযোগ-সুবিধায় খেলোয়াড়েরা ভালো কিছু দেবে দেশকে, দেশের ফুটবলকে।’
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামার আগে খেলোয়াড়দের অতি আত্মবিশ্বাসী হওয়া চলবে না। আবার অতি হতাশায় ভুগলেও বিপদ। বাংলাদেশ দলের হারানোর কিছু নেই। কিন্তু পাওয়ার আছে অনেক কিছু। সেটাই উল্লেখ করে মামুনুল বলছেন, ‘অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস বা অতিরিক্ত হতাশায় ভোগা যাবে না। ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে মাঠে। আমরা জানি, এ ম্যাচে ফল কী হতে পারে। তাতে হতাশার কিছু নেই। কারণ, এটাই আমাদের শেষ ম্যাচ নয়। তবে ব্যবধান যতটা কমিয়ে আনা যায়, ততই ভালো।’
আজকের ম্যাচে জামালদের কাছে ভালো খেলার প্রত্যাশা রাখছেন ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলা দলের স্ট্রাইকার এমিলি। তিনি বলছেন, ‘একজন সাবেক খেলোয়াড় হিসেবে দলের কাছে অবশ্যই ইতিবাচক প্রত্যাশা থাকবে। তবে ম্যাচটা অনেক কঠিন হবে। কারণ, অস্ট্রেলিয়া এখন দুর্দান্ত ফর্মে আছে। বাংলাদেশ দলও এখন আগের চেয়ে ভালো। মানসিকতায় পরিবর্তন এসেছে। সাফ থেকে সব ম্যাচেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। এ কারণেই মনে করছি, বাংলাদেশের পক্ষে ভালো করা সম্ভব। তবে ম্যাচ শেষে বোঝা যাবে, বাংলাদেশ কতটা বদলাতে পারল।’
এমন ম্যাচে দ্রুত গোল খেয়ে গেলে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। ৮ বছর আগে পার্থে বাংলাদেশ প্রথমার্ধেই ৪ গোল খেয়ে বসে। দ্বিতীয়ার্ধে ১ গোল। সেটা উল্লেখ করে এমিলি বলেন, ‘দ্বিতীয়ার্ধে আমরা খেলাটা গুছিয়েছিলাম। আমি চাইব, আজকের ম্যাচে যেন বাংলাদেশ দ্রুত গোল না খায়। আর গোল খেলেও যাতে লড়াই করতে পারে।’
একদম সবাই নিচে নেমে রক্ষণ করলে দলের জন্য বিপদ হতে পারে ধারণা এমিলির। তাঁর কথা, ‘২০১৫ সালে ম্যাচের শুরুর দিকে আমরা অতি রক্ষণাত্মক হওয়ায় গোল খেয়ে গেছি। তবে ওরা যদি বোঝে যে বাংলাদেশ প্রতি আক্রমণে আসতে পারে, তাহলে হয়তো অলআউটে আসবে না ওরা। কারণ ওরাও নিশ্চয়ই আমাদের নিয়ে হোমওয়ার্ক করেছে। ওরা জানে রাকিব, ফাহিম দ্রুতগতির ফুটবলার। কিছু একটা করে ফেলতে পারে।’
এমন ম্যাচ ফুটবলারদের উপভোগ করা উচিত বলে মনে করেন এমিলি। সঙ্গে যোগ করছেন, ‘জামালদের নার্ভাস হওয়ার কিছু নেই। কারণ, এই ম্যাচে বাংলাদেশ ৫ গোলে হারলেও বলার কিছু নেই। কিন্তু ২ গোলে হারলে বাহবা পাবেন ফুটবলাররা। সুতরাং হারের আগেই হার চলবে না।’