ওএমএসের ট্রাক থেকে চাল নিতে এসে জ্ঞান হারালেন গোলাম মোস্তফা

0
100
ওএমএসের ট্রাক থেকে চাল নিতে এসে জ্ঞান হারালেন গোলাম মোস্তফা

গোলাম মোস্তফার নাম জানা যায় জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে। আর সঙ্গে থাকা মুঠোফোনে মেলে পরিবার সদস্যের নম্বর। পরে সেখানে উপস্থিত মানুষের মধ্যে দুজন এগিয়ে এলেন। তাঁকে রিকশায় করে পৌঁছে দিলেন মিরপুর ১২-এর সি ব্লকের ২ নম্বর সড়কের বাসায়। প্রথম আলোর প্রতিবেদক তখন তাঁদের পেছন পেছন সেই বাসায় যান।

সেখানে পৌঁছে কথা হয় গোলাম মোস্তফার সহকর্মী লাল মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, তাঁরা দুজনে পালা করে ওই বাসায় নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করেন। গোলাম মোস্তফার স্ত্রী কাজ করেন একটি পোশাক কারখানায়। ছেলেও একটা ছোটখাটো কাজ করে নিজের খরচ চালায়। স্ত্রীকে নিয়ে পাশেই ছোট একটি বাসায় ভাড়া থাকেন তিনি।

লাল মিয়া আরও জানান, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত গোলাম মোস্তফার দুই দিন ধরে পাতলা পায়খানা চলছে। কিন্তু অভাবের সংসারে সুলভ মূল্যে চাল পেতে আজ সকালে অসুস্থ শরীর নিয়েও তিনি ওএমএসের লাইনে দাঁড়ান।

‘এখন তো তাকে অসুস্থ অবস্থায় নিয়ে এল। ওনার স্ত্রীকে খবর দেওয়া হয়েছে। তিনি গার্মেন্টস থেকে ছুটি নিয়ে আসতেছেন,’ বললেন লাল মিয়া।

ওএমএসের ট্রাক থেকে চাল নিতে এসে জ্ঞান হারালেন গোলাম মোস্তফা

যে ট্রাক থেকে খাদ্য কিনতে গিয়ে গোলাম মোস্তফা জ্ঞান হারিয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েছিলেন, সেটি খাদ্য অধিদপ্তরের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় খোলাবাজারে বিক্রি বা ওপেন মার্কেট সেলের (ওএমএস) ট্রাক। এসব ট্রাকে করে বাজারের তুলনায় কিছুটা কম দামে চাল ও আটা বিক্রি করা হয়।

একসময় ওএমএস কর্মসূচিতে বিক্রি করা পণ্যের মূল ক্রেতা ছিলেন একেবারে স্বল্প আয়ের মানুষ। তবে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় দিন দিন ওএমএসের পণ্য কিনতে আসা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে দীর্ঘ হচ্ছে নিম্নবিত্ত, স্বল্প আয় এবং অনেক ক্ষেত্রে মধ্যম আয়ের মানুষের সারি।

সরকার ওএমএসের মাধ্যমে প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকায় বিক্রি করে। প্রতি কেজি খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ২৪ টাকায়। আর ২ কেজির প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ৫ কেজি চাল ও ৫ কেজি খোলা আটা বা ৪ কেজি প্যাকেটজাত আটা কিনতে পারেন।

ওএমএস ট্রাকের সামনে মানুষের দীর্ঘ সারি এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে যে বাজারমূল্যে এখন অনেকেই পণ্য কিনতে পারছেন না। ফলে গরিবের জন্য যে কর্মসূচির আয়োজন, তাতে এসে যোগ দিচ্ছেন মধ্যবিত্ত মানুষেরাও।

ওএমএসের লাইনে দাঁড়িয়ে চাল-আটা নিতে আসা মানুষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি অনেকটা নৈমিত্তিক ঘটনা। মাঝেমধ্যে তা মারামারির পর্যায়েও পৌঁছায়। আর অনেক সময় গোলাম মোস্তফার মতো কেউ কেউ দুর্ঘটনারও শিকার হন।

এ রকমই একজন দিনমজুর জাহিদ হাসান। মাস তিনেক আগে ওএমএসের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। কিন্তু যখন ট্রাক আসে, তখন সবাই হুড়োহুড়ি করে দৌড় দেয়। এতে পড়ে গিয়ে ও অন্যদের পায়ের নিচে পিষ্ট হয়ে হাঁটুতে মারাত্মক আঘাত পান তিনি। পরে বেশ কিছুদিন বাসায় বিশ্রামে থাকতে হয় তাঁকে।

‘সে সময় চিকিৎসা করাতে গিয়ে দেড় হাজার টাকা খরচ হয়েছিল আমার। কিছু টাকা বাঁচানোর আশায় লাইনে দাঁড়িয়ে আরও খরচ বেড়েছিল তখন,’ জাহিদ হাসান যখন এ কথা জানান, তখন তিনি মিরপুরে ওই ট্রাকের লাইনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন।

জাহিদ হাসান ও গোলাম মোস্তফার ক্ষেত্র যা ঘটে গেছে, তা খুব একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। স্বল্পমূল্যে খাদ্যপণ্য কেনার জন্য অনেক স্বল্প আয়ের মানুষ এখন মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলে ধারণা, ফলে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনার খবরও পাওয়া যাচ্ছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.