নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলায় পাঁচ বছর আগে মারা যাওয়া এক ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনার জেরে এই মামলা করেছেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন। বিদেশে অবস্থানকারী উপজেলা বিএনপির সদস্য ফখরুল ইসলামও এই মামলার আসামি।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে কোম্পানীগঞ্জ থানার সামনে ও হাসপাতাল সড়কে নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ বিএনপির। এতে উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব মাহবুবুর রহমানসহ পাঁচজন আহত হন। পাল্টা হামলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আলমগীর হোসেন আহত হওয়ার অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলাটি হয়। বিএনপির নেতারা বলেছেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদেরকে এলাকায় কোণঠাসা করার জন্য এই মামলা করা হয়েছে।
মামলায় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আলম শিকদার, যুগ্ন আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমানসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ৯৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ২০০ থেকে ২৫০ জনকে। গতকাল শনিবার আদালতে পাঠানো মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে (এফআইআর) দেখা গেছে, ৪৯ নম্বর আসামি হিসেবে নিজাম উদ্দিন ওরফে দিপুর নাম উল্লেখ রয়েছে। তিনি বসুরহাট পৌরসভা ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আবদুল মালেকের ছেলে। ৫৩ বছর বয়সী নিজাম উদ্দিন ২০১৮ সালের ২০ আগস্ট মারা যান।
কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি হামলা, আহত ৫
মৃত ব্যক্তিকে আসামি করার বিষয়ে গতকাল রাতে মামলার বাদী স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা আলমগীর হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ কথা বলতে পারব না।’ এরপর তিনি ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাদেকুর রহমান বলেন, বাদী এজাহারে যেসব আসামির নাম উল্লেখ করেন তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা নিতে পুলিশ বাধ্য। তদন্তে কারও যদি ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হয় সে ক্ষেত্রে তাঁর নাম স্বাভাবিকভাবেই বাদ যায়।
উপজেলা বিএনপির সদস্য ব্যবসায়ী ফখরুল ইসলামকে মামলায় ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। তিনি বলেন, স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ৫ জুন থেকে এখন পর্যন্ত দেশের বাইরে রয়েছেন। এটি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এলাকায় ‘গায়েবি মামলার’ নজির।
প্রয়াত নিজাম উদ্দিনের ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভা ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন ওরফে টিপু। তিনি বলেন, তাঁর ভাই নিজাম উদ্দিন দিপু ২০১৮ সালে মারা গেছেন। অথচ তাঁর ভাইকে মামলার আসামি করেছে আওয়ামী লীগ।
মামলার বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা গতকাল রাতে বলেন, এখানে একটা ভুল হয়ে গেছে। আসামি হিসেবে যাঁর নাম এসেছে, আসলে তাঁর ছোট ভাইকে আসামি করার কথা ছিল। কিন্তু ভুলে বড় ভাইয়ের নাম আসামির তালিকায় উঠে গেছে। আর অপর আসামি ফখরুল ইসলাম বিদেশে থেকে সব কলকাঠি নাড়ছেন, তাঁর ইন্ধনে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার ওপর হামলা হয়েছে, তাই তাঁর নাম আসামি হিসেবে এসেছে।
মামলার আসামি বাদী ঠিক করেছে, না দলীয়ভাবে ঠিক করা হয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের মির্জা বলেন, আহত আলমগীর ও দলের লোকজন মিলে আসামির তালিকা তৈরি করেছেন।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান প্লেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলার ঘটনা নতুন নয়। সেদিন হামলা হলো বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে। আবার মামলাও হলো তাঁদের বিরুদ্ধে। তাঁরা এই গায়েবি মামলার তীব্র নিন্দা জানান।