স্বাস্থ্যের নিয়োগ কমিটির সভাপতিসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

0
113
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণি নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি ডা. শেখ মোহাম্মদ হাসান ইমামসহ (৬০) চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মঙ্গলবার ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ সংস্থাটির উপপরিচালক মো. ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে এ মামলা  দায়ের করেন।

অন্য আসামিরা হলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক উপপরিচালক (প্রশাসন) ডা. আ.ফ.ম. আখতার হোসেন, খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক মো. হারুনুর রশিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. শওকাত আলী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কর্মরত বিভিন্ন অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজশে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ প্রদানের শর্তে জালজালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করায় এই মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দুদক।

দুদক আরও জানায়, করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের লক্ষ্যে জরুরি প্রয়োজনে বিভিন্ন হাসপাতালে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, মেডিকেল টেকনিশিয়ান এবং কার্ডিওগ্রাফার পদে দুই হাজার ৭৯৮টি শূন্যপদে জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ২০২০ সালের ০৫ জুলাই থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত অনলাইন আবেদন চলে। ৭২ হাজার ৬১৫ জন আবেদনকারীর মধ্যে ২৩ হাজার ৫২২ জনের অনুকূলে অনলাইনে টেলিটকের মাধ্যমে প্রবেশপত্র ইস্যু করা হয়। লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করতে লিথোকোড সম্বলিত খাতা প্রণয়নের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের চুক্তি হয়। চুক্তি মোতাবেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. শওকাত আলী পরীক্ষার খাতা তৈরি (লিথোকোডসহ) করে কক্ষভিত্তিক খাতা প্যাকেট করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়োগ কমিটির কাছে প্রেরণ করেন

দুদক জানায়, মেডিকেল টেকনিশিয়ান, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও কার্ডিওগ্রাফার পদে লিখিত পরীক্ষা শেষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ কেন্দ্র হতে খাতা, লিথোকোডের ছেঁড়া অংশ এবং প্রশ্ন বুঝে নিয়ে বাহন মারফত অধিদপ্তরে নিয়ে আসেন এবং নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব উপপরিচালক আ.খ.ম. আক্তার হোসেনের কাছে জমা দেন। সদস্য সচিব সমুদয় খাতা বুঝে নিয়ে একই দিন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও মেডিকেল টেকনিশিয়ান (ইসিজি) সংশ্লিষ্ট খাতা মূল্যায়নের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান মো. শাওকত আলীর কাছে প্রদান করেন এবং মেডিকেল টেকনিশিয়ান (অন্যান্য) পদের লিখিত খাতা মূল্যায়নের জন্য খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক মো. হারুনুর রশিদের কাছে দেন।

লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর রাতে নতুন খাতায় উত্তর লিখে হারুনুর রশিদ ও শাওকত আলীর সহযোগিতায় কিছু কিছু উত্তরপত্র বদলে দেওয়া হয়।

দুদক বলছে, টেকনিশিয়ান ও টেকনোলজিস্ট পদে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৪ হাজার ৪৫৩টি খাতা, টেবুলেশন শিট ও অন্যান্য ডকুমেন্টস পরীক্ষা করে ২ হাজার ৪১১টি উত্তরপত্রে একাধিক স্ট্যাপলিংয়ের ছিদ্র ও পেন্সিলে লেখা বিভিন্ন প্রকারের সংকেত লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ ২ হাজার ৫৫৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৮০০ জন পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্রে একাধিক স্ট্যাপলিংয়ের ছিদ্র ও পেন্সিলে লেখা বিভিন্ন প্রকারের সংকেত লক্ষ্য করা গেছে। উত্তরপত্রে একাধিক স্ট্যাপলিংয়ের ছিদ্র ও পেন্সিলে লেখা বিভিন্ন প্রকারের সংকেত সংক্রান্তে চাকরিপ্রার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা কোনো তথ্য প্রদান করেননি। তবে গোপন অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কর্মরত বিভিন্ন অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজশে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে ক্ষেত্রবিশেষে ১৫-২০ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ প্রদানের শর্তে জালজালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করা হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.