স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক: নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে র‍্যাবকে দূরে রাখার চিন্তা

0
19
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

র‍্যাবকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কাজে সম্পৃক্ত না করার চিন্তাভাবনা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নবিষয়ক এক বৈঠকে র‍্যাবের কাউকে রাখা হয়নি।

বৈঠকে সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিশ্রামের প্রয়োজনে সাময়িকভাবে তাঁদের মাঠ থেকে তুলে আনার প্রস্তাব দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সেনাসদস্যদের মাঠ থেকে উঠিয়ে আনা যেতে পারে। তফসিল ঘোষণার পর আবার তাঁদের মাঠে নামানো যেতে পারে। অবশ্য আগামী এক মাস দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন থাকবে, তা দেখে সেনাসদস্যের তুলে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে মত দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, বিগত তিনটি নির্বাচনে র‍্যাবের বিতর্কিত ভূমিকার কারণে আগামী নির্বাচনে তাদের না রাখার বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব, জনপ্রশাসনসচিবসহ নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্তত ১১ জন সচিব উপস্থিত ছিলেন। এতে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি, বিজিবি, পুলিশ, কোস্টগার্ড এবং আনসার ও ভিডিপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। র‍্যাবকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, বিগত তিনটি নির্বাচনে র‍্যাবের বিতর্কিত ভূমিকার কারণে আগামী নির্বাচনে তাদের না রাখার বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

বৈঠকে সেনাসদস্যদের বিশ্রামের জন্য সাময়িকভাবে তাঁদের তুলে নেওয়ার প্রস্তাবের বিষয়টি দুটি সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের মধ্যে গত বছরের ১৯ জুলাই দিবাগত রাতে সেনাবাহিনী মোতায়েন ও কারফিউ জারি করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। তবে বিক্ষোভ বাড়তে থাকে। সেনাবাহিনী জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে ৫ আগস্ট জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়।

একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সেনাসদস্যরা টানা মাঠে দায়িত্ব পালনের কারণে ক্লান্ত। নির্বাচনেও তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। এ কারণেই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাময়িকভাবে তাঁদের মাঠ থেকে তুলে আনার প্রস্তাব দিয়েছেন।

সেই থেকে এখনো সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন আছে। সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তদূর্ধ্ব সমপদমর্যাদার কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (কোস্টগার্ড ও বিজিবিতে প্রেষণে নিয়োজিত সমপদমর্যাদার কর্মকর্তাসহ) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সেনাসদস্যরা টানা মাঠে দায়িত্ব পালনের কারণে ক্লান্ত। নির্বাচনেও তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। এ কারণেই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাময়িকভাবে তাঁদের মাঠ থেকে তুলে আনার প্রস্তাব দিয়েছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গতকালের বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। সূত্র জানায়, তিনি বৈঠকে নির্বাচন পরিচালনায় প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের বড় ভূমিকার কথা উল্লেখ করে প্রত্যেককে একজন করে নিরাপত্তারক্ষী (গানম্যান) দেওয়ার প্রস্তাব দেন। তবে নির্বাচনের সময় এত বিপুলসংখ্যক নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া সম্ভব নয় বলে কেউ কেউ মত দেন।

বৈঠকে নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে ১৮ থেকে ৩৩ বছর বয়সীদের জন্য আলাদা বুথ করার সিদ্ধান্তের বিষয়টি আলোচনা হয়। আরও আলোচনা হয় যে নির্বাচনে যাঁরা দায়িত্ব পালন করবেন, তাঁদের প্রত্যেককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তবে প্রশিক্ষণের সম্মানী না দেওয়ার প্রস্তাব করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তাঁর মত, বিগত তিনটি নির্বাচনে প্রশিক্ষণের নামে সম্মানী দিয়ে কর্মকর্তাদের অতি উৎসাহী করে ফেলা হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে একজন সচিব বলেন, নির্বাচনের আগের রাতে কিংবা নির্বাচনের দিন সকালে রাজনৈতিক দলগুলো পোলিং এজেন্টদের নাম দিয়ে থাকে। এ ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আগামী নির্বাচনে পোলিং এজেন্টের নাম দিতে হবে নির্বাচনের বেশ আগে। এবং পোলিং এজেন্ট কিছুতেই নির্বাচনের দিন চা-বিস্কুট খাওয়ার নামে বাইরে যেতে পারবেন না। তাঁদের সব আয়োজন বুথের মধ্যে রাখতে হবে।

নির্বাচনের সময় জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং পুলিশ সুপার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) পদায়ন লটারির মাধ্যমে করার প্রস্তাব করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। সূত্র জানায়, তখন জনপ্রশাসনসচিব কিছু বলেননি। শুধু বলেছেন, ডিসি পদায়নে তাঁর কাছে ব্যাপক তদবির আসছে। এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও বলেন, ডিসি পদায়নে তাঁর কাছেও তদবির আসছে। তদবির ঠেকাতে লটারি বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে বলে মত দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

নির্বাচনে পুলিশের পক্ষপাত ঠেকাতে সরকার কী করবে, এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। একই সঙ্গে গণমাধ্যমের সহযোগিতা নেওয়া হবে। আশা করা হচ্ছে, এবার নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।

বৈঠক শেষে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে লটারির মাধ্যমে এসপি ও ওসির পদায়ন করা হবে। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন যদি কাউকে বদলি ও পদায়নের প্রয়োজন মনে করে, তারা সেটা করবে। তিনি বলেন, যেকোনো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডিসি, এসপি, ইউএনও এবং ওসিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নির্বাচনের সময় দেখা যায় প্রার্থীরা তাঁদের আসনে পছন্দের ডিসি, এসপি কিংবা ওসিকে পদায়ন করতে চান। কিন্তু এবার সিদ্ধান্ত হয়েছে গণমাধ্যমকে ডেকে সবার সামনে লটারি করা হবে। ওসির সংখ্যা যেহেতু বেশি, তাই একটি বিভাগ ধরে ধরে লটারির মাধ্যমে পদায়ন করা হবে।

সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে একজন সচিব বলেন, নির্বাচনের আগের রাতে কিংবা নির্বাচনের দিন সকালে রাজনৈতিক দলগুলো পোলিং এজেন্টদের নাম দিয়ে থাকে। এ ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আগামী নির্বাচনে পোলিং এজেন্টের নাম দিতে হবে নির্বাচনের বেশ আগে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও জানান, এবারের নির্বাচনে ৪৭ হাজার কেন্দ্রে একটি করে ‘বডি অন’ ক্যামেরা থাকবে। সেটা থাকবে ওই কেন্দ্রে পুলিশের জ্যেষ্ঠ সদস্যের কাছে।

বৈঠকে আলোচনা হয়, নির্বাচনের আগে ‘বডি অন ক্যামেরা’ ও ‘সিসিটিভি (ক্লোজড সার্কিট) ক্যামেরাসহ অন্যান্য উপকরণ কেনাকাটা সরকারি ক্রয়বিধিমালা অনুসরণ করতে গেলে অনেক সময় লেগে যাবে। তবে এ নিয়ে করণীয় ঠিক করতে আরও আলোচনা হবে।

নির্বাচনে পুলিশের পক্ষপাত ঠেকাতে সরকার কী করবে, এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। একই সঙ্গে গণমাধ্যমের সহযোগিতা নেওয়া হবে। আশা করা হচ্ছে, এবার নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.