বাংলাদেশে নারীরা যেসব ক্যান্সারে আক্রান্ত হন তার মধ্যে স্তন ক্যান্সার শীর্ষে রয়েছে। সামাজিক রক্ষণশীলতার কারণে শরীরে প্রাথমিক কোনো লক্ষণ দেখা গেলেও তারা গোপন রাখেন সেসব, যে কারণে বেশির ভাগ রোগী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন একেবারে শেষ পর্যায়ে। স্তন ক্যান্সারে শুধু নারীরা নন, পুরুষরাও আক্রান্ত হতে পারেন। তবে নারীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি থাকে। বিশ্বে প্রতি আটজনের মধ্যে একজন নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। স্তনের কিছু কোষ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে অতিরিক্ত কোষগুলো বিভাজনের মাধ্যমে টিউমার বা পিণ্ডে পরিণত হয়। সেটি রক্তনালির লসিকা ও অন্যান্য মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এই ছড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাই ক্যান্সার। যে কোনো নারীই স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন। স্তন ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে দ্রুত শনাক্ত করা গেলে পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব। সেজন্য বাড়িতে বসেই নিজের স্তন পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। ২০ বছর বয়স থেকেই নিজে নিজে স্তন পরীক্ষা করা উচিত।
স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিতে আছেন কারা পরিবারে মায়ের দিকের নিকটাত্মীয় কারও স্তন ক্যান্সার হয়ে থাকলে একজন নারীর স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। ১২ বছর বয়সের পরে মাসিক হলে এবং ৫৫ বছর বয়সের পরও মেনোপজ না হলে, অর্থাৎ দেরিতে মেনোপজ হলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। পোস্ট মেনোপোজাল সিনড্রোমের চিকিৎসা হিসেবে পাঁচ বছরের বেশি হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপি নিলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। ৩০ বছরের বেশি বয়সে গর্ভধারণ, শিশুকে বুকের দুধ না খাওয়ানো, জিনগত মিউটেশনের কারণেও স্তন ক্যান্সার হতে পারে। নিয়মিত শরীরচর্চা না করা, স্থূলতা, ধূমপান ও মদ্যপান স্তন ক্যান্সারের কারণ হতে পারে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়তে থাকে। নারীদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকলেও, পুরুষরাও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা গেলে এই রোগ পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব। আর সেজন্যই বাড়িতে বসেই নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। নারীরা প্রতি মাসে একবার মাসিক শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চম অথবা সপ্তম দিনে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অথবা গোসলের সময় স্তন এবং বগলের নিচের অংশ পরীক্ষা করতে পারেন। স্তন ক্যান্সারের উপসর্গ স্তনের চারদিকে বগলের ভেতর বা আশপাশে কোনো স্থান ফুলে ওঠা কিংবা আলতো করে ছুঁয়ে দেখলে কোনো শক্ত চাকার মতো অনুভব হওয়া স্তনের কোনো অংশ ফোলা বা ব্যথা হওয়া, স্তনের চামড়া কুঁচকে যাওয়া বা স্তনের চামড়ার রং বা আকৃতিতে পরিবর্তন হওয়া দুই স্তনের আকারে পরিবর্তন হওয়া স্তনের আশপাশে লাল হয়ে যাওয়া স্তনের কোনো অংশ ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া স্তনের বোঁটা দিয়ে রস বের হওয়া এর মধ্যে এক বা একাধিক উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। যেভাবে স্তন ক্যান্সার নির্ণয় করা হয় স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ে মূলত তিনটি পদ্ধতি আছে– মেমোগ্রাম বা বিশেষ ধরনের এক্স-রে, যার সাহায্য স্তনের অস্বাভাবিক পরিবর্তন ধরা পড়ে। ৪০ বছর বয়স থেকে বছরে একবার মেমোগ্রাম করা উচিত। মেমোগ্রামের মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার নির্ণয় করা সম্ভব। ক্যান্সার যদি মেমোগ্রামে ধরা পড়ে, তাহলে নিশ্চিত হওয়ার স্বার্থে বায়োপসি ও এফএনএসি (ফাইন নিডল অ্যাসপিরেশন সাইটোলজি) এ দুটি টেস্ট করা হয়। স্তনে পিণ্ড আছে কিনা চিকিৎসকের মাধ্যমে পরীক্ষা করানো। নিজে নিজে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী স্তন পরীক্ষা করা। তবে স্তনে সমস্যা হওয়া মানেই কিন্তু ক্যান্সার না। পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে সেটা ক্যান্সার কিনা? স্তন ছাড়াও শরীরের অন্যান্য অংশে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছে কিনা তা জানার জন্য সিটি স্ক্যান, এমআরআই কিংবা বোন স্ক্যানিংও করা হয়। ক্যান্সারের চিকিৎসা বেশ কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যেমন– ক্যান্সারের ধরন ও আকার, ক্যান্সার স্তনে সীমাবদ্ধ আছে নাকি ছড়িয়ে পড়েছে ইত্যাদির ওপর।
[সহযোগী অধ্যাপক (সার্জারি) পপুলার মেডিকেল কলেজ]