স্তনে ব্যথা অনুভব করলে অধিকাংশ নারী আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ভাবেন, স্তন ক্যানসার না তো আবার! কিন্তু স্তনে ব্যথা অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। নানা কারণে স্তনে ব্যথা হতে পারে।
কেন ব্যথা হয়
- মাসিক চলাকালে বা আগে–পরে নারীদের স্তনে ব্যথা স্বাভাবিক। হরমোনের পরিবর্তনের কারণে এ ব্যথা হয়। পিরিয়ড শেষ হলে ব্যথা থাকে না।
- গর্ভধারণের সময় নারীরা স্তনে ব্যথা অনুভব করতে পারেন। সাধারণত গর্ভধারণের তৃতীয় মাসে ব্যথা শুরু হয়। কারণ, তখন স্তনের আকার বৃদ্ধি পায়। অনেক সময় স্তনের ওপর নীল শিরা দেখা যায়। এর কারণ তখন অনেক বেশি পরিমাণে রক্তপ্রবাহ হয় এবং হরমোনের অনেক পরিবর্তন ঘটে।
- নারীদের স্তনে প্রদাহজনিত সমস্যার ফলে স্তনে ব্যথা হতে পারে। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাসের আক্রমণে এটি হয়ে থাকে। এ ব্যথায় জ্বর আসতে পারে। এ সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- অনেক সময় স্তনে একধরনের সিস্ট হয়, যার ভেতর তরলজাতীয় পদার্থ থাকে। এর নাম ব্রিজ সিস্ট। স্তনের গ্রন্থি বৃদ্ধি পেলে অনেক সময় এই সিস্ট দেখা যায়। এর কারণে ব্যথা হয়। সিস্ট অনুভব করতে পারলে যত দ্রুত সম্ভব স্তনবিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
- সন্তান জন্মদানের পর সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়ও স্তনে ব্যথা হতে পারে। এ সময় পরিচ্ছন্নতা মেনে চলতে হবে। শিশুকে দুধ খাওয়ানোর আগে ও পরে স্তন পরিষ্কার করে নেওয়া ভালো। কারণ, এতে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস হওয়ার ঝুঁকি থাকে না।
- স্তনে ঘা বা ইনফেকশন থেকে স্তনে ব্যথা হতে পারে। স্তনের নিপলে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে। এতে প্রচণ্ড ব্যথা ও ফোড়ার মতো হয়।
- স্তন ক্যানসার দীর্ঘদিন পার হলে স্তনসহ বুকের পাঁজর ও পেশিতে ব্যথা হতে পারে। সাধারণত শুরুর দিকে কোনো ব্যথা থাকে না।
প্রতিকার ও করণীয়
- স্তনের মাপ অনুযায়ী ব্রা পরুন। ছোট মাপের আঁটসাঁট ব্রা এড়িয়ে চলুন।
- কম চর্বিযুক্ত স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করবেন।
- দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
- ভিটামিন বি৬, ভিটামিন ই১ (থায়ামিন) ও ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার বেশি খান।
- খুব ব্যথা হলে পিরিয়ডের আগে–পরে ব্যথা কমানোর ওষুধ খাওয়া যায়।
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ড্যানাজোলের প্রয়োগ করা যায়।
- ক্যাফেইন এড়িয়ে চলা ও লবণ কম খাওয়া উচিত।
এরপরও স্তনে মৃদু ব্যথার সঙ্গে চাকা অনুভব করা, নিঃসরণ বা অন্য কোনো উপসর্গ দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম, রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগ, আহ্ছানিয়া মিশন ক্যানসার অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা