সৌদি আরবের অর্থনীতিকে বহুমুখী স্তম্ভের ওপর দাঁড় করাতে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে রাজকীয় সৌদি সরকার। হজ ও ওমরাহর বাইরে পর্যটন খাতে নিজেদের বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে চায় দেশটি। তারই অংশ হিসেবে ঢাকায় গত ২৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে রোড শো। এসব বিষয়ে সঙ্গে কথা বলছেন সৌদি ট্যুরিজম অথরিটির (এসটিএ) এশিয়া প্যাসিফিকের প্রধান আলহাসান আল-দাব্বাগ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাহরাম খান।
সম্প্রতি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে কথা হয় আলহাসান আল-দাব্বাগের সঙ্গে। তিনি বলেন, সৌদি আরবের স্থিরকৃত ভিশন-২০৩০ মূলত তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে। প্রথমত একটি সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়ে তোলা, দ্বিতীয়ত প্রাণবন্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ এবং তৃতীয়ত একটি স্বপ্নদর্শী জাতি হিসেবে সৌদি আরবের পরিচিতিকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া। এ লক্ষ্যে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে ‘নুসুক’ শীর্ষক একটি ডিজিটাল অ্যাপ উদ্বোধন করা হয়েছে।
আলহাসান আল-দাব্বাগ বলেন, নুসুক হচ্ছে রাজকীয় সৌদি সরকারের একটি সমন্বিত ডিজিটাল উদ্যোগ যার মাধ্যমে হজ, ওমরাহসহ সৌদি ভ্রমণে সব ধরনের সহযোগিতার জন্য চমৎকার একটি ফ্ল্যাটফর্ম। এই অ্যাপটি ব্যবহার করে সৌদি আরবের ভিসা প্রক্রিয়াকরণ থেকে শুরু করে বিমান টিকিট, হোটেল ভাড়া, গাড়ি ভাড়া, রেস্টুরেন্টে খাবারসহ একজন পর্যটকের যা প্রয়োজন তার প্রায় সবই পাওয়া সম্ভব। বর্তমানে নুসুক অ্যাপের মাধ্যমে ১২০টি সেবা পাওয়া যাচ্ছে। পর্যায়ক্রমে প্রয়োজনীয় আরও অনেক সেবা নুসুক অ্যাপের ফিচারে যুক্ত হবে।
নুসুক অ্যাপ ভ্রমণকারীদের জন্য একটি উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে উল্লেখ করে আলহাসান বলেন, এর মাধ্যমে ভ্রমণকারীরা অন্যদের সঙ্গে তার প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধাগুলো তুলনা করতে পারবেন। ফলে ভ্রমণকারী তার জন্য সুবিধাজনক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। এই অ্যাপে শুধু হজ ও ওমরাহ নয়, সৌদি আরবের পর্যটন খাতের সব সেবার সঙ্গে যুক্ত।
২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ৩০ লাখের বেশি পর্যটক সৌদি আরব ভ্রমণ করবে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে আলহাসান বলেন, চলতি বছর ৩ লাখের বেশি বাংলাদেশি সৌদি আরব ভ্রমণ করেছেন। তাদের বেশির ভাগই ওমরাহ পালন করেছেন। পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করা এবং ব্যবসার কাজেও কেউ কেউ গেছেন। আমাদের টার্গেট শুধু হজ বা ওমরাহ নয়। বাংলাদেশিরা তাদের বিদেশে ছুটি কাটানোর জায়গা হিসেবেও যেন সৌদি আরবকে পছন্দ করেন সেই আকর্ষণ তৈরি করা। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশে তারা একটি অফিস চালু করেছেন। যাতে ট্যুর অপারেটর ও ট্রাভেল এজেন্টদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা যায়।
এসটিএ এশিয়া প্যাসিফিকের এ শীর্ষ কর্মকর্তা আরও বলেন, বাংলাদেশের যারা সৌদি আরবে কাজ করার জন্য থাকেন তাদের পরিবারকে এখন টানা তিন মাসের জন্য সৌদি আরবে থাকার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। তারা শুধু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে গিয়ে থাকবেন তা নয়, সৌদি আরবের যে কোনো শহরে বা পর্যটন স্পটে ভ্রমণ করতে পারবেন। তিনি আরও জানান, আগে ওমরাহর জন্য কম সময়ের ভিসা দেওয়া হতো। এখন সেটা ৯০ দিন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। যে কোনো বাংলাদেশি ওমরাহ পালনের আগে বা পরে সৌদি আরবের মতো চমৎকার একটি দেশের নানা প্রান্তের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।