সৌদিতে অস্থির ইউরোপের দলবদলের বাজার

0
179
ইউরোপের ফুটবল বাজারে সৌদি আরবের দাপট।

অর্থের ঝনঝনানিতে দলবদলের বাজার উথাল-পাথাল করে দিয়েছে সৌদি আরবের ক্লাবগুলো। যার শুরুটা হয়েছিল ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে টানার মধ্য দিয়ে। এর পর করিম বেনজেমাও পাড়ি জমান সেখানে। গত ২৪ ঘণ্টায় এনগোলা কান্তে, হাকিম জিয়াস, খালিদু কোলেবালিসহ চারজন তারকা ফুটবলার ইউরোপ থেকে সৌদি আরবের ক্লাবে নাম লিখিয়েছেন। চলতি গ্রীষ্মকালীন দলবদলে আরও যে কত বড় বড় নাম মরুর দেশে যায়, সেটাই দেখার বিষয়!

রোনালদো-বেনজেমা-কান্তেদের না হয় বয়স হয়ে গেছে। ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসে এমন বিশাল অর্থের হাতছানি উপেক্ষা করা ভীষণ কঠিন। বুড়ো বয়সে এখানে দু-তিন মৌসুম খেলে যে টাকা পাওয়া যাবে, তা দিয়ে বাকি জীবনটা অনায়াসে আরাম-আয়েশে কাটিয়ে দেওয়া যাবে। তাই বুড়োদের সৌদি লিগে যাওয়া মোটেও অস্বাভাবিক কিছু না। তাই বলে রুবেন নেভেসের মতো ২৬ বছর বয়সী তরুণ, যাঁর প্রতি কিনা বার্সেলোনা-লিভারপুলের মতো বিশ্বের সেরা ক্লাবগুলোর নজর ছিল, তিনি যখন অর্থের টানে সৌদি ক্লাবে নাম লেখান, তখন ফুটবলের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটা শঙ্কা চলেই আসে।

পর্তুগিজ এই মিডফিল্ডার ভালো করেই জানেন, সৌদি আরবে ক্লাব ফুটবল খেললে জাতীয় দলের বিবেচনায় তিনি পেছনে পড়ে যাবেন। কিন্তু অর্থের কারণে তিনি জাতীয় দলের চিন্তা অনেকটা বিসর্জনই দিয়েছেন। এই অর্থের লোভে আরও অনেকেই সৌদিতে পাড়ি জমাতে পারেন। সৌদি লিগ কর্তৃপক্ষ সবচেয়ে মরিয়া ছিল লিওনেল মেসিকে নেওয়ার জন্য। আর্জেন্টাইন জাদুকরের জন্য দেড় বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব দিয়েছিল সৌদির ক্লাব আল হিলাল।

মেসিকে টানতে ব্যর্থ হওয়ার পর বিশ্ব ফুটবলের আরেক বড় তারকা নেইমারকে দলে ভেড়ানোর চেষ্টা শুরু করে দিয়েছে তারা। ব্রাজিলিয়ান তারকা আসন্ন দলবদলে পিএসজি ছাড়তে পারেন। গুঞ্জন রয়েছে, বেতন কমিয়ে হলেও নাকি নেইমার সাবেক ক্লাব বার্সায় ফিরতে রাজি। তবে বিশ্বরেকর্ড করে পিএসজিতে যাওয়া এ তারকাকে টানতে বড় ট্রান্সফার ফি গুনতে হবে, বার্সার সেই অর্থ নেই। নেইমারের জন্য পিএসজিকে মোটা অর্থ দিতে প্রস্তুত আল হিলাল। তাই গুঞ্জনটা ধীরে ধীরে ডালপালা মেলছে।

বার্সাকে বিদায় জানানো সার্জিও বুসকেটসকেও টানার চেষ্টা করছে সৌদি লিগ। স্প্যানিশ এ তারকার জন্য আল হিলাল, আল নাসর ও আল শাব আগ্রহী। বিশ্বকাপজয়ী ফরাসি গোলরক্ষক হুগো লরিসও টটেনহামকে বিদায় জানিয়েছেন। ক্যারিয়ারের শেষ সময়টা ছেলেবেলার ক্লাব ‘নাইস’ এ কাটানোর জন্যই এ সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছিলেন ৩৬ বছর বয়সী লরিস। কিন্তু তাঁকে এক সৌদি ক্লাব টটেনহামের চেয়ে তিন গুণ বেশি বেতনের প্রস্তাব দিয়ে বসেছে। এই বয়সে এত অর্থের হাতছানি উপেক্ষা করেন কীভাবে!

ইন্টার মিলানের মার্সেলো ব্রজোভিচের দিকেও নজর পড়েছে রোনালদোর ক্লাব আল নাসরের। একদা বিশ্বের অন্যতম সেরা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে বিবেচিত হওয়া ক্রোয়াট এ তারকা গত মৌসুমে চোটের কারণে বেশ ভুগেছেন, ইন্টারের প্রথম একাদশে অনিয়মিতও হয়ে পড়েছেন। এ সুযোগটাই নিতে চাইছে আল নাসর। ২৫ মিলিয়ন ইউরোতে তাঁকে ছেড়ে দিতে পারে ইন্টার। তাই ৩০ বছর বয়সী ব্রজোভিচের সৌদিতে যাওয়ার গুঞ্জন রয়েছে।

এ ছাড়া বার্সার জর্দি আলবা, লিভারপুল ছেড়ে যাওয়া রবার্তো ফিরমিনোর সৌদিতে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইউরোপের আরেক তারকা স্ট্রাইকার রুমেলু লুকাকু তো আল হিলালের সঙ্গে পারিশ্রমিক নিয়ে দর কষাকষি করছেন। তবে ব্যতিক্রমও রয়েছে। বিশাল অর্থের লোভ দেখিয়েও ম্যানসিটি ছেড়ে যাওয়া ইল্কে গুন্দোয়ানকে টানা যায়নি। ৩০ বছর বয়সী এ জার্মান মিডফিল্ডার বার্সায় যোগ দিয়েছেন। সিটির ট্রেবল জয়ের আরেক রূপকার বার্নার্দো সিলভাকেও টলাতে পারেনি সৌদির ক্লাব আল হিলাল। পিএসজি কিংবা বার্সায় যোগ দিতে পারেন পর্তুগিজ এ তারকা।

রিয়াল মাদ্রিদের বর্ষীয়ান মিডফিল্ডার লুকা মডরিচকেও রাজি করাতে পারেনি আল হিলাল। তিন মৌসুমের জন্য ক্রোয়াট তারকাকে ২০০ মিলিয়ন ইউরো দিতে চেয়েছিল তারা। টটেনহামের কোরিয়ান তারকা সন হেউয়াং-মিনও ফিরিয়ে দিয়েছেন সৌদির প্রস্তাব। এমনকি দুই কোচ হোসে মরিনহো ও স্টিভেন জেরার্ড ফিরিয়ে দিয়েছেন সৌদি ক্লাবের প্রস্তাব।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.