সোনার দুল বন্ধক রেখে পরীক্ষায় বসার ব্যবস্থা করেছিলেন মা

0
145
মায়ের সঙ্গে ম্যাকলিন, ছবি: সংগৃহীত

ম্যাকলিন চাকমা

মা আমার কাছে শত সংগ্রামের প্রতীক। রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়নে তাঁর বেড়ে ওঠা। মা তাঁদের ভাইবোনদের মধ্যে সবার বড়। ১৯৮৪ সালে মায়ের পরিবারকে ভারতের মিজোরামে উদ্বাস্তু হতে হয়েছিল। শৈশবের কিছু সময় তাঁকে সেখানে কাটাতে হয়েছে। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলে রাঙামাটির বরকলের হরিণায় আবার চলে আসেন তাঁরা। সেখান থেকেই মূলত তাঁর সংগ্রাম শুরু। সময় পেলেই আমাকে সেই সংগ্রামের কথা শোনান মা।

আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবার। আমরা দুই ভাই–বোন। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হয়েছে এবং হচ্ছে। পরিবারের কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রাঙামাটির সুবলংয়ের বিরেচমরা পাহাড় থেকে ভারতের সীমান্তবর্তী হরিণা পাহাড় পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে জুমচাষ করতে হয়েছে। অভাব-অনটন সব সময় লেগেই ছিল। ২০২০ সালে আমার যখন চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার ফরম জমা নেওয়া চলছিল, ঠিক একই সময়ে বোনেরও ডিগ্রি ফাইনাল পরীক্ষার ফরম জমার তারিখ পড়ে। কোথা থেকে টাকার জোগাড় হবে, ভেবে দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন বাবা। সে সময় সোনার দুল বন্ধক রেখে টাকা জোগাড় করেছিলেন মা।

মা সব সময় বাবাকে অনুপ্রেরণা দেন। আর আমাদের দেন সাহস। সব সময় বলেন, ‘তোমরা ভালোভাবে লেখাপড়া করো, টাকার চিন্তা তোমাদের করতে হবে না। এমনিতেই ম্যানেজ হয়ে যাবে।’ আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার পেছনে মায়ের অবদান অনেক। তাঁর একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো, কষ্টগুলোকে ভেতরে লুকিয়ে রাখতে জানেন। আমাদের বুঝতে দেন না। অথচ আমার হাতে যখন টাকা থাকে না, তিনি ঠিকই বোঝেন, ব্যবস্থাও করে ফেলেন।

এ রকম হাজারো গল্প মাকে নিয়ে বলা যাবে। মা, মা-ই। তাঁর কোনো তুলনা হয় না।

মা, মুই তরে ভজমান কোচপাঙ (মা, আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি)।

লেখক: ম্যাকলিন চাকমা, শিক্ষার্থী, পালি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.