
ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু পরিবেশে গণতন্ত্র এবং নির্বাচনের চর্চা হবে বলে প্রত্যাশার কথা জানিয়েছে সেনাবাহিনী। তারা বলছে, ‘এই নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করছে, আমরা তাদের মঙ্গল কামনা করি।’
আজ সোমবার দুপুরে সেনাসদরের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই প্রত্যাশার কথা জানানো হয়েছে। ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেস এ-তে অনুষ্ঠিত এই ব্রিফিংয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন সেনা সদরের মিলিটারি অপারেশনস পরিদপ্তরের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনের সঙ্গে সেনাবাহিনীর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এর আগেও সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে। তবু কিছু স্বার্থান্বেষী মহল বিভিন্ন মাধ্যমে কিছু প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর চেষ্টা করছে। তবে এগুলো করে তারা খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না।
জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা জেনেছি নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করা হবে। তবে নির্বাচন কমিশন থেকে এখন পর্যন্ত আমরা কোনো আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা পাইনি। কিন্তু সামনের নির্বাচন নিয়ে আমাদের মধ্যে একটা প্রস্তুতি অবশ্যই রয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে আমাদের যে দায়িত্ব দেওয়া হবে, সে অনুযায়ী সর্বোচ্চ পেশাদারত্বের সঙ্গে আমরা কাজ করব।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি নিয়ে কর্নেল শফিক আরও বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে। ৮০ শতাংশের বেশি হারানো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো যে ২০ শতাংশ অস্ত্র পাওয়া যায়নি, সেগুলো যত দ্রুত সম্ভব সময়ের মধ্যে উদ্ধারে অভিযান চলমান আছে। আমরা আশা করছি, এসব কার্যক্রম একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে সহায়তা করবে।’
মব বা উচ্ছৃঙ্খল জনতার সংঘবদ্ধ আক্রমণ নিয়ে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘মবের ক্ষেত্রে আমাদের জিরো টলারেন্স। যেখানে যখন মব হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। কয়েকটি জায়গায় যেখানে যেতে দেরি হয়েছে, সেখানে তথ্যদাতার কাছ থেকে তথ্য পেতে আমাদের বিলম্ব হয়েছে।’
কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যেকোনো ঘটনা ঘটার পরে সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সেখানে মোতায়েন করা হয়। তারপর সেনাবাহিনীকে যখন বলা হয়, ততক্ষণে কিছুটা কালক্ষেপণ হয়ে যায়। তারপরও নিকটস্থ ক্যাম্প থেকে পেট্রোল পাঠালেও কিছুক্ষণ বিলম্ব হয়। এই সময়ের মধ্যে কোনো ঘটনা যদি ঘটে যায়, সেটার দায়ভার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিতে পারে না। এমন একটি উদাহরণ দেখাতে পারবেন না, যেখানে আমাদের অনুরোধ করা হয়েছে কিন্তু আমরা যাইনি। অথবা সেনাবাহিনীর সামনে মব হয়েছে, কিন্তু অ্যাকশন নেয়নি। আমাদের ওপর আস্থা রাখুন। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশা করছি সামনের দিনগুলোতে এ ধরনের ঘটনা কমে আসবে।’
গুম–সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে কর্নেল শফিক বলেন, অনুসন্ধানের জন্য কমিশনে যাদেরকে ডাকা হয়েছে, সবাই কমিশনের সঙ্গে কথা বলেছে, সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে। এখনো সহযোগিতা করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে কোনো সহযোগিতা দরকার হলে সেনাবাহিনী সেটাও করে যাবে। এর বাইরে কিছু শুনে থাকলে সেটা গুজব।
আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি কোনো দলের জন্য এই মিছিলগুলো করার নিষেধাজ্ঞা থেকে থাকে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবশ্যই তা খতিয়ে দেখবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
সেনাবাহিনী নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত কিছু কর্মকর্তার বিভিন্ন বক্তব্য প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সামাজিক মাধ্যমে কে কতটুকু বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার করছে, সেটার বস্তুনিষ্ঠতা বিচারের অনুরোধ করছি।’
সীমান্তে আরাকান আর্মির তৎপরতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্ট গার্ড এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে। সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিবিড়ভাবে বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করছে। এ–বিষয়ক পরিস্থিতি অবনতির দিকে গেলে সম্মিলিতভাবে সেটাকে মোকাবিলার চেষ্টা করা হচ্ছে।