ফরীদি বলেছিলেন, জীবনটাই তো একটা কৌতুক

0
76
আজ হুমায়ুন ফরীদির ৭১ তম জন্মদিন

মঞ্চ, টিভি নাটক ও চলচ্চিত্র অঙ্গনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম হুমায়ুন ফরীদি।  সোমবার (২৯ মে) এই কিংবদন্তী অভিনেতার ৭১তম জন্মদিন। বিশেষ এই দিনটিতে তাকে নিয়ে বলেছেন দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও বন্ধু রাইসুল ইসলাম আসাদ

আমার ও ফরীদির [হুমায়ুন ফরীদি] জন্ম কাছাকাছি সময়ে। যে জন্য দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক ছিল অন্যরকম। আত্মার সম্পর্ক। তার সঙ্গে দীর্ঘদিন আমি ঢাকা থিয়েটারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করেছি। অভিনয় জীবনের বাইরেও তার সঙ্গে আমার নানা বিষয় নিয়ে কথা হতো। মঞ্চ, টেলিভিশন ও সিনেমায় আলোড়ন তোলা এই অভিনেতা অসাধারণ অভিনয়ের মাধ্যমে সব শ্রেণির দর্শকের কাছে অধিক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী ছিলেন ফরীদি। অসম্ভব বন্ধুবৎসল। বন্ধুবৎসল বললেও কম বলা হবে। বন্ধুর বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ার ক্ষমতা যেমন তার ছিল, ঠিক তেমনই বন্ধুর আনন্দে সবাই মিলে ভাগাভাগি করে নেওয়ার ক্ষমতাও ছিল। আমি আমার জীবনে মানুষের যেসব মানবিক দিক সম্পর্কে জানি, তার প্রতিটিই দেখেছি ফরীদির মধ্যে। ফরীদি যখন মঞ্চ ও টেলিভিশন নাটকের প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা, তখন থিয়েটারের নাটকেরও নির্দেশনা দিয়েছেন। সেখানেও আমি তার সৃজনশীলতার প্রকাশ দেখেছি। কিছু মানুষের জন্মই হয় শিল্পী হওয়ার জন্য। ঠিক সে রকম একজন মানুষ ছিলেন ফরীদি। একটা সাধারণ জিনিস কীভাবে অসাধারণ করে ফুটিয়ে তুলতে হয়, সেটাও জানতেন। একা একা যখন সময় কাটাই, তখন প্রায়ই ফরীদির কথা মনে করে হাসি। এত ভালো কৌতুক বলতেন। যেখানেই যেতেন, সব সময় মাতিয়ে রাখতেন। আমি সব সময় ভাবতাম, মানুষের এত কৌতুক মনে থাকে কীভাবে! একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম। তখন ফরীদি বলেছিলেন, আরে, জীবনটাই তো একটা কৌতুক।

একটা সময় ছিল, যখন টিভি নাটক মানেই ফরীদি। চলচ্চিত্রে যখন অভিনয় করতেন, তখন হুমায়ুন ফরীদির অভিনয় দেখতে দর্শক হলে যেতেন। সেই হুমায়ুন ফরীদি ২০০৩ সাল থেকে সিনেমাতে অভিনয় প্রায়ই ছেড়ে দিয়েছিলেন। অথচ ১৯৮৫ সালের দিকে ফরীদি অনুধাবন করেন, তিনি আসলে অভিনয় ছাড়া আর কিছু করতে পারবেন না। অন্য কিছু থেকে রোজগার করে জীবন নির্বাহ করা সম্ভব নয়। তার একমাত্র অবলম্বন কিংবা পুঁজি হচ্ছে অভিনয়।

ফরীদির নাট্যাভিনয় থেকে চলচ্চিত্রে আসা ছিল অনেক নাটকীয়। দেশীয় চলচ্চিত্রের তখনকার বেহাল অবস্থা দেখে রুপালি পর্দার জন্য কাজ করবেন কিনা, এ বিষয়ে দ্বিধায় ছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত নিজের দৃঢ়তায় এক নতুন আঙ্গিক নিয়ে বড় পর্দায় আসেন ফরীদি। ১৯৯০ সাল থেকে শুরু করেন চলচ্চিত্রে যাত্রা। ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি আমরা তাকে হারিয়েছি চিরতরে। হুমায়ুন ফরীদি ছিলেন আমাদের আইকন। অভিনয়কে কীভাবে জীবন্ত করে উপস্থাপন করতে হয়, তা জানতেন তিনি। ফরীদি ছিলেন একজন ক্ষমতাবান অভিনয়শিল্পী। নাটক, সিনেমা- প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন সফলতার শীর্ষে। নায়ক, ভিলেন বা কমেডি- যে চরিত্রই করুন না কেন, সেটাকে অভিনয় মনে হয়নি; এতটাই সাবলীল ছিল তার পর্দায় উপস্থিতি। বাস্তব জীবনেও সাবলীল ছিলেন তিনি। বাস্তবতার সঙ্গে সহজে মানিয়ে নিতে পারতেন।

ফরীদির মধ্যে অনেক ভালো গুণ ছিল, যা অনুকরণীয়। কত সাধারণভাবে যে অসাধারণ সব কথা বলে ফেলতে পারতেন, তা দেখে মুগ্ধ হতাম। আজ তার জন্মদিন। বেঁচে থাকলে ৭১ বছরে পা রাখতেন। জন্মদিন এলেই ফরীদি কেমন যেন চুপচাপ হয়ে যেতেন। তার জন্মদিন ঘটা করে পালন হোক, তা চাইতেন না। তবুও তার প্রিয় মানুষেরা এই বিশেষ দিনে কিছু না কিছু আয়োজন করত। তার ৬০তম জন্মদিনকে ঘিরে ছায়ানটে আয়োজন করা হয়েছিল ‘বালাই ষাট’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের। ওই অনুষ্ঠানে আগের মতো যেন চুপচাপই ছিলেন। এটিই ছিল তার সর্বশেষ জন্মদিন উদযাপনের অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে সবাই মনোযোগী শ্রোতা হয়ে শুনেছিলেন ফরীদির বক্তব্য। কী অসাধারণ ক্ষমতা নিয়ে জন্ম নিয়েছিলেন। ফরীদির মতো শিল্পী যে কোনো দেশে জন্মাতে যুগ যুগ সময় লাগে। অভিনয় ছিল ফরীদির জীবন। দুর্দান্ত নানা কর্ম আর তার অসাধারণ সব সৃষ্টিতে তিনি আছেন চির অমলিন হয়ে। তার দাপুটে অভিনয় তাকে বাঁচিয়ে রাখবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.