আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য করতে জন্য বিদ্যমান আইনি কাঠামো ‘যথেষ্ট’ বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদলকে জানিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার। তিনি বলেছেন, আমাদের যে ম্যাকানিজম আছে, সেটি যথেষ্ঠ। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে অন্য কিছু করার দরকার নেই। বুধবার বিকেলে সচিবালয়ের নিজ দপ্তরের ইইউ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতে এসব কথা বলেছেন তিনি।
ইউরোপীয় প্রতিনিধি দলে ছিলেন জ্যেষ্ঠ নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও পর্যবেক্ষক রিকোর্ডো চেলেরি, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ দিমিত্রি আইওনাও এবং আইন বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিনা ডোস রামোস আলভেস।
পরে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব গোলাম সারওয়ার সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইইউ প্রতিনিধিদল জানতে চেয়েছে, আইনি কাঠামো যেটি আছে, তা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট কিনা। আমরা বলেছি যে আইনি কাঠামো যা আছে, তা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট। যেমন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে যে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) পাস হয়েছে, সেখানে ৯১ (এ) ধারায় নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। তারপরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৯১ (এ)(এ) ধারা যুক্ত করে নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করার ব্যবস্থা করেছেন। তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।’ এ সময় প্রতিনিধি দলের সামনে আরপিওর কয়েকটি ধারার কথা তুলে ধরেন সচিব।
আইনসচিব আরও বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে আইন করা হয়েছে, তা উপমহাদেশে আর নেই। তাঁদের বাছাই করার জন্য অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি। এ ছাড়া সদস্য হিসেবে ছিলেন হাইকোর্টের একজন বিচারপতি, মহা হিসাব নিরীক্ষক, সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান ও সুশীল সমাজের দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। এসব তথ্য দেওয়ার পর ইইউ প্রতিনিধিদল সন্তুষ্ট হয়েছে।’
নির্বাচনের সময় জুডিশিয়াল সার্ভিসের বিচারক ও কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন করার প্রসঙ্গে তুলে ধরে সচিব বলেন, ‘বিচার বিভাগ স্বাধীন। যখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়, তখন একজন যুগ্ম জেলা জজের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তফসিলের দিন থেকে ফলাফলের গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত কমিটি দায়িত্ব পালন করে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন নিয়ে যদি কোনো ধরনের অনিয়ম বা এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে তারা (কমিটি) প্রতিবেদন তৈরি করে নির্বাচন কমিশনের কাছে দেয়। তখন সে অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নিতে পারে।’
এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন বিচারিক কর্মকর্তার জন্য চাহিদা দিলে সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ নিয়ে বিচারিক কর্মকর্তাদের নির্বাচন কমিশনে ন্যস্ত করা হয় বলে জানান সচিব। তিনি বলেন, ‘তখন তাঁরা সবকিছুই করেন নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে। বিচারিক কর্মকর্তা ভোট গ্রহণের দিন এবং আগের দুই দিন ও পরের দুই দিন মিলিয়ে মোট পাঁচদিন দায়িত্ব পালন করেন। তখন তাঁরা সামারি ট্রায়াল করে আরপিও অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।’ এটিও প্রতিনিধি দল গ্রহণ করেছেন বলে জানান আইন সচিব।
আরপিও নিয়ে প্রতিনিধিদের কোনো পর্যবেক্ষণ ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের আইনগত কাঠামোর কথা তাদের বলেছি।’ এসময় আইন মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।