সুবলং শাখা বনবিহারে ৩১তম দানোত্তম কঠিন চীবরদান অনুষ্ঠিত

0
414
আর্যনন্দ মহাস্থবির ভান্তেকে চীবর প্রদান করছেন ধল কুমার চাকমা

জুরাছড়ি শাখা বনবিহারে ৩১তম দানোত্তম কঠিন চীবরদান অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৩/৪ নভেম্বর দুইদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানটি গতকাল সমাপ্ত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন রাঙ্গামাটি আসনের সাংসদ জনাব দীপংকর তালুকদার এমপি ও সভাপতি, খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত জাতীয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এবং সভাপতি, জেলা আওয়ামী লীগ রাঙ্গামাটি।

দীপংকর তালুকদার বলেন, আমরা যারা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী কঠিন চীবরদান করি, চীবরদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা মানে বড়ই সৌভাগ্যের ব্যাপার ও পূণ্য সঞ্চয়ের সুযোগ হয়। কারণ এটা ইচ্ছে হলে বছরের যে কোন সময় করা যায় না একটা নির্দিষ্ট সময়ে এটা করতে হয়। সে কারণে আমিও নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি।

জুরাছড়ি সুবলং বনবিহারের অনু্ষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করছেন দীপংকর তালুকাদর এমপি।

তিনি আরো বলেন, বিশ্বের এক সময় সেরা ধনী বিল গেটস বলেছেন তুমি এমন কোন ধন সম্পত্তি অর্জন করো না যেন মৃত্য সময় ছেলে মেয়েরা ডাক্তরের পরিবর্তে ওকিল ডেকে না আনে। তার মানে হলো সকলের জন্য কিছু করা এটি বুদ্ধের দর্শন। এই অপরের জন্য চিন্তা করার নামই হচ্ছে মৈত্রী ভাবনা। বুদ্ধ বলেছেন বনভান্তে বলেছেন জ্ঞান বুদ্ধি কৌশল নিয়ে চলতে। আমরাও যেন সেই মৈত্রী নিয়ে একতাবদ্ধ হয়ে থাকতে পারি, চলতে পারি, এই আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত রয়েছেন প্রবর্তক চাকমা, সদস্য রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ, জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা প্রাক্তন সদস্য রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ, সফর সঙ্গী ওয়াশিংটন চাকমা প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে উপস্থিত হয়েছেন জোন কমান্ডার জনাব লেঃ কর্নেল জুলকিপলি আরমান বিখ্যাত এবং মেজর আশিক। জ্ঞানপ্রিয় ভান্তেকে দু’জনে চীবর প্রদান করেন।

লেঃ কর্নেল জুলকিপলি বলেন, আমরা এই জোনে আছি আপনদেরই অংশ, আপনাদের সকল অনুষ্ঠানে সুখে দুঃখে আমরা আছি । এজন্য আপনাদের সাথে শরিক হওয়ার জন্য আমাদের উপস্থিত হওয়া।

অনুষ্ঠানে সকালে দেশনা প্রদান করেন জ্ঞান প্রিয় মহাস্থবির রাঙ্গামাটি রাজবন বিহার, প্রিয়তিষ্য মহাস্থবির সদাচরন অরণ্য কুঠির, জ্ঞানদ্বীপ স্থবির বর্মাছড়ি লক্ষীছড়ি। বিকালের পর্বে দেশনা প্রদান করেন আর্যনন্দ মহাস্থবির জুরাছড়ি শাখা বনবিহার এাবং জ্ঞানপ্রিয় মহাস্থবির।

সাবেক উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যানের পক্ষে চীবর প্রদান করেন সিন্দু প্রিয় চাকমা।

অনুষ্ঠানে মিডিয়া পক্ষ থেকে উপস্থিত রয়েছেন সিনিয়র সাংবাদিক সত্রং চাকমা, জেলা প্রতিনিধি একুশে টিভি ও দৈনিক সমকাল, মহাবীর চাকমা এডিটর, দৈনিক প্রভাত আলো ও এফআইটিভি, চিরন বিকাশ দেওয়ান, বাংলাদেশ বিচিত্রা, ফ্রি লেন্সার ফটোগ্রাফার ছন্দসেন চাকমা প্রমুখ।

বিশেষ প্রার্থনা পাঠ করেন ধল কুমার চাকমা, সভাপতি, জুরাছড়ি শাখা বনবিহার পরিচালনা কমিটি।শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন জাপানি বিজয় দেওয়ান সহসভাপতি জুরাছড়ি শাখা বনবিহার পরিচালনা কমিটি। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নিত্যানন্দ চাকমা, প্রধান শিক্ষক মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পৃথ্বিশা চাকমা।

জোন কমান্ডার লেঃ কর্নেল জুলকিপলি আরমান বিখ্যাত এবং মেজর আশিক।

এই কঠিন চীবর অনুষ্ঠানের শুরুতে তুলা থেকে সুতা তৈরী, সুতার রং দেওয়া, সুতা থেকে বেইন তৈরী এরং সেই বেইন বা কাপড় সেলাই করে চীবর তৈরী করে বিহারে ভিক্ষুদের উদ্দেশ্যে দান করা হয়। এই কার্যক্রম ২৪ ঘন্টার মধ্যে তৈরী করে দান করতে হয়, সেকারণে কঠিন চীবরদান বলা হয়। এ টি শুরু করেন বুদ্ধের সময়কালে মহা উপাসিকা বিশাখা।

রাঙ্গামাটি জেলার সব থেকে ছোট উপজেলা হলো জুরাছড়ি উপজেলা। উপজেলাটা ছোট হলেও রূপ সৌন্দর্যে ভরপুর। জরাছড়িতে প্রথম শাখা বনবিহার স্থাপিত হয় ১৯৯২সালে। এখানে রয়েছে ১২৬ফুট দীর্ঘ বড় বুদ্ধ মুর্তি এবং বনভান্তে মিউজিয়াম। পঞ্চবুদ্ধ স্মৃতির উদ্দেশ্যে প্যাগোডা নির্মানের কাজে অর্থ বরাদ্দ করেন উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা।

অনুষ্ঠানে পূণ্যার্থীদের একাংশ

অনুষ্ঠানে কয়েক হাজার পূণ্যার্থী অংশ গ্রহনে অনুষ্ঠানিটি সৌন্দর্যমন্ডিত ও মুখরিত করে তোলে। দুর দুরান্ত হতে আগত দর্শনার্থীদের ১২৬ফুট দীর্ঘ বুদ্ধমর্তিটি তাদেরকে বিশেষ আকর্ষণ করেছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.