সেই বেদনাকে শক্তিতে রূপান্তর করেছি

0
124
হৃদি হক

আগামী আগস্টে মুক্তি পাচ্ছে ‘১৯৭১ সেই সব দিন’। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। এই ছবি দিয়েই চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে হৃদি হক— এর অভিষেক হচ্ছে। ছবি ও অন্যান্য প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে গত সোমবার সন্ধ্যায় কথা বলল ‘বিনোদন’—

শুটিং শুরুর পরপরই শিল্পী পরিবর্তন! থেমে থেমে শুটিং। অবশেষে মুক্তি পাচ্ছে আপনার প্রথম সিনেমা। কেমন ছিল প্রথম সিনেমার শুটিং?

২০২০ সালে শুটিং শুরু করি। তার আগে দীর্ঘ সময় গবেষণা করতে হয়েছে, যেহেতু পর্দায় আমরা একাত্তরের সময়টাকে তুলে ধরছি। শুটিংয়ে যখন নামলাম, তখন শুরু হলো কোভিড মহামারি, সেটাও একটা বাধা। তারপরই সিনেমার জন্য সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা এবং আমাদের পথপ্রদর্শক ড. ইনামুল হকের দেহাবসান ঘটল। সবকিছু মিলে এই ভ্রমণে যে বেদনা বহন করতে হয়েছে, সেই বেদনাকে শক্তিতে রূপান্তর করেছি। না হলে এই ভ্রমণে সফল হওয়া কঠিন হতো।

শুটিংয়ের আগে যে পরিকল্পনা ছিল, তা কি ঠিকঠাক বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন?

করতে পেরেছি। গবেষণা যেমন করেছি, তেমনিভাবে ১৯৭১-এর সময়টাকে ধারণ করেছি। সংলাপ, গান কিংবা সুরে আবেগটাকে যেন ধরতে পারি, সেই চেষ্টা করেছি। বাঙালি তো প্রচণ্ড আবেগপ্রবণ জাতি, আমরাও সেই আবেগ শতভাগ ঢেলেছি। আবেগ দিয়ে যেন দর্শক ছুঁতে পারি, সেই চেষ্টা করেছি। বাকিটা দর্শকের ওপর ছেড়ে দিয়েছি।

হৃদি হক
হৃদি হক

ছবিটির শুটিং শেষ করতে কত দিন লাগল?

আমাদের মোট শুটিং হয় ৫০ দিন। ঠাকুরগাঁওয়ে শুরু করেছি। গল্পটা ঢাকার হলেও মূল সেট ঠাকুরগাঁওয়ে বানিয়েছি। কারণ, ও রকম মুখোমুখি দোতলা বাড়ি—একাত্তরে ঢাকার যে পরিবেশ ছিল, সেটা আনার জন্য ওখানেই সেট বানিয়েছি। এর বাইরে পঞ্চগড়, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, রাজেন্দ্রপুর, ঢাকাসহ অনেক জায়গায় শুটিং করেছি।

আগে আপনি নাটক নির্মাণ করেছেন। সিনেমা নির্মাণে এসে কী পার্থক্য টের পেলেন?

ক্যানভাস তো অনেক বড়। ডিটেইলিং প্রচুর। খুব মনোযোগ দিতে হয়। গবেষণা, চিত্রনাট্য, প্রোডাকশন–সম্পর্কিত সবকিছু—লাইট হোক, সেট হোক, সবকিছুতে ডিটেইলিং অনেক বেশি। গভীরভাবে মনোযোগ দিতে হয়েছে। সবকিছু সূক্ষ্মভাবে করতে হয়েছে।

আর দুই মাস পর ছবিটি মুক্তি পাবে। কেমন লাগছে?

প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা মুক্তি আমার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। ডিস্ট্রিবিউটর, প্রেক্ষাগৃহ মালিক, স্পনসর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগের এই ব্যাপারটা আমার জন্য অন্য রকম অভিজ্ঞতা। বলা যায়, নতুন অভিজ্ঞতা।

হৃদি হক
হৃদি হক

ছবিটি মুক্তির জন্য আগস্ট মাস বেছে নেওয়ার বিশেষ কোনো কারণ আছে কি?

ঈদে কত ছবি মুক্তি পাচ্ছে, এত ছবির মধ্যে আসতে চাইনি। আমার মনে হয়েছে, ধারাবাহিকতাটা জরুরি। আশা করি, ঈদের ছবিগুলো এক থেকে দেড় মাস চলবে। ঈদের ছবির রেশ থাকতে থাকতে নতুন আরেকটা ভালো ছবি, বড় বাজেটের ছবি মুক্তি দিতে চাই। এটাকে পুরো সিনেমার জন্য ভালো ভেবে করেছি।

এই ছবির ভাবনা আপনার বাবা নাট্যজন ড. ইনামুল হকের। শুটিংয়ের সময়ে তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। তাঁকে ছাড়াই তাঁর ভাবনার কতটা বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন বলে মনে করছেন?

ড. ইনামুল হকের মূল ভাবনা থেকে একটা কাজ করতে পারছি, আমাদের প্রজন্মের যে কারও জন্য এটা তো অনেক বড় পাওয়া। ‘সেইসব দিনগুলি’ নামে বাবার একটা নাটক ছিল, তিনি যখন অনুমতি দিয়েছেন, তখন আমি বলেছি, এই নাটকের মূল ভাবনা নতুন করে চিত্রনাট্য করব এবং আরও বেশ কিছু ভাবনা ও চরিত্র তৈরি করব। এই অনুমতিও নিয়েছি, তিনি অসম্ভব আধুনিক একজন মানুষ ছিলেন। তিনি আমাকে মূল ভাবনা ঠিক রেখে এটা করার অনুমতি দিয়েছেন। আমার যেটা মনে হয়, যে আস্থাটা তিনি আমার প্রতি রেখেছেন, সেই আস্থাটা আমি শুধুমাত্র এই কাজে নয়, আমার পরবর্তী জীবনের সব সময়ে যাতে মূল্যায়ন করতে পারি, সেই চেষ্টা করে যাব।

ঢাকার আদাবর এলাকার একটি স্টুডিওতে সম্প্রতি ১৯৭১ সেই সব দিন চলচ্চিত্রের হাতে আঁকা পোস্টার ও ব্যানার উন্মোচন উপলক্ষে চলচ্চিত্রটির শিল্পী ও কলাকুশলীরা একত্র হন
ঢাকার আদাবর এলাকার একটি স্টুডিওতে সম্প্রতি ১৯৭১ সেই সব দিন চলচ্চিত্রের হাতে আঁকা পোস্টার ও ব্যানার উন্মোচন উপলক্ষে চলচ্চিত্রটির শিল্পী ও কলাকুশলীরা একত্র হন

এই ছবির পোস্টারে আপনারা হাতে আঁকা শিল্পীকে বেছে নিয়েছেন। এর পেছনে কোন ভাবনা কাজ করেছে?

আমাদের ছবির নাম হচ্ছে ‘১৯৭১ সেই সব দিন’, আমরা ভাবছিলামও, আমাদের সংস্কৃতির শিকড়ের সেই সব দিন যে কত রঙিন ছিল, কত সুন্দর ছিল। ছবির নাম যেহেতু এমন, তাহলে সেই সব দিনের রঙিন ভাবনাগুলোকে কীভাবে আমাদের ছবির সঙ্গে যুক্ত করতে পারি। আমাদের টিমের আড্ডাতে আলোচনা হচ্ছিল, আমরা কীভাবে পোস্টার, ব্যানার করতে পারি। আমরা দেখলাম, হাতে আঁকা পোস্টার প্রায় বিলুপ্ত, আমাদের কাজটা যিনি করেছেন, তিনিও দীর্ঘদিন পর এই কাজটি করলেন। নিশ্চয় আরও অনেকের ভাবনায় এমনটা আছে। আমাদের মনে হয়েছে এই জায়গাটাও তুলে ধরা জরুরি। আমরা বিশ্বাস করেছি যে পেছন ফিরে তাকানো মানে পিছিয়ে পড়া নয়।

আপনার পরিচালিত প্রথম ছবিতে অভিনয় করেছেন মামুনুর রশীদ, আবুল হায়াত, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, ফেরদৌস, লিটু আনাম, তারিন, সজল, সানজিদা প্রীতি, অর্ষা, আনিসুর রহমান মিলন, মৌসুমী হামিদ, সাজু খাদেম, শিল্পী সরকার অপু ও আপনিসহ অনেকে। এই ছবিতে প্রথম সারির পরিচিত অভিনয়শিল্পীদের বেশি দেখা গেছে। সাধারণত এমনটা খুব একটা দেখা যায় না। এত সব গুণী ও পরিচিত শিল্পী এক ছবিতে উপস্থাপনে কোনো বেগ পেতে হয়েছে কি?

একদমই বেগ পেতে হয়নি। সবাই এত আন্তরিকভাবে যুক্ত ছিলেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না, এটা ভীষণ আনন্দের অনুভূতি। আমাদের সমসাময়িক যাঁরা তাঁরা তো আছেন, সিনিয়র শিল্পীরা আরও বেশি আন্তরিকভাবে ইনভলভ ছিলেন। তাঁরা নিজেদের চরিত্রের প্রতি, গল্পের প্রতি অনেক বেশি সচেতন। যেহেতু বড় প্রজেক্ট, আমরা একটা ডিসিপ্লিন মেনটেইন করতে চেয়েছি। সময়টা যেন ঠিকমতো ধরতে পারি। আসলে একটা বড় দল হলে, নিয়মের মধ্যে না গেলে তখন ঝামেলাটা হয়।

পরিচালনার পাশাপাশি ছবিতে আপনি অভিনয়ও করেছেন। অভিনয় ও পরিচালনা দুটি সমন্বয় করেছেন কীভাবে?

কয়েকটা কাজ একসঙ্গে করার প্রক্রিয়ার মধ্যেই আমি বেড়ে উঠেছি। তবে কাজটা কিন্তু খুব কঠিন। আরেকটা কথা বলতে চাই, আমার নেপথ্য টিম অসাধারণ। সবাই যখন সবার কাজটা সঠিকভাবে করে, তখন অনেক কিছুই পেরে ওঠা যায়। আমরা এই টিম দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি, আমাদের বোঝাপড়াটাও দারুণ।

চলচ্চিত্র নির্মাণে কি আপনি নিয়মিত হবেন? নাকি মুক্তির পর প্রথমটির ফলাফল দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন?

(হাসি) ফলাফল দেখে সিদ্ধান্ত নেব না। এর মধ্যে থাকব, শিল্পের মধ্যে থাকতে হবে। এর বাইরে কোনো অপশন নেই। আমাদের তো ভীষণ চাওয়া, এটা যেহেতু পুরোপুরি বাণিজ্যিক ধারার ছবি, শতভাগ চেষ্টা করব, বেশি দর্শকের কাছে ছবিটা পৌঁছে দিতে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.