সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে জোর দাবি

0
10
৫৫তম বিএসএফ-বিজিবি মহাপরিচালক পর্যায়ের সমন্বয় সম্মেলন সামনে রেখে বিএসএফের মহাপরিচালক দলজিৎ সিং চৌধুরী বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীকে স্বাগত জানান। সোমবার নয়াদিল্লির আইজিআই বিমানবন্দরে, ছবি: এএনআই

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের স্বার্থে সীমান্ত হত্যা পুরোপুরি বন্ধের কথা বলা হয়েছে। বিজিবি বলেছে, সীমান্তের অপরাধীদের ধরা হোক। প্রচলিত আইনে শাস্তি দেওয়া হোক। কিন্তু সীমান্ত লঙ্ঘন করছে বলেই কাউকে গুলি করে মেরে ফেলা মোটেই মানবিক নয়। বাংলাদেশের কাছে বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর।

বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বার্ষিক এই বৈঠকে সীমান্ত হত্যা আক্ষরিক অর্থে শূন্যে নামিয়ে আনার বিষয়ে বিজিবির পক্ষ থেকে এই জোরালো দাবি জানানো হয়েছে। ভারতের পক্ষে বলা হয়, বিএসএফ সব সময় সেই চেষ্টা করে। কিন্তু কখনো কখনো সংগঠিত অপরাধচক্র এমন আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে যে গুলি চালানো ছাড়া উপায় থাকে না। এই প্রবণতা ও অপরাধ বন্ধে সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা রূপায়ণের ওপর জোর দিয়েছে বিএসএফ।

দিল্লির লোদি রোডের সিজিও কমপ্লেক্সে বিএসএফের সদর দপ্তরে গত মঙ্গলবার এই বৈঠক শুরু হয়েছে। আজ বুধবার ছিল বৈঠকের দ্বিতীয় দিন। বৃহস্পতিবার বৈঠকের তৃতীয় ও শেষ দিন। বিজিবি প্রতিনিধিরা বৃহস্পতিবারই ঢাকা ফিরে যাবেন।

বিজিবি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। ভারতের পক্ষে বিএসফ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বাহিনীর মহাপরিচালক দলজিৎ সিং চৌধুরী। এবারের এই বৈঠক হচ্ছে ৫৫তম। গত বছর বৈঠক বসেছিল ঢাকায়, ৫-৯ মার্চ। পরবর্তী বৈঠক ঢাকায় হওয়ার কথা।

বৈঠক সূত্রের খবর অনুযায়ী, সীমান্ত হত্যা ছাড়া বিজিবি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার ওপর। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পর ভারতের দিকে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া নিয়ে কোনো কোনো এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। বিএসএফের পক্ষ থেকে বৈঠকে বলা হয়, তাদের পক্ষ থেকে যা কিছু করা হয়েছে বা হচ্ছে, তা দুই দেশের স্বীকৃত বোঝাপড়া অনুযায়ী। বোঝাপড়ার বাইরে কিছু করা হচ্ছে না। বিজিবির উচিত দুই দেশের সার্বভৌম সরকারের সেই সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দেওয়া।

এর জবাবে বিজিবির পক্ষে বলা হয়, সেই বোঝাপড়াতেই বলা আছে, বেড়া দেওয়ার আগে তা কোথায় দেওয়া হবে, কীভাবে দেওয়া হবে সেই বিষয়ে দুই বাহিনী যৌথ জরিপ করবে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেই নীতিগত সিদ্ধান্ত মানা হচ্ছে না। সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে একতরফা। সেই কারণেই আপত্তি উঠেছে। কোথাও কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে।

সীমান্তজুড়ে চোরাচালান বন্ধ, অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণসহ সব বিষয়ই এই বৈঠকে আলোচিত হয়। সূত্রের খবর, বৈঠকে সৌজন্যের কোনো অভাব দেখা যায়নি। ভ্রাতৃত্বপূর্ণ আবহে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। আজ বিজিবি প্রতিনিধিদলের সম্মানে বিএসএফ নৈশভোজের আয়োজন করে।

অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের সফর অবশ্য সংক্ষিপ্ত। পাঁচ-ছয় দিনের জায়গায় মাত্র চার দিন। বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলের আগে সফরকারী প্রতিনিধিদল সরকারি আতিথ্যে দুই দেশের কোনো না কোনো দর্শনীয় স্থান পরিভ্রমণে যেত। এবার সেই ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.