সীমান্ত সহযোগিতার নতুন অঙ্গীকার বিজিবি–বিএসএফের

0
9
ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর শীর্ষ বৈঠকে বিএসএফের মহাপরিচালক দলজিৎ সিং চৌধুরী ও বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে বিএসএফের সদর দপ্তরে, ছবি: সংগৃহীত

সীমান্ত হত্যা ও সীমান্তে বেড়া দেওয়া নিয়ে যখনই কোনো প্রশ্ন উঠবে, তখনই বিজিবি ও বিএসএফ যৌথ আলোচনার ভিত্তিতে দ্রুত তার মীমাংসা করবে। বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। নয়াদিল্লিতে দুই বাহিনীর তিন দিনের এই বৈঠকে সীমান্ত হত্যা ও বেড়া দেওয়ার বিষয় দুটিই প্রাধান্য পেয়েছে।

বৈঠকের শেষ দিনে আজ বৃহস্পতিবার যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, সীমান্তে বেড়া দেওয়ার বিষয়টি বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে। সীমান্তের দেড় শ মিটার ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ হিসেবে স্বীকৃত। সেটা মেনে নিতে হবে। ওই এলাকায় স্থায়ী অবকাঠামো তৈরি করা যায় না। ১৫০ মিটারের বাইরে কোনো স্থাপনায় আপত্তি নেই। তিনি বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছে। যৌথ উদ্যোগে সমস্যা সমাধানের বিষয়ে দুই পক্ষ সম্মত।

বিজিবির মহাপরিচালক আরও বলেন, বেড়া দেওয়া নিয়ে আপত্তি দেখা দিলে বা প্রশ্ন উঠলে দুই বাহিনী যৌথভাবে এলাকা পরিদর্শনের পর সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে মেজর জেনারেল আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, ১৯৭৫ সালের দুই দেশের সীমান্ত চুক্তি পুনর্বিবেচনা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। কারণ, সেই আলোচনা এই বৈঠকের বিচার্য বিষয় ছিল না।

দুই বাহিনীর বৈঠকের পর আজ ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যেকোনো ধরনের সীমান্ত সমস্যা মেটাতে দুই বাহিনী সমন্বিতভাবে তৎপর হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে বিজিবির মহাপরিচালক আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগগুলো অতিরঞ্জিত। মিডিয়ার সৃষ্টি। তিনি বলেন, বিজিবির আওতায় যেসব এলাকা পড়ে, সীমান্তের ৮ কিলোমিটার পর্যন্ত সেখানে কোথাও দুর্গাপূজার সময় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। যেগুলো ঘটেছে তার চরিত্র ধর্মীয় নয়, রাজনৈতিক। বহু ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুরা জানিয়েছেন, তাঁরা ভীত, সন্ত্রস্ত। বিজিবি তাঁদের সুরক্ষার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে।

ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর শীর্ষ বৈঠকে বিএসএফের মহাপরিচালক দলজিৎ সিং চৌধুরী ও বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী নিজেদের মধ্যে দলিল বিনিময় করেন। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে বিএসএফের সদর দপ্তরে  
ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর শীর্ষ বৈঠকে বিএসএফের মহাপরিচালক দলজিৎ সিং চৌধুরী ও বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী নিজেদের মধ্যে দলিল বিনিময় করেন। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে বিএসএফের সদর দপ্তরে, ছবি: সংগৃহীত

৫ আগস্টের পর ভারত-বাংলাদেশের পুরো সীমান্ত এলাকায় অনুপ্রবেশের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে বলে উল্লেখ করেন বিজিবির মহাপরিচালক। বিএসএফের মহাপরিচালক দলজিৎ সিং চৌধুরীও সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ৫ আগস্টের পর ভারতে অনুপ্রবেশের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। অনুপ্রবেশ রুখতে বিএসএফ অত্যন্ত সতর্ক ও সচেতন জানিয়ে তিনি বলেন, দুই বাহিনীর নিজেদের মধ্যে যোগাযোগও খুবই ঘনিষ্ঠ। নিজেদের মধ্যে তাদের প্রায়ই বৈঠক হয়। এই সহযোগিতার জন্য দুই বাহিনীই প্রশংসার যোগ্য বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সীমান্ত হত্যা বন্ধের বিষয়টি বিজিবির পক্ষ থেকে এই বৈঠকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে তোলা হয়েছিল। সে প্রসঙ্গে বিএসএফের মহাপরিচালক দলজিৎ সিং চৌধুরী বলেন, সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশ যাতে না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে বিজিবিকে বারবার বলা হয়। কিন্তু তবু দীর্ঘ সীমান্তের কোথাও কোথাও দুষ্কৃতকারীরা সক্রিয় থাকে। বিএসএফ সতর্কভাবে তাদের মোকাবিলা করে। প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার না করার নীতি থেকে বিএসএফ সরেনি বলে উল্লেখ করেন দলজিৎ সিং চৌধুরী।

এ বিষয়ে বিএসএফের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সীমান্তে অপরাধ ও হিংসার মোকাবিলায় দুই বাহিনীই যৌথভাবে সক্রিয়। সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আর্থসামাজিক উন্নয়নের কাজ হাতে নেওয়া ও তথ্যের দ্রুত আদান-প্রদানের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, যাতে কোনো পক্ষে প্রাণহানি না ঘটিয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.