সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করল ভারত, বসিয়েছে নতুন ভাসমান চৌকি

0
9
ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)
ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকায় আকস্মিক নিরাপত্তা জোরদার করেছে নয়াদিল্লি। বিশেষ করে ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও সুন্দরবনসহ বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত অতিক্রমকারী নদীগুলোতে নতুন ভাসমান সীমান্ত চৌকি তৈরি করেছে।
 
শনিবার (৪ জানুয়ারি) ব্রিটিশ ইংরেজি দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
 
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টার ভারতের উত্তর-পূর্বাংশকে বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্ত করার হুমকি দেওয়ার পর সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে ভারত। যদিও গত ডিসেম্বরের মাঝের দিকের এই মন্তব্যের বিষয়ে ‘‘কড়া প্রতিবাদ’’ জানিয়েছিল ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। ঢাকার কাছে এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানানো হয়েছে বলে গত ২০ ডিসেম্বর ভারতের পরররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানান।
 
দিল্লিতে সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেশী বাংলাদেশের নেতাদের দায়িত্বশীল মন্তব্যের গুরুত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সেদিন রণধীর জয়সওয়াল বলেছিলেন, ‘নয়াদিল্লি সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রকাশ্য মন্তব্য করার সময় দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিতে চায়। আমরা এই বিষয়ে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি। আমরা জেনেছি, উল্লিখিত পোস্টটি ইতোমধ্যে মুছে ফেলা হয়েছে। তবে আমরা সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চাই, জনসমক্ষে মন্তব্য করার সময় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে আরও সতর্ক থাকা উচিত।’
 
দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র এবং সুন্দরবন-সহ বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত অতিক্রমকারী নদীগুলোতে নতুন ভাসমান সীমান্ত চৌকি তৈরি করেছে।
 
তুমুল আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। রাজধানীতে বিক্ষুব্ধ জনতার সহিংসতার আশঙ্কায় সামরিক বিমানে করে ঢাকা ছাড়েন তিনি। পরে বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত নিপীড়নের অভিযোগ করে আসছে ভারত। এ নিয়ে প্রতিবেশী দুদেশের সম্পর্কে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে।
 
গত মাসে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং বলেছিলেন, বাংলাদেশে গত ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর ২ হাজার ২০০টি হামলার ঘটনা ঘটেছে; যা আগের বছরে ছিল ৩০২টি। তবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস উইং এই পরিসংখ্যানকে অতিরঞ্জিত বলে অভিহিত করে বলেছে, গত নভেম্বর পর্যন্ত মাত্র ১৩৮টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।
 
এ বিষয়ে দ্য টেলিগ্রাফকে অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন, ‘শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ায় দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ। এমনকি ভারত সরকার এখন মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হাসিনাকে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। এ কারণেই বাংলাদেশিরা ভারত সরকারের অবস্থানে ক্ষুব্ধ।’
 
যদিও দুদেশের সম্পর্কের উন্নয়নের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল দ্য টেলিগ্রাফকে বলেন, ‘ভারতকে পুতুল শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ভুলে যেতে হবে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জনগণের রায়কে সম্মান জানাতে হবে। জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক পুনর্গঠন এবং সমান মর্যাদা ও অধিকারের ভিত্তিতে বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.