হলুদ ও হালকা সবুজ রঙের লেবুজাতীয় গোলাকার একটি ফল। নাম সাতকরা। সিলেটের বাজারে এখন কদর বেড়েছে ফলটির। কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে বিশেষ এই ফলের চাহিদা বেড়েছে। ফলে বিক্রেতারা দাম বেশি চাচ্ছেন, দাবি ক্রেতাদের।
সিলেট নগরের বন্দরবাজার, রিকাবীবাজার, আম্বরখানাসহ প্রায় সব বাজারেই সাতকরার পসরা।
ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোরবানির মাংস দিয়ে হরেক রকমের রান্না হয়। সিলেটের মানুষের কাছে সাতকরা দিয়ে গরুর মাংস পছন্দের পদ। সাতকরা দিয়ে মাংস রান্না এখন ঐতিহ্য হয়ে গেছে। সাতকরার খোসা দিয়ে রান্না করা হয়, ভেতরের অংশ ফেলে দেওয়া হয়।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সাতকরা বিক্রি হচ্ছে হালি হিসেবে। প্রতি হালি আকার ভেদে ৯০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত চাচ্ছেন বিক্রেতারা। ক্রেতারা দামাদামি করে নিচ্ছেন সাতকরা। কেউ হালি হিসেবে, কেউ ডজন হিসেবে নিয়ে যাচ্ছেন।
আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে নগরের বন্দরবাজার এলাকায় সাতকরা কিনছিলেন শেখঘাট এলাকার বাসিন্দা রাহিম চৌধুরী। তিনি বলেন, রান্নায় বেশি পরিমাণে সাতকরা ব্যবহার করা হয় না। এ জন্য তিনি দুই হালি কিনেছেন। ৯০ টাকা হালি দরে দুই হালি ১৮০ টাকায় কিনেছেন। সপ্তাহখানেক আগেও ৬০ টাকা হালি কিনেছেন। আজ বিক্রেতারা ১০০ টাকা হালি চাচ্ছিলেন, পরে দরদাম করে ৯০ টাকায় কিনেছেন।
বন্দরবাজার এলাকার বিক্রেতা কাদির মিয়া বলেন, জারা লেবু ও সাতকরার ব্যবসা করেন তিনি। আগে সিলেট অঞ্চলে সাতকরা চাষিরা সাতকরা সরবরাহ করলেও এখন সেগুলো পাওয়া যায় না। এখন ভারত থেকে আসে সাতকরা। বস্তায় নিয়ে আসা সাতকরা একেকটিতে ১০০ থেকে ১৫০টির মতো থাকে। সেগুলো পরে বাজারে বিক্রি হয়। পরিবহনসহ বাজারে বিক্রির জন্য তোলা পর্যন্ত খরচ বেশি পড়ায় দামও বেশি রাখতে হচ্ছে।
ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জ্যৈষ্ঠ থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত সাতকরার মৌসুম। এ সময় সিলেটের বাজারে সাতকরা আসে। তবে বছরের অন্য সময়ও সাতকরা পাওয়া যায়। অনেকে সাতকরার খোসা শুকিয়ে রাখে। পরে ভিজিয়ে রান্নায় ব্যবহার করেন। আবার কেউ কেউ আচার তৈরি করে রাখেন, সেগুলো রান্নায় ব্যবহার করেন। মাংস রান্নায় সাতকরা স্বাদে ও গন্ধে ভিন্নতা আনে, যা ভোজনরসিকদের খুব প্রিয়।
নগরের কুয়ারপাড় এলাকার বাসিন্দা ইয়াসমিন বেগম ছেলে নাফিস আহমদকে নিয়ে বন্দরবাজার থেকে সাতকরা কিনছিলেন। কিছুটা বড় আকারের সাতকরা বিক্রেতা হালিপ্রতি ১২০ টাকা করে চাচ্ছিলেন। ইয়াসমিন বেগম বলেন, বর্ষার এই সময়ে বাজারে প্রচুর পরিমাণে সাতকরা পাওয়া যায়। তিনি এখন সাতকরা সংগ্রহ করে কিছুটা শুকিয়ে রাখেন, কিছুটা আচার বানিয়ে রাখেন। পরে সারা বছর রান্নার সময় সেগুলো ব্যবহার করেন।
বিক্রেতারা বলেন, আগে শুধু সিলেট অঞ্চলে সাতকরার চাহিদা থাকলেও এখন পর্যটকেরা সিলেটে এলে সাতকরা কিনে নিয়ে যান। সারা দেশেই এখন সাতকরার চাহিদা আছে। তবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে সাতকড়া যায় সিলেট থেকেই। সামসুল ইসলাম নামের এক বিক্রেতা বলেন, পর্যটকেরা সাতকরা কিনলেও কীভাবে খেতে হয় জানেন না। বিক্রেতাদের রান্নার নিয়ম শিখিয়ে দিতে হয়।