
সিলেটের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম। রাজনৈতিক পরিস্থিতি, উন্নয়ন, পর্যটন, আইনশৃঙ্খলাসহ নানা বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়। এ সময় নেতারা সাদাপাথর লুটপাটে জড়িত ‘প্রকৃত দোষীদের’ শনাক্তের দাবি জানান।
আজ সোমবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক। এতে ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে সিলেটের পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান, জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক সুবর্ণা সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। আজ বেলা সাড়ে তিনটায় শুরু হওয়া বৈঠক শেষ হয় বিকেল সাড়ে পাঁচটায়।
সভায় জেলার কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর লুটে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকায় রাজনৈতিক দলের নেতাদের নাম দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্তের বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ওই নেতাদের দাবি, সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে জেলা ও মহানগর পর্যায়ের কিছু সুপরিচিত রাজনৈতিক নেতার নাম দুদকের প্রতিবেদনে এসেছে।
মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, এক সমাবেশে অংশ নিয়ে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের পক্ষে তিনি মত দিয়েছিলেন। কখনোই লুটপাটকারীদের প্রশ্রয় দেননি। অথচ লুটের তালিকায় তাঁর নাম এসেছে। সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে এখন দুদকেই প্রমাণ দিতে হবে।
মহানগর জামায়াতের আমির ফখরুল ইসলাম বক্তব্যে বলেন, পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর লুটেরা চক্র ধ্বংস করায় দেশ-বিদেশে সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। দুদকের বরাতে তাঁর নাম জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশে ব্যক্তি হিসেবে তিনি অপমানিত হয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে খোঁজ নিয়ে লুটকাণ্ডে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার আহ্বান জানান তিনি।
জেলা জামায়াতের আমির হাবিবুর রহমান বলেন, পাথর লুটের প্রকৃত ঘটনা লুকাতে পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক নেতাদের নাম জড়ানো হয়েছে। তবে কে বা কারা ঘটিয়েছেন, তা পরিষ্কার করতে জেলা প্রশাসকের প্রতি তিনি অনুরোধ জানান।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, পর্যটনকেন্দ্রে দুর্বৃত্তায়নের বিপক্ষে শক্ত অবস্থানে থাকবে বিএনপি।
অন্যদিকে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ছয় লেন প্রকল্পসহ সিলেটের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ধীরগতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহক্ষুদ্র ঋণ ও কুটিরশিল্পবিষয়ক সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সিলেট জেলার প্রধান সমন্বয়কারী নাজিম উদ্দিন, এবি পার্টি সিলেট মহানগরের সমন্বয়ক রেজাউল করিম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিলেট মহানগর শাখার সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম ও জেলার সভাপতি মুফতি সাঈদ আহমদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে গত বছরের ৫ আগস্টপরবর্তী রাজনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি; সিলেটের সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রম; নগরের যানজট সমস্যার সমাধান ও হকার উচ্ছেদের পাশাপাশি পুনর্বাসন; ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ছয় লেন প্রকল্পের অগ্রগতি; শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে জেলার মানোন্নয়ন এবং সিলেটের পর্যটনশিল্পের প্রসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম বলেন, যাবতীয় সমস্যা সমাধান ও বাস্তবায়নে তিনি আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করবেন। এ ছাড়া পাথর–কাণ্ডের সফল সমাধানের পর শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে তিনি কাজ করবেন।