সিরিয়ার সামরিক সদর দপ্তরে ইসরায়েলের হামলা

0
10
ইসরায়েলি হামলার পর সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে সেনাবাহিনী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরের কাছে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যায়। ১৬ জুলাই ২০২৫ছবি: এএফপি

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে অবস্থিত দেশটির সামরিক সদর দপ্তর, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কাছাকাছি স্থানে আজ বুধবার বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এ খবর নিশ্চিত করেছে। হামলা অন্তত একজন নিহত ও ১৮ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সিরিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে আইডিএফ জানিয়েছে, তাদের বাহিনী সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে সরকার নিয়ন্ত্রিত সামরিক সদর দপ্তরের প্রবেশপথে হামলা চালিয়েছে। দক্ষিণ সিরিয়ায় দ্রুজ জনগণের বিরুদ্ধে দেশটির সরকারি বাহিনী যে পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণ করছে ইসরায়েল।

পোস্টে আরও বলা হয়েছে, ইসরায়েলি রাজনৈতিক নেতৃত্বের নির্দেশে সেনাবাহিনী ওই এলাকায় হামলা চালিয়েছে এবং যেকোনো পরিস্থিতির জন্য তারা প্রস্তুত রয়েছে।

দামেস্কে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কাছাকাছি হামলার বিষয়টিও এক্সে নিশ্চিত করেছে আইডিএফ। এতে বলা হয়েছে, সিরিয়ার বর্তমান শাসকের প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের কাছাকাছি এলাকায় সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে।

মিডল ইস্ট আইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ার স্থানীয় টেলিভিশনে প্রচারিত ফুটেজে উমাইয়াদ চত্বরের কাছে বিশাল বিস্ফোরণের ধোঁয়া ও আগুনের শিখা দেখা গেছে।

সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা জানিয়েছে, হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। তবে বিস্তারিত জানা যায়নি।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এক্সে হামলার ভিডিও পোস্ট করে লিখেছেন, ‘তীব্র হামলা শুরু হয়েছে।’

সম্প্রতি সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় সুয়েইদা প্রদেশে দ্রুজ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ চলছে। দ্রুজরা সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তবে প্রেসিডেন্ট বাশারের পতনের পরও তাঁদের উল্লাস করতে দেখা গিয়েছিল।

ইসরায়েল বলছে, দ্রুজ সংখ্যালঘুদের রক্ষা এবং উত্তর সীমান্তের নিরাপত্তা হুমকি প্রতিরোধেই তারা সিরিয়ায় হামলা চালাচ্ছে।

দামেস্কে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছে তুরস্ক। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ১৪ বছরের যুদ্ধের পর সিরিয়ার পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা ইসরায়েল নস্যাৎ করতে চাইছে।

তুরস্কের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সিরিয়ার জনগণের শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস ও বিশ্ব সমাজে একীভূত হওয়ার ঐতিহাসিক সুযোগ তৈরি হয়েছে। সব পক্ষের উচিত সিরিয়ার সরকারের শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে সহায়তা করা।

সিরিয়ার দ্রুজ নাগরিক সালেম আবু জাবেল (ডানে) ইসরায়েল অধিকৃত গোলান মালভূমির মাজদাল শামস গ্রামে পৌঁছালে তাঁকে স্থানীয় দ্রুজ সম্প্রদায়ের সদস্যরা স্বাগত জানান। ১৬ জুলাই ২০২৫
সিরিয়ার দ্রুজ নাগরিক সালেম আবু জাবেল (ডানে) ইসরায়েল অধিকৃত গোলান মালভূমির মাজদাল শামস গ্রামে পৌঁছালে তাঁকে স্থানীয় দ্রুজ সম্প্রদায়ের সদস্যরা স্বাগত জানান। ১৬ জুলাই ২০২৫ছবি: এএফপি

আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ডিসেম্বরে ইসলামপন্থী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতৃত্বে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারের পতন হয়। এর পর থেকে এইচটিএসের প্রধান আহমেদ আল-শারার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। তিনিই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন।

বাশারের পতনের পর থেকে ইসরায়েল দামেস্কসহ সিরিয়ার ৬০০-এর বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। এতে দেশটির সামরিক সক্ষমতা প্রায় ধ্বংস হয়েছে। গোলান মালভূমির জাতিসংঘ-নিয়ন্ত্রিত বাফার জোনে সেনা মোতায়েন করেছে। যেখান থেকে তারা দক্ষিণ সিরিয়ার আরও ভেতরে অভিযান চালিয়েছে। এই অঞ্চল আগে সিরিয়া ও ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে একটি কৌশলগত নিরাপত্তা সীমা হিসেবে চিহ্নিত হতো।

শারার সরকার ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এতে সহায়তা করছে। গত মে মাসে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেছেন শারা।

প্রসঙ্গত, দ্রুজ হলো সিরিয়ায় বসবাসরত একটি ক্ষুদ্র ধর্মীয় গোষ্ঠী। ধর্মবিশ্বাসের দিক থেকে তারা ইসলাম ধর্মের একটি শাখা হিসেবে বিবেচিত। সিরিয়া ছাড়াও লেবানন ও ইসরায়েলে এই ধর্মীয় গোষ্ঠীর লোকদের বসবাস রয়েছে।

বিবিসি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.